মানুষের কাজ খাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স? উত্তরে যা উঠে আসছে...

সারা পৃথিবীতে সাফল্যের শীর্ষে উঠে আসা প্রযুক্তি সংস্থাগুলির মধ্যে নব্বই শতাংশই বিনিয়োগ শুরু করেছে এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জন্যে। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশী সংস্থার দাবি, এতে না-কি তাদের সংস্থার মোট কার্যক্ষমতা বেড়েছে। তাই যদি হয়, তবে তো প্রশ্নটা সরাসরি মানুষের সারভাইভ্যালের বা টিকে থাকার! স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ধীরে ধীরে  কর্মক্ষেত্রে মানুষের জায়গা দখল করবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স? মানুষ কি চাকরি হারাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ফলে? গবেষণা কিন্তু অন্য কথা বলছে।

আর্টিফিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানেই কিন্তু এই নয় যে রোবোট এসে সমস্ত কাজ করে মানুষের জায়গা দখল করে নেবে। কর্মক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণে কী পরিবর্তন  হতে পারে কয়েক বছরের মধ্যে, তা বোঝার জন্যে সবার আগে প্রয়োজন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে জানা।

কায়া ইসমাইলের মতে, অ্যালগোরিদম হল কতগুলি নির্দেশের সমষ্টি, যা ডেটা প্রসেসিং-এ সাহায্য করে। আর্টিফিয়াল ইন্টেলিজেন্স আদতে অ্যালগোরিদমের থেকে কয়েক ধাপ উন্নত একটি পদ্ধতি, যেখানে এআই একাধিক অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে এবং অ্যালগোরিদমগুলি নিজেদের মধ্যে বদল আনতে পারে প্রয়োজন মতো। আর যেহেতু বদল আনতে পারে প্রয়োজন অনুযায়ী, সেখানেই ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিমত্তার প্রশ্ন আসে।

ম্যাসাচ্যুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষকরা খুব সম্প্রতি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং কর্মক্ষেত্রে তার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, মানুষকে খুব সহজে কর্মচ্যুত করতে পারবে না এআই। মানুষ এবং তার কাজকে তার জায়গা থেকে না সরিয়েই এআই উল্টে নতুন জিনিস আবিষ্কারে সাহায্য করবে, একঘেয়ে এবং সময়সাপেক্ষ কাজ মানুষকে দিয়ে না করিয়ে নিজেই করে দেবে সেই কাজ অত্যন্ত অল্প সময়ে। পাশাপাশি ব্যবসাবানিজ্যে আমূল পরিবর্তন এনে, নতুন বানিজ্যের স্থান করে দেবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। ফলে নতুন কর্মসংস্থান বাড়বে, কমবে না।

ফলে বিশেষজ্ঞদের মত সমস্ত রকমের কর্মক্ষেত্রে সব স্তরে, যদি এআই-এর জন্যে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করা যায়, তাহলে দেখা যাবে মানুষ না-কি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সেই প্রশ্ন আর থাকবে না; উল্টে দেখা যাবে একটি উন্নততর ভবিষ্যতের উদ্দ্যেশ্যে মানুষ এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স একসঙ্গে কাজ করছে তখন।

আরও পড়ুন-বাঙালির ইয়েতি অভিযান, সিনেমা নয়, এই গল্পটা সত্যিই…

অন্য দিকে মানুষকে কাজে লাগানো হবে অনেক বেশি সৃজনশীল কাজে, পাশাপাশি গবেষণা এবং বিশ্লেষণমূলক কাজে মানুষের দায়িত্ব বাড়বে অনেক বেশী। কারণ এই সমস্ত কাজ কোনো ভাবেই এআই পারবে না। এর পাশাপাশি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স গড়ে তোলার জন্যেও প্রচুর মানুষের দরকার। জটিল সমস্যার সমাধান করা, বা নতুন কোনো সমস্যার সমাধান খুঁজে বার করার জন্যে ঘুরেফিরে প্রয়োজন পড়বে মানুষেরই। রোবোট কিংবা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পক্ষে সম্ভবই না নতুন কিছু অবিষ্কার। কারণ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিজে থেকে ভাবতে পারে না। তার বোধশক্তি, চেতনা, বিবেক কোনো কিছুই নেই। তাকে যেভাবে শেখানো হয়, সে সেই ভাবেই কাজ করে। বাঁধাধরা ছকের বাইরে ভাবা বা কাজ করা, তার জন্যে নয়। এ কাজ একান্তই মানুষের। আর যে মানুষ তৈরি করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে, সেই মানুষটির চিন্তা-ভাবনার ছাপ, এমনকী পক্ষপাতিত্বের ছাপও গিয়ে পড়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কাজে।

দেখা যাচ্ছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পক্ষপাতদুষ্টতা কখনও নিশানা করছে কোনো বিশেষ লিঙ্গের মানুষকে, কখনও কোনো বিশেষ ধর্মের মানুষকে, বাদ যাচ্ছে না বর্ণভেদও।

তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিপুল পরিবর্তন এনেছে চিকিৎসা, অটোমোবাইল শিল্পক্ষেত্র এবং ই-কমার্সে।  সাইবার সিকিউরিটি, এমনকী চাকরিক্ষেত্রে নিয়োগের সময়েও একে ব্যবহার করার চল দেখা যাচ্ছে।

যেখানে কয়েক হাজার চাকরির দরখাস্ত থেকে কয়েকজন যোগ্য প্রার্থীকে বাচতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগে যায়, সেখানে এআই-এর সাহায্যে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সেই কাজ করা সম্ভব। অথবা দেখা গেল কোনো ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট চাকরির জন্যে দরখাস্ত করতে গেলে, তাকে এআই-ই ওই ব্যক্তির সিভি বা রেজ্যু়মে পরীক্ষা করে জানিয়ে দেয় সে এই চাকরির জন্যে যথোপোযুক্ত কিনা। অথবা দেখা গেল, আপনি নিজের চাকরিক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা বাড়াতে চান বা আপনার পছন্দের কোনও চাকরির জন্যে নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে চান, সে ক্ষেত্রে আপনার বর্তমান সিভি বা রেজ্যু়মে পরীক্ষা করে এআই আপনাকে জানিয়ে দিলো কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার উন্নতির দরকার আপনার সেই পছন্দের চাকরি পাওয়ার জন্যে।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে, চাকরির ক্ষেত্রে প্রার্থী নির্বাচনের সময়, বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যদি সেই কাজে এআই হস্তক্ষেপ করে। কারণ সেখানেও এআই তার পক্ষপাতিত্ব দেখাচ্ছে। এখানে হায়ারভিউ নামের একটি নিয়োগ সংস্থার উদাহরণ দেওয়া যাক, যে সংস্থার কাজ চাকরিক্ষেত্রে কর্মী নিয়োগে সাহায্য করা।

এই সংস্থার ব্যবহৃত একটি এআই চাকরিপ্রার্থীদের সিভি এবং মুখ চিনে তাঁদের মনস্তত্ব বিশ্লেষণ করে এবং পাশাপাশি তার মাধ্যমে  যাচাই করে সেই প্রার্থী ভবিষ্যতে কত ভালো কাজ করতে পারবে। পরবর্তীতে ফেডেরাল ট্রেড কমিশন অভিযোগ জানায়, এই পদ্ধতিতে এআই নিজের পক্ষপাতিত্বের পরিচয় দিচ্ছে বহু ক্ষেত্রেই, এবং বহু যোগ্য প্রার্থী এআই-এর পক্ষপাতদুষ্টতার জন্যে চাকরি পাচ্ছেন না। অবশেষে হায়ারভিউ এখানে এআই-কে সরিয়ে পুরোনো পদ্ধতিতেই আবার নির্বাচন শুরু করে চাকরীপ্রার্থীদের।

তাহলে অবশেষে কী দাঁড়াল এআই কি মানুষকে কর্মচ্যুত করবে? উত্তর: না, এত সোজা না। পিকচার আভি বাকি হ্যায়।

 

More Articles