বিমান আবিষ্কারের আগে জন্ম, সব স্মৃতি এখনও সজাগ, বিশ্বের বিস্ময় ১১৯ বছরের এই 'তরুণী'

'ঠাকুমার ঝুলি এবার খুলবে,শোনো শোনো ঠাকুমা গল্প বলবে'-- জনপ্রিয় ধারাবাহিকের এই গান শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক বয়স্ক মহিলা আর সামনে ভিড় করে বসে থাকা উৎসুক বাচ্চার দল। বাচ্চা থেকে বুড়ো আমরা সকলেই গল্প শুনতে কে না ভালোবাসে! সত্যি যদি হরেক রকমের অভিজ্ঞতার কথা কেউ গল্পের মত করে  বলতো আর গল্পের বিষয়বস্তু যদি হতো রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের উড়োজাহাজ আবিষ্কারের কথা কিংবা পৃথিবীর বুকে ঘটে যাওয়া দুই বিশ্বযুদ্ধের কথা, তাহলে বোধহয় গোগ্রাসে গিলতাম সেসব কথা। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি কি আজও বেঁচে আছেন? শুনতে অবাক মনে হলেও সত্যিই আছেন। কিন্তু কে সে? থাকেনই বা কোথায়? শুনুন তবে বিশ্বের প্রবীণতম নারীর বর্ণময় জীবনের কথা।

তানাকার জীবন

নাম কেন তানাকা। ১৯০৩ সালে জাপানে জন্মেছেন তানাকা। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি  ১১৯ বছরে পা দিয়েছেন তিনি। জাপানের এক নার্সিংহোমেই এই বছরের জন্মদিন পালন করেছেন তানাকা। কেকও কেটেছেন।  তবে এখানেই শেষ করতে নারাজ বৃদ্ধা। তাঁর ইচ্ছা ১২০ বছরের জন্মদিনও যেন পালন করতে পারেন তিনি।  জাপান-সহ বিশ্ববাসী টুইটারে তাঁকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। বৃদ্ধার প্রপৌত্রী জুনকো তানাকা টুইট করে লিখেছেন, "তুমুল ব্যাপার। ১১৯ বছরে পৌঁছেছেন তানাকা। আমি আশা করি আপনার ভবিষ্যৎ জীবনও আনন্দের সাথেই কাটবে'। বর্তমানে জাপানের দক্ষিণ পশ্চিমে ফুফুওকা প্রদেশের নিবাসী এই নারী। ১১৬ বছর বয়সে গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকেও বিশ্বের প্রবীণতম জীবিত নারী হিসেবে নাম ওঠে তানাকার। এই মুহূর্তে তিনিই বিশ্বের প্রবীণতম জীবিত মানুষও বটে।

নয় ভাইবোনের সংসারে সপ্তম সন্তান হিসেবে জন্ম হয় তাঁর। ১৯২২ সালে ১৯ বছর বয়সে হাইদিও নামে এক চাল বিক্রেতার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তানাকা। তাঁদের চার সন্তানও রয়েছে। পঞ্চম এক সন্তানকে দত্তকও  নিয়েছিলেন তাঁরা। ১০৩ বছর বয়স পর্যন্ত স্বামীর চালের দোকানে কাজও করেছেন তানাকা।বেশ কিছু দিন আগে পর্যন্ত সকাল ছ'টায় উঠে পড়তেন এই বৃদ্ধা।

ইতিহাসের সাক্ষী

 দীর্ঘ এই জীবনে তানাকা বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন। দুটি বিশ্বযুদ্ধ, দুটি মহামারী। ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লুয়ের সময়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তানাকা। ৪৯ টি শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্স এর সাক্ষী এই বৃদ্ধা। রুশ- জাপানি যুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র এক। জাপানের পাঁচটি রাজার রাজত্বকালের সাক্ষী এই নারী। জাপান টাইমস ট্যুইটারে জানিয়েছেন, ১৯৩৭ সালে দ্বিতীয় চিন - জাপানি যুদ্ধের সময় তাঁর স্বামী ও বড়ছেলে যুদ্ধ করতে গেলে তিনি নুডলস বিক্রি করে সংসার চালিয়েছেন। ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জর্জ অরওয়েলের জন্মের ছয় মাস আগেই জন্মেছেন তানাকা। এক ট্যুইটার ব্যবহারকারী জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে ঠাট্টা করে লিখেছেন, 'আমাদের মধ্যে জীবিত একমাত্র ব্যক্তি যিনি বিমান ওড়ার আগেই জন্মগ্রহণ করেছেন। শুভ জন্মদিন ...'।

শুনলে অবাক হবেন

  •  প্রতিদিন বিকেলে রুটিন করে নম্বর পাজল ও গণিত অধ্যয়ন করেন তানাকা।
  • . স্থগিত ২০২০ টোকিও গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আগে অলিম্পিক মশাল বহন করার কথাও ছিল তাঁর।
  • শতায়ু পেরিয়ে গেলেও সফট ড্রিংকসের প্রতি তাঁর ভালোবাসা আজও অব্যাহত। জুনকো  জানিয়েছেন, চকলেট খেতেও ভালবাসেন তানাকা। এক কোক কোম্পানি তাঁর জন্মদিনে  নাম লেখা পানীয়ের বোতল পাঠিয়ে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।
  • কেন তানাকা বোর্ড গেম খেলে সময় কাটাতে  খুব ভালোবাসেন।এটিই তাঁর সবথেকে প্রিয় বিনোদনের মাধ্যম। 
  • তানাকা নিজে জানিয়েছেন, তাঁর পরিবার, ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বিশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম, ইতিবাচক মনোভাব, ভালো খাবার এবং গণিতের অধ্যয়নই তাঁর দীর্ঘ জীবনের চাবিকাঠি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগে জাপানের চিও মিয়াকো ছিলেন বিশ্বের জীবিত প্রবীণতম মানুষ।২০১৮ সালের জুলাই মাসে ১১৭ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি।তবে যারা বলেন, জীবন দীর্ঘ নয় বড় হওয়া উচিত ; তাঁদের কথাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন তানাকার জীবনশক্তি ও জীবনের প্রতি তাঁর ভালবাসা। তাঁর জীবন অনুপ্রেরণা সকলের কাছে।

More Articles