একটু একটু করে ভুলছেন সবই? অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল আপনার বিপদ বাড়াচ্ছে অজান্তেই

Aluminum Foil Risks: কিছু গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, অ্যালুমিনিয়াম আলঝাইমার্সের অন্যতম কারণ।

কেউ মাছ বেক করেন, কেউ সবজি ভাজেন, কেউ বা আবার মাংস নরম রাখার চেষ্টা করেন, কেউ বা রুটি নরম রাখতে মুড়ে দেন- এসব কাজে মানুষ নিশ্চিন্তে ব্যবহার করে চলেছে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল। বিগত কয়েক দশক ধরে বিশ্বজুড়ে বহু বাড়িতেই অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ঢালাও ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যে কতটা ক্ষতিকারক তা নিয়েও সমানতালে চলেছে তর্ক, চলেছে সচেতনতা বৃদ্ধির হাজারো কৌশল। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল কি সত্যিই বিপজ্জনক, নাকি একে ঘিরে বিবিধ যা সওয়াল ওঠে তার তেমন ভিত্তিই নেই?

অ্যালুমিনিয়াম মেলে সর্বত্র

বিষয়টির গভীরে যাওয়ার আগে, যে জিনিসটি নিয়ে কথা হচ্ছে তার হাল হকিকত জানা জরুরি। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল। অনেকে কখনও কখনও একে টিন ফয়েল নামেও ডেকে থাকেন। চকচকে অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর একটি কাগজের মতো পাতলা আস্তরণ। অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর বড় চাংড়গুলি থেকে পাতলা একটি আস্তরণ তুলে নেওয়া হয় বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এই আস্তরণ প্রায় ০.২ মিলিমিটার (০.০০৮ ইঞ্চি) পুরু। হ্যাঁ, এতটাই পাতলা হয় এই শক্তপোক্ত ধাতু থেকে উৎপাদিত অংশটি।

তবে শুধু খাবারের ক্ষেত্রেই নয়, রান্নাঘরের পরিধির বাইরেও এর বিস্তৃত ব্যবহার রয়েছে। প্যাকেজিং, নিরোধক বা আস্তরণ এবং পরিবহন সবেতেই অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ব্যবহার লক্ষ্যণীয়।

আরও পড়ুন- অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় বসে ‘ম্যাজিক’ শুরু, যেভাবে তৈরি হল ‘নাটু নাটু’ গান

অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক এই দাবি প্রথমেই হোঁচট খায় অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাপক ও বিবিধ ব্যবহারের প্রসঙ্গে এসে। অ্যালুমিনিয়াম সর্বত্র ব্যবহৃত, অর্থাৎ সমস্যা কেবল ফয়েলই নয়। অ্যালুমিনিয়াম প্রাকৃতিকভাবেই মেলে এবং ভূত্বকের উপর পাওয়া যায় এমন তৃতীয় সর্বাধিক উপাদান হচ্ছে এই অ্যালুমিনিয়াম। প্রাকৃতিক অবস্থায়, এটি সাধারণত অন্যান্য উপাদান যেমন ফসফেট এবং সালফেটের সঙ্গে আবদ্ধ থাকে। তাই ফুড প্যাকেজিং, বেকিং ট্রে এবং প্রসাধনী দ্রব্য ছাড়াও মাটিতে, পানীয় জলে, এবং আমাদের খাদ্যে (প্রাকৃতিকভাবে ফল, সবজি, মাংস, মাছ, শস্য এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যে অ্যালুমিনিয়াম মেলে) অ্যালুমিনিয়াম রয়েইছে।

ফুড অ্যাডিটিভিস, যেমন প্রিজারভেটিভস, খাবারের রং এবং কৃত্রিম থিকনারগুলিতেও অ্যালুমিনিয়াম থাকে এবং কখনও কখনও বাড়িতে রান্না করা খাবারের চেয়ে ঢের বেশি পরিমাণেই থাকে। আমরা যে পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম খাই তা কয়েকটি কারণের উপর নির্ভর করে। খাদ্যের মধ্যে অ্যালুমিনিয়াম কতটা সহজে শোষিত হয়, যে মাটিতে খাদ্য জন্মেছিল সেখানে অ্যালুমিনিয়াম কতটা ছিল, কীভাবে খাবারটি প্যাকেজজাত করা হয়েছিল এবং সংরক্ষণ করা হয়েছিল, তাতে কিছু মেশানো হয়েছিল কিনা, এই সব বিষয়গুলি ঠিক করে অ্যালুমিনিয়াম আমাদের কতটা বিপদের মুখে ফেলছে।

এই ধাতুটি অনেক ওষুধে, বিশেষ করে অ্যান্টাসিডগুলিতে স্বল্প পরিমাণে উপস্থিত থাকে। কিন্তু এই সমস্ত ক্ষেত্রে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, যে অ্যালুমিনিয়াম আমরা গ্রহণ করি তার সামান্য ভগ্নাংশই আসলে শরীর দ্বারা শোষিত হয়। এর বাকি অংশ আমাদের মল বা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর দেহ থেকে বের করে দেয়।

তবে এটা সত্যিই যে অ্যালুমিনিয়াম স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে, তবে তা অবশ্যই উচ্চ মাত্রায় শরীরে গেলে। কিছু গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, অ্যালুমিনিয়াম আলঝাইমার্সের অন্যতম কারণ। অ্যালঝাইমার্স আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে এই অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ ছিল বেশ উচ্চ মাত্রায়। অনেকে আবার মনে করেন, অ্যালুমিনিয়াম ক্যান্সারের সঙ্গেও সংযুক্ত হতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত করে তা প্রমাণ করতে আরও বড় মাপের গবেষণা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন- রান্নার মশলা টিকে থাকবে বছরের পর বছর! শার্ক ট্যাঙ্কে দুই ভাইয়ের যে প্রযুক্তি ঝড় তুলল

কিন্তু ফয়েল কতটা বিপজ্জনক আসলে?

অনেক ধাতুর মতোই অ্যালুমিনিয়ামও আমরা যে পরিমাণ ব্যবহার করি তা কমিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ, তবে সম্পূর্ণরূপে অ্যালুমিনিয়াম বর্জন করা কঠিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলছে, আমাদের দেহে কম মাত্রায় অ্যালুমিনিয়াম থাকা গ্রহণযোগ্য, প্রতি সপ্তাহে শরীরের ওজনের প্রতি কিলোগ্রামে প্রায় ২ মিলিগ্রাম অ্যালুমিনিয়াম কোনও ক্ষতি করে না।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, অন্যান্য আবরণের মতোই রান্নার পাত্রে এবং ফয়েলে থাকা অ্যালুমিনিয়াম আমাদের খাবারে প্রবেশ করতে পারে। কীভাবে? যে তাপমাত্রায় আমরা রান্না করি তাতে কতটা অ্যালুমিনিয়াম নরম হয়ে খাবারে মিশছে, খাবারের অম্লতা এবং অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি, যেমন মশলা এবং নুন অ্যালুমিনিয়ামের মিশ্রণকে ত্বরান্বিত করে। ২০০৬ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফয়েলে প্রস্তুত বেকড রেড মিটে অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ ৮৯ শতাংশ থেকে ৩৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে!

তবে আশ্চর্যজনক ঘটনা হচ্ছে, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও দৃঢ় প্রমাণ নেই যে ফয়েল থেকে অ্যালুমিনিয়াম শরীরে ঢুকে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তবে উচ্চ তাপমাত্রায় ফয়েল দিয়ে রান্না করা এড়িয়ে, খাবারে কম ফয়েল ব্যবহার করে, অ্যালুমিনিয়াম পাত্রের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এবং অ্যাসিডিক খাবারের সঙ্গে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল মেশানোর মতো বিষয় এড়িয়ে চললে শরীরের বিপদ এড়ানো যাবে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত প্রক্রিয়াজাত দ্রব্যের পরিবর্তে বাড়িতে রান্না করা খাবারের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ালে যে পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম গ্রহণ করছি আমরা, তা সহজেই কমানো যায়।

More Articles