জেলে যাওয়ার ভয়েই হার্দিকের দলত্যাগ?

দিল্লির অন্দরে এমনও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, জেলে যাওয়ার ভয়েই হাত ছাড়লেন হার্দিক। কিন্তু এরকম ভাবনার কারণ কী?

গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের মুখে কংগ্রেস শিবিরে সজোর ধাক্কা দিয়েছেন পতিদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক প্যাটেল। বুধবারই কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করেছেন গুজরাতের এই নেতা। ইস্তফার কথা টুইট করে জানিয়েছেন হার্দিক। পতিদার নেতার কংগ্রেস ত্যাগের পরই তাঁর বিজেপি যোগের জল্পনা নয়া মাত্রা পেয়েছে। তাহলে কি এবার পদ্ম শিবিরে সামিল হচ্ছেন হার্দিক? এই জল্পনার মাঝে কেন তিনি হাত ছাড়লেন, তানিয়েও চলছে কাঁটাছেঁড়া। দিল্লির অন্দরে এমনও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, জেলে যাওয়ার ভয়েই হাত ছাড়লেন হার্দিক। কিন্তু এরকম ভাবনার কারণ কী?


পতিদার নেতার এই দলত্যাগের পর প্রত্যাশিতভাবে আক্রমণের পথে নেমেছ গুজরাত কংগ্রেস। রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি জগদীশ ঠাকুর বৃহস্পতিবার হার্দিকের দলত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে, হার্দিকের বিরুদ্ধে যে দেশদ্রোহিতার মামলা চলছে, তার জন্য তাঁকে জেলে যেতে হতে পারে। সেই কারণে দলত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই পতিদার নেতা। হার্দিক দলত্যাগের পর কী করবেন? এই নিয়েও এখন জল্পনা তুঙ্গে। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন।


কে এই হার্দিক


হার্দিক পটেল। ২০১৫ সালে পতিদার সংরক্ষণ আন্দোলনের মুখ। বারবার সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন তিনি। পতিদার আন্দোলনে অশান্তির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন হার্দিক। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে পাতিদার যুবকরা ওবিসি মর্যাদার দাবিতে গুজরাতে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন। তাঁরা চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে সংরক্ষণের দাবি তুলেছিলেন। তাঁরা এই উদ্দেশ্যে পতিদার অনামত আন্দোলন সমিতি (পিএএএস) গঠন করেছিলেন, যার নেতৃত্বে ছিলেন হার্দিক প্যাটেল। এরপর আন্দোলনের জল আদালতেও গড়ায়। সংরক্ষণের দাবিতে পতিদারদের আন্দোলন ছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। স্বাভাবিকভাবে তারা কংগ্রেসের সমর্থন পায়।

 

আরও পড়ুন-‘২৪ এ বিরোধী জোট হবে? ধরাশায়ী কংগ্রেসকে নিয়ে যে প্রশ্নগুলি উঠে আসছে



২০১৭ সালে গুজরাত নির্বাচনের আগে কংগ্রেসকে তারা বাইরে থেকে সমর্থন দেয়। কিন্তু মোদির রাজ্যে কংগ্রেস জিততে পারে না। ২০১৯ সালে আহমেদাবাদে রাহুল গান্ধীর উপস্থিতিতে কংগ্রেসে যোগ দেন হার্দিক। শুরু হয় তাঁর নতুন রাজনৈতিক সফর। হাতের সঙ্গে তিন বছরের মধ্যেই ডিভোর্স। আবার একটা ভোটের আগেই ঘর ভাঙলেন হার্দিক। এবার কী?


বিজেপিতে যোগ?


এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, গত ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে হার্দিকের। এক সপ্তাহের মধ্যেই বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন পতিদার নেতা। জল্পনা বাড়িয়ে কয়েকদিন আগেই টুইটার প্রোফাইল থেকে কংগ্রেসের নাম সরিয়ে ফেলেছিলেন এই পতিদার নেতা।


শুধু টুইটার নয়, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকেও দলের নাম সরিয়ে ফেলেন পতিদার নেতা। এর আগে হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইল ছবিতে হার্দিকের গলায় গেরুয়া উত্তরীয় দেখা গিয়েছিল। কংগ্রেসের প্রতীকের ছবি সরিয়ে গেরুয়া উত্তরীয় গলায় হার্দিকের ছবি সামনে আসতেই তাঁর বিজেপি যোগের জল্পনা ছড়ায়। পদ্ম শিবিরের প্রশংসাও শোনা গিয়েছে হার্দিক প্যাটেলের গলায়। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ''আমাদের এটা মানতেই হবে যে, সম্প্রতি বিজেপি যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, তা দেখে বলা যায় যে, তারা খুব ভালো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে...যদি কংগ্রেস নিজেকে আরও শক্তিশালী করতে চায়, তাহলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টিতে আরও জোর দেওয়া উচিত।''


বিপাকে কংগ্রেস


গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড় ধাক্কা বিরোধী দল কংগ্রেসের। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মধ্যেই কংগ্রেসের অস্বস্তি বাড়িয়ে দল ছাড়লেন হার্দিক প্যাটেল। বুধবার টুইট করে গুজরাত কংগ্রেসের কার্যকারী সভাপতি পদ এবং প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন হার্দিক। আগেই দল ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এবার জল্পনা সত্যি করে ইস্তফাই দিয়ে দিলেন তরুণ পতিদার নেতা।


এদিন টুইট করে নিজের ইস্তফা পত্র পোস্ট করেছেন হার্দিক। কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে লেখা চিঠিতে নিজের ইস্তফা দেওয়ার কারণ বর্ণনা করেছেন হার্দিক। লিখেছেন, “আজ আমি সাহস করে দলীয় পদ এবং প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলাম। আমার বিশ্বাস, আমার সিদ্ধান্তকে আমার প্রত্যেক সঙ্গী এবং গুজরাতের জনতা সমর্থন করবেন। আমি মনে করি আমার এই পদক্ষেপের ফলে আমি ভবিষ্যতে গুজরাতের জন্য ভালো ভাবে কাজ করতে পারব।”


কংগ্রেসকে চাঙ্গা করতে সোনিয়া গান্ধী যখন ফের সক্রিয়, ঠিক তখনই একের পর এক ধাক্কায় অস্বস্তিতে কংগ্রেস। গত সপ্তাহে রাজস্থানের উদয়পুরে তিনদিন ব্যাপী ‘নব সংকল্প চিন্তন শিবির’ চলাকালীনই দল ছাড়েন পাঞ্জাবের প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি সুনীল জাখর। একইভাবে বুধবার ইস্তফা দিলেন গুজরাতের পতিদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক প্যাটেলও। প্রশ্ন উঠছে, হার্দিকের পরবর্তী গন্তব্য কি বিজেপি?


সে যাই হোক, দলছাড়ার তালিকায় এবার কে, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। এরপর কি কেরলের নেতা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কে ভি থমাস?


কংগ্রেস হাইকমান্ডের প্রবল সমালোচনা করেই দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন হার্দিক। বলেছেন, ‘গুজরাত নিয়ে আলোচনা করার চেয়ে দিল্লির নেতারা নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালোবাসেন। আর গুজরাতের প্রদেশ নেতারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন দিল্লির নেতা ঠিক মতো চিকেন স্যান্ডউইচ পাচ্ছেন কি না, তার তদারকিতে। গুজরাত সম্পর্কে কংগ্রেসের কোনও আগ্রহই নেই। কংগ্রেস ছাড়লাম।’ সোনিয়া গান্ধীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন ইস্তফা পত্র। গুজরাত প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন তিনি।


হার্দিকের ইস্তফায় কংগ্রেস অস্বস্তিতে পড়লেও প্রকাশ্যে মানতে নারাজ। বরং দল ছাড়তেই হার্দিকের নামে তারা সমালোচনা করতে শুরু করে দিয়েছে। গুজরাতের নেতা তথা রাজ্যসভার এমপি শক্তিসিং গোহেল বলেন, ‘অনেক বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হার্দিককে। কিন্তু তিনি ঠিকমতো তা পালনই করতে পারেননি। বরং দলের টিকিট বিক্রি করেছেন। তাই তাঁর মতো যুবনেতা দল ছাড়ায় কংগ্রেসে কোনও প্রভাব পড়বে না।’ কংগ্রেস ছেড়ে হার্দিক প্যাটেল এখনও কোনও দলে যোগ দেননি। তবে তাঁর বিজেপিতে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।


কোন ঘাটে হার্দিকের তরী শেযপর্যন্ত নোঙর করবে, তা সময়ই বলবে, তবে একথা বাজি রেখে বলা যায় যায়, কংগ্রেসের ভাগ্যে দুর্দিনের মেঘ কাটার কোনও লক্ষণই নেই।

More Articles