ঘরে ঘরে শিশুদের শরীরেও হানা দিচ্ছে এই ঘাতক ডায়াবেটিস! কীভাবে লক্ষণ চিনবেন

Lean Diabetes Type 2: কীভাবে শনাক্ত করবেন এই রোগ? প্রতিকার কীভাবে?

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ভারত তথা বিশ্বে ডায়াবেটিসের প্রকোপ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বর্তমানে এই অসুখে আক্রান্ত গোটা বিশ্বে প্রায় ৪৩ কোটি মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র (WHO) পরীক্ষানুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে এই পরিসংখ্যান ৫১ কোটিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আজ প্রায় গড়ে ৫ জন মানুষের মধ্যে দু'জন মানুষ ডায়াবেটিস রোগের শিকার। যার মধ্যে একজন কম করে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

সাধারণত অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার কারণে মূলত টাইপ টু ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে এই ডায়াবেটিস বিশ্বের সবচেয়ে প্রচলিত রূপ। যদিও এক্ষেত্রে শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণে আপেক্ষিক হ্রাস ঘটলেও, শরীরের বাকি পুষ্টিগুণ একই থাকে। মানুষের শরীরে মূলত গ্লুকোজ সঠিক পরিচালনার জন্য শরীরে ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি দেখা দিলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং এই কারণে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এই রোগ মূলত আগে বয়োজেষ্ঠদের মধ্যে দেখা যেত। কিন্তু এখন অনেক অল্পবয়সি ছেলে-মেয়ের মধ্যে স্বাভাবিক ওজন হ্রাস বা অস্বাভাবিক পাতলা হওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যে যে কারণে ব্যক্তির শরীরে ডায়াবেটিস রোগের দেখা মেলে, তা যথেষ্টই অস্বাভাবিক একজন কমবয়সি মানুষের জন্য। এই ধরনের ডায়াবেটিসকেই 'লিন ডায়াবেটিস' বলা হয়।

কোনও ব্যক্তির অতিরিক্ত স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন হ্রাসের প্রবণতা দেখলে ধারণা করা যেতে পারে, সেই ব্যক্তি বিশেষ ডায়াবেটিস রোগের শিকার। কিন্তু টাইপ টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই এই ধরনের কোনও লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় না। আক্রান্ত ১০-১৫ শতাংশ মানুষ এমনও আছেন, যাঁদের ওজন তাঁদের উচ্চতা অনুসারে নিখুঁত এবং তাঁরা অন্যান্য রোগহীন মানুষের তুলনায়ও বেশি ফিট কিছু ক্ষেত্রে। সেই কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিসকে অনেক সময়ে 'চর্বিহীন ডায়াবেটিস'-ও বলা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: কাকে বলে টু ফিঙ্গার টেস্ট? ধর্ষণের প্রমাণে কতটা যুক্তিসম্মত এই পরীক্ষা

তবে অনেক সময় শীর্ণরাও চর্বিহীন ডায়াবেটিসের শিকার হতে পারে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, চর্বিহীন ডায়াবেটিস জিনজনিত কারণেও হতে পারে। অর্থাৎ, যাদের পরিবারের সদস্যদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা বংশগতভাবে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া জীবনযাপনের ধরনও এক্ষেত্রে বিশেষেভাবে দায়ী।প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবও চর্বিহীন ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। এমনকী, শিশুরাও লিন ডায়াবেটিসের শিকার হতে পারে।

দু'রকমের ডায়াবেটিসের মধ্যে টাইপ টু ডায়াবেটিস সবচেয়ে ক্ষতিকারক। এবং এই টাইপ টু ডায়াবেটিসের লক্ষণ-শনাক্তকরণও খুব কঠিন।

কিছু উল্লেখযোগ্য লক্ষণ উল্লেখ করা হলো, যার থেকে এই রোগটি শনাক্ত করা সহজ হবে।

ঘন ঘন প্রস্রাব
রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গেলে কিডনি রক্ত ​​থেকে অতিরিক্ত শর্করাকে ফিল্টার করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এর ফলে সেই ব্যক্তির, ঘন ঘন মূত্রত্যাগের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এটি বিশেষত রাতেই হয়ে থাকে।

তৃষ্ণা বৃদ্ধি
ঘন ঘন মূত্রত্যাগের ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে পর্যাপ্ত জলের ঘাটতি হয়। ঘটনাসূত্রে ব্যক্তিটির ডিহাইড্রেশন হয়, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও অতিরিক্ত প্রস্রাব- এই দুইই ক্রমাগত চক্রাকারে হতেই থাকে।

অত্যধিক ক্ষুধা
ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়ই তাদের খাবার থেকে পর্যাপ্ত শক্তি পান না। এবং খাবারের অতিরিক্ত দহণের ফলে তাঁদের বারবার খিদে পায়।

অস্পষ্ট দৃষ্টিশক্তি
রক্তে শর্করার আধিক্য চোখের ক্ষুদ্র রক্তনালিকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলতে পারে, যা থেকে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়। এটি এক বা উভয় চোখেই হতে পারে। আবার রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত থাকলে চোখের লেন্স ফুলে যায় অনেক সময়ে। এর ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে।

কাটা এবং ক্ষত ধীরে ধীরে নিরাময়
রক্তে অতিরিক্ত শর্করার মাত্রাবৃদ্ধির জন্য শরীরের স্নায়ুরাশি এবং রক্তনালিগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা রক্ত ​​সঞ্চালনকে ব্যহত করে। এর ফলে সামান্য ছোট কাটা থেকেও অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে এবং ক্ষতস্থান সারতে সারতে কয়েক সময় লেগে যায়।

শুরুর দিকে এর কোনও লক্ষণই দেখা যায় না। তবে ডাক্তারদের মতে ৩৫ বছর পর, পুরুষ-মহিলা সকলকেই নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত।নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করেলে এই রোগ অনেক তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা যায়। এতে সেই ব্যক্তি প্রথম অবস্থা থেকেই নিজের খাওয়া, ঘুম ও অন্যান্য বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সঠিক ওষুধ খেয়ে নিজের সুগার কন্ট্রোল করতে পারে।

কীভাবে লিন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব

  • একেবারেই মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
  • এই সময়ে বেশি তৈলাক্ত খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকারক।
  • মাদক সেবন একেবারেই উচিত নয়ে, স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও নয় , খারাপ থাকলেও নয়।
  • এই সময়ে ডাক্তাররা বিশেষত চর্বিহীন প্রোটিন গ্রহণ করার কথা বলে।
  • ব্যক্তিকে নিজের প্রতিদিনের খাবারে উচ্চ-ফাইবারযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • প্রতিদিন নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে যোগব্যায়াম করা প্রয়োজন।

তবে এই রোগের জন্য ধূমপান, ঘুমের অভাব, পুষ্টির অভাব ও অলসতা দায়ী। তবে এখনকার দিনে এই রোগে আক্রান্ত হওয়া যত সহজ, রোগ থেকে মুক্তি পাওয়াও যথেষ্ট সহজ। আপনি কেবল আপনার স্মার্টফোনে বিশেষ অ্যাপের দ্বারা আপনার সুগার লেভেলের নিয়মিত পরীক্ষা করতে পারেন। তবে ডাক্তাররা সুপারিশ করেন যে, ডায়াবেটিস রোগীদের বছরে অন্তত দু'বার A1C পরীক্ষা করানো উচিত। এখন যেটা বাড়ি বসেই কেবল স্মার্টফোনের দ্বারাও সম্ভব।

More Articles