অপারেশন সিঁদুরে শহিদ ভারতের ৫ সেনা! পাকিস্তানি হামলা যেভাবে নস্যাৎ করেছে সেনাবাহিনী

Operation Sindoor Army Death: অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কোনও বিমান ওই দেশে ধরাশায়ী হয়েছে কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চায়নি সেনা।

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে শুরু হওয়া 'অপারেশন সিঁদুর'-এ এখনও অবধি ৫ জন ভারতীয় সেনার প্রাণ গিয়েছে। রবিবার সাংবাদিকদের উদ্দেশে সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, গত ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ রেখায় কামান এবং গুলিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জন সৈন্য নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার প্রত্যাঘাতে ৭ মে ভোরে পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয় ভারত। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ' অপারেশন সিঁদুর'। পরবর্তী সমস্ত পাকিস্তানি পাল্টা আক্রমণও সামলানো হয়েছে 'অপারেশন সিঁদুর'-এর অধীনেই। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান ফের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে। সেনাবাহিনী এই হামলার জবাবে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছে যে, এভাবে যদি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করা হয়, তাহলে 'কঠোর জবাব' দেওয়া হবে।

ভারতীয় সেনা বারেবারে জানিয়েছে, 'অপারেশন সিঁদুর' শুধুমাত্র সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করেই চালানো হয়েছিল। এরপর ড্রোন এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানি হামলার এক ঢেউ শুরু হয়। ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, ইসলামাবাদের আগ্রাসনের 'যোগ্য জবাব' দিয়েছে ভারত। ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর পাকিস্তানি চেষ্টা নস্যাৎ করেছে ভারতের সেনা। যুদ্ধবিরতি চুক্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গুলি চালিয়ে এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে ড্রোন পাঠিয়ে যে হামলার চেষ্টা করেছে, ভারতীয় সেনা এমন উস্কানির "কঠোর এবং শাস্তিমূলক" জবাব দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

আরও পড়ুন-আইএমএফ ঋণের অপব্যবহার: ঋণ নয়, রাষ্ট্রের ছদ্মবেশী যুদ্ধ তহবিল

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি পাকিস্তানি বিমান নামিয়ে এনেছে ভারতের সেনা। তবে অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কোনও বিমান ওই দেশে ধরাশায়ী হয়েছে কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চায়নি সেনা। লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই, এয়ার মার্শাল এ.কে. ভারতী, ভাইস অ্যাডমিরাল এ.এন. প্রমোদ এবং মেজর জেনারেল এস.এস. শারদা কেবল জানিয়েছেন, এই অভিযানের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাঁচজন সদস্যের প্রাণ গেছে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই আরও জানান, ১৯৯৯ সালের আইসি ৮১৪ হাইজ্যাক এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসী সহ ১০০ জনেরও বেশি সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে। যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ইউসুফ আজহার, আব্দুল মালিক রাল এবং মুদাসির আহমেদও ছিল।

ভাইস অ্যাডমিরাল প্রমোদ বলেছেন, নৌবাহিনী পহেলগাঁওয়ের পর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে বাহিনী, সাবমেরিন এবং নজরদারি চালানোর সমস্ত বন্দোবস্তই করে রেখেছে। প্রত্যাঘাতের এক পর্যায়ে করাচি সহ সমুদ্র এবং স্থলে নির্বাচিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জায়গাতেও ছিল ভারতের নৌবাহিনী। তিনি জনিয়েছেন, নৌবাহিনীর উপস্থিতি পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা করেছে। তাঁর দাবি, গত শনিবার হটলাইনে ফোন করে পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের মহাপরিচালক এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। শনিবার বিকেলে দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। বিকেল ৫ টা থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

আরও পড়ুন-সন্ত্রাসের সুতো আইএসআই-এর হাতে! পাক জঙ্গিদের কীভাবে মদত জোগায় গুপ্তচর সংস্থা?

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই বলেছেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকেই নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ড্রোন অনুপ্রবেশ এবং নতুন করে গুলি চালানোর মতো যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এবং যা রবিবার ভোর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। যার ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী ভারতীয় সেনা কমান্ডারদের পাকিস্তানের এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পূর্ণ কর্তৃত্ব দিয়েছেন।

উত্তরে জানিয়েছেন, “তাদের বিমানগুলিকে আমাদের সীমান্তের ভেতরে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাই আমাদের কাছে ধ্বংসাবশেষ নেই।” পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সামরিক সংঘর্ষে কত সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে ভারতের, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, “আমরা একটি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আছি এবং ক্ষতি যুদ্ধের অংশ”। তবে ক্ষতর কোনও বিবরণ প্রকাশ করতে চায়নি সেনা কারণ তাতে পাকিস্তানের জন্য সুবিধা হবে।

ইসলামাবাদ দাবি করেছিল এক বা একাধিক ভারতীয় রাফায়েল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পড়শি দেশ। এয়ার মার্শাল ভারতী জানিয়েছেন, “আমাদের সমস্ত পাইলট দেশে ফিরে এসেছেন”। অপারেশন সিঁদুরের সময় বিমান বাহিনীর অভিযান সম্পর্কেও এয়ার মার্শাল ভারতী বলেছেন, সমান্তরাল ক্ষতি এড়াতে লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে বায়ু থেকে মাটিতে লক্ষ্য করে পাঠানো যুদ্ধাস্ত্রই ব্যবহার করা হয়েছিল। পাকিস্তানি ড্রোন অনুপ্রবেশ বিষয়ে ভারতী জানান, ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেসামরিক এবং সামরিক কাঠামোগুলির উপর একাধিক মনুষ্যবিহীন বিমানবাহী যানের হামলা প্রতিহত কয়েছে। কিছু ড্রোন অবতরণ করতে সক্ষম হলেও তারা খুব বেশি ক্ষতি করেনি।

More Articles