Air India crash report: দুটি ইঞ্জিন-ই বন্ধ! এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে উঠে এল যে তথ্য

Air India crash report: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানের ইঞ্জিন-১ এবং ইঞ্জিন-২ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার ঘটনাটি দুই পাইলটের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল।

আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ১২ জুন আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড়ানের তিন সেকেন্ড পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমাননের দুটি ইঞ্জিনের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমানটি বিমানবন্দরের প্রাচীর অতিক্রম করার আগেই তার ইঞ্জিনের পাখার গতি কমে যায় এবং বিমানটি নিচে নামতে শুরু করে। পাইলটরা পরিস্থিতি জোরালো বুঝতে পেরে উড়ানের ২৬ সেকেন্ডর মধ্যেই মে ডে-এর কল দিয়েছিলেন। তার ছয় সেকেন্ডের মধ্যেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

শনিবার বিমান দুর্ঘটনা তদন্তকারী সংস্থা এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB) এআই-১৭১ বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে পনেরো পাতার প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানের ইঞ্জিন-১ এবং ইঞ্জিন-২ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার ঘটনাটি দুই পাইলটের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল। বিমানটির ককপিটে পাইলটদের কথোপকথনের রেকর্ডে শোনা গিয়েছে একজন পাইলট অন্যজনকে জিজ্ঞাসা করছেন, তিনি কেন জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করলেন? অন্য পাইলট উত্তর দেন তিনি বন্ধ করেননি। ফলস্বরূপ, ইঞ্জিনের পাখনার (N1 এবং N2) গতি কমতে শুরু করে। তবে কোন পাইলট কাকে এই প্রশ্ন করেছেন এবং কে উত্তর দিয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুন- এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনা! এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বড় বিমা নিষ্পত্তির সম্ভাবনা?

এএআইবি-র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিমানটি রানওয়ে ছাড়ার পর ১৮০ নটস গতিতে পৌঁছে গিয়েছিল এবং এর এক সেকেন্ডের মধ্যে দুটি ইঞ্জিনেরই ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ 'রান থেকে কাট অফ' পজিশনে চলে যায়। আন্তর্জাতিক সময়ানুযায়ী ৮টা ৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডে ১ নম্বর ইঞ্জিন-এর ফুয়েল কাট অফ সুইচ আবার 'রান' (চালু) অবস্থায় ফিরে আসে এবং এর ৪ সেকেন্ড পর দুই নম্বর ইঞ্জিনের ফুয়েল কাটঅফ সুইচও 'কাট অফ থেকে রান' অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু ৮টা ৯ মিনিট ৫ সেকেন্ডে অর্থাৎ নয় সেকেন্ডের ব্যবধানে একজন পাইলট গ্রাউন্ডে থাকা এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের 'মে ডে'-এর কল দিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, 'মে ডে' একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত বিপদ সংকেত। এই দিন পাইলটরা তিন বার এই কল দিয়ে বোঝান যে বিমানটি মারাত্মক সংকটে পড়েছে ও তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। কিন্তু এরপর এটিসির সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা আগেই বলেছিলেন, বিমানটির ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে জ্বালানি দূষণ। তাঁরা এও বলেছিলেন যে জ্বালানি জমাট বেধে যাওয়ার কারণেও ইঞ্জিনের সমস্যা হতে পারে। এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো-র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানগুলির জন্য যেখান থেকে জ্বালানি নেওয়া হয় তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে 'সন্তোষজনক' রিপোর্ট পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন-বিশ্বজুড়ে যেভাবে ফাঁদ পেতেছে বোয়িং-এয়ারবাস

ভেঙে পড়া এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১-এর ক্রু ও দুই পাইলটরা বিমান পরিচালনায় সক্ষম ছিলেন কি-না সেটিরও তদন্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুজন পাইলটই বিমান উড়ানের আগে বিশ্রামের যথাযথ সময় পেয়েছিলেন। সকাল ৬ টা ২৫ মিনিটে ক্রু ও পাইলটদের শ্বাসনালীর পরীক্ষাও হয়েছিল। সব পরীক্ষার রিপোর্টই স্বাভাবিক ছিল বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রক ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন বা ডিজিসিএ-র তথ্য অনুযায়ী, বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল একজন এলটিসি ছিলেন, যাঁরা পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেন। সুমিত সাভারওয়ালের ৮২০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। কো-পাইলটের ১১০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতাও ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র কোনো আপৎকালীন পরিস্থিতিতেই সুইচ বন্ধ করেন পাইলটেরা। রয়টার্স-কে মার্কিন বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ব্রিকহাউস বলেছেন, ‘‘পাইলটেরা সুইচ অফ করবেন না। যদি পাইলটরা করেও থাকেন, তাহলে প্রশ্ন উঠবে কেন সুইচ অফ করতে হল?’’

উল্লেখ্য, গত ১২ই জুন এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী ফ্লাইট এআই-১৭১ বিমান দুর্ঘটনায় ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু-সহ প্রায় সকলেই প্রাণ হারিয়েছেন। তবে, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বেঁচে গিয়েছেন ৪০ বছর বয়সি ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাসকুমার রমেশ। বিমানটি একটি ঘনবসতি এলাকায় ভেঙে পড়েছিল। দুর্ঘটনার পরদিন থেকেই ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় তদন্ত শুরু করেছিল। ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও তদন্তকারীরা আসেন। আগেই বিমানটির প্রথম ব্ল্যাকবক্স পাওয়া গেলেও দ্বিতীয় ব্ল্যাকবক্সটি পাওয়া যায় ১৬ জুন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল বলে জানানো হলেও ঠিক কোন জায়গায় দ্বিতীয় ব্ল্যাকবাক্সটি পাওয়া গিয়েছে তা জানানো হয়নি। কেন জ্বালানি সুইচ বন্ধ হয়ে গেল? উত্তর এখনও অধরা।

More Articles