৪০০ একর জঙ্গল উড়িয়ে আইটি পার্ক! যে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের অপেক্ষায় তেলঙ্গানা
Hyderabad Environment: বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বলছেন, “উন্নয়নের দোহাই দিয়ে কোনও অজুহাতেই বন্যপ্রাণ, পাখি, সবুজ বনানী সহ প্রকৃতি পরিবেশকে এইভাবে ধ্বংস করা অযৌক্তিক, অমানবিক।”
প্রকৃতির পারদ চড়ছে হুহু করে। আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিয়েছে – এপ্রিল থেকে জুন, দেশের প্রায় সব অঞ্চলে তাপমাত্রা ঊর্ধ্বগতি হবে। বইতে থাকবে গরম লু। দহনকাল শুরু হলো বলে। তীব্র গরম আর তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস করবেন লক্ষ কোটি মানুষ। কর্মদক্ষতা, কাজের সময় কমবে। বাড়বে স্বাস্থ্য সমস্যা। ভুলে গেলে চলবে না, এতদিনের সব রেকর্ড ভেঙেচুরে ২০২৪ সাল পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম বর্ষ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। শুধুমাত্র চরম তাপমাত্রা, তীব্র তাপপ্রবাহ এবং হিটস্ট্রোকে ২০২৪ সালে ভারতবর্ষে ৭৩৩ জন অসহায় গরিব মানুষের প্রাণ গেছে। মার্চ থেকে জুন – এই চার মাসে ভারতের ১৭টি রাজ্যে হিটস্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজার ৭৮৯। গত বছর এপ্রিল ও মে মিলিয়ে দক্ষিণবঙ্গে টানা ২২ দিন তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি ছিল। শুধু এই এক বছরেই নতুন করে সাড়ে পাঁচ কোটি সিওপিডি-র রোগী এসেছেন চিকিৎসকদের কাছে। এই স্বীকৃতি খোদ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। দিল্লি, কলকাতা সহ অনেক শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ৫০০-র বেশি হওয়ার নজিরও আছে। যার অর্থ, এই বাতাসে শ্বাস নেওয়া আসলে দিনে ৩০টি সিগারেট খাওয়ার সমান। সম্প্রতি ভারতে এক পরিবেশ কর্মশালায় যোগ দিতে এসে ‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট রিসার্চ’-এর বিজ্ঞানী বলেছেন, “ভারত সহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্বাস্থ্যের উপরেই মাত্রাছাড়া গরম এবং বায়ুদূষণ ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।”
মেকি উন্নয়ন আর বহুতল, রাস্তা, ব্রিজ তৈরির নির্মাণকাজের দাপটে বাতাসে ভাসমান বিষাক্ত কণার (১০.০ পিএম) পরিমাণ বাড়ছে। বিষাক্ত কণা সেঁধিয়ে যাচ্ছে মানুষের বক্ষস্থলে। হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট সহ ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন লক্ষ কোটি মানুষ। জীবাশ্ম জ্বালানির অপরিমিত ব্যবহার এবং নির্বিচারে জঙ্গল ধ্বংস ও নদী, জলাভূমি বোজানোর পরিণামে ভূউষ্ণায়ন বাড়ছে, বাড়ছে কার্বনের মাত্রা, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ুদূষণ। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রায় ১.৫ ডিগ্রির ঘরে পৌঁছে গেছে। মেরুপ্রদেশ ও হিমালয়ের বরফের চাদর পাতলা হচ্ছে দ্রুত। গঙ্গা সহ বড় নদীর জলস্তর দিন দিন কমছে। জীবন জীবিকা হারিয়ে মৎস্যজীবী, কৃষিজীবী সহ সমাজের এক বড় অংশের প্রান্তিক মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। দিনদিন বাড়ছে ভিটেমাটি হারা, শিকড়চ্যুত পরিবেশ-উদ্বাস্তুর সংখ্যা।
মানবসভ্যতার এইসব জ্বলন্ত সমস্যা, জীবন মরণের প্রশ্নে কোনও রাজনৈতিক দলের কোনও হুঁশ নেই। প্রকৃতি উচ্ছন্নে যায় যাক, মরুক মানুষ, বিলুপ্ত হোক বন্যপ্রাণ, বাড়ুক স্বাস্থ্যসমস্যা, বাড়ুক জলের দূষণ ও সংকট — কুছ পরোয়া নেহি। রাষ্ট্র ও সরকার পণ করেছে, কর্পোরেট বাহিনীর নয়া নয়া বিনিয়োগ ও আরও মুনাফা বৃদ্ধির স্বার্থে চাই উন্নয়ন, আরও উন্নয়ন। উন্নয়নের রথের চাকায় প্রকৃতি পরিবেশ ও মানুষের যাপন পদদলিত হচ্ছে অবলীলায়। তবুও রাষ্ট্রনায়ক ও নেতাবাবুরা কালঘুমে আচ্ছন্ন। ঘুম ভাঙলে হুঙ্কার ছাড়ে – চালাও উন্নয়নের রথ।
আরও পড়ুন- বাসাহারা ময়ূরদের তীব্র কান্না! পরিবেশ শেষ করে তেলঙ্গানায় ৪০০ একর জমিতে বুলডোজার কেন?
তাই কংগ্রেস-জোট শাসিত তেলঙ্গানা রাজ্যের হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সংলগ্ন কাঁছা গাছিবৌলি জঙ্গল নিলামে উঠেছে। অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল নিয়ে ৪০০ একর অঞ্চলে ৩১ মার্চ থেকে ৫০টির বেশি মাটি কাটার যন্ত্র ও বুলডোজার চালিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের কাজ শুরু করে দেয় তেলঙ্গানা সরকার। বিপন্ন প্রজাতির বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ সহ এই জঙ্গল এলাকায় রয়েছে দু'টি অতীব সুন্দর হ্রদ – বাফালো এবং পিকক লেক এবং অসংখ্য জলাভূমি। এই সমস্ত হ্রদ ও জলাভূমি শহরের বর্জ্যজল নিষ্কাশন ও শোষণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি হায়দরাবাদের পশ্চিমাংশের ভৌমজলের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে এদের অবদান অপরিসীম। এই বনভূমিকে ধ্বংস করা মানে শহরের সংবেদনশীল জল বাস্তুতন্ত্রকে বিনষ্ট করা। এই বনভূমিতে রয়েছে ২২০ প্রজাতির পাখি, ৭৩৪ প্রজাতির ফুলের গাছ, ১৫টি প্রজাতির সরীসৃপ, ১০টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং অগুণতি প্রজাপতি, পোকামাকড় সহ মানুষের শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া তথা অনুজীব। রয়েছে নানা প্রজাতির প্রায় ৪০ হাজার দুর্মূল্য গাছ। মনে রাখা দরকার, পৃথিবী শুধু মানুষের একার নয়। বাসযোগ্য পৃথিবীতে সকল প্রাণের সমান অধিকার। মুষ্টিমেয় মানুষের স্বার্থে উন্নয়নের খুড়োর কলের পিছনে ছুটতে ছুটতে সব কিছুকে উচ্ছন্নে পাঠিয়ে সভ্যতা বাঁচবে?
কেন শুরু হয়েছে এই ধ্বংসযজ্ঞ? এখানে নাকি তথ্যপ্রযুক্তি হাব হবে। বরাত কে পাবে? হয়তো আদানি, বা এমনই সংস্থারা। সাধারণ মানুষ কী পাবে? হাজার হাজার প্রবীণ বৃহৎ বৃক্ষের মৃত্যু। শত শত পশু পাখির মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া। সব মিলিয়ে প্রকৃতি ও মানবসভ্যতার চূড়ান্ত অবনমন। বুলডোজারের আওয়াজে পাখিরা কাঁদছে, বন্যপ্রাণ ও উদ্ভিদকুলের অন্তরাত্মা উদ্বিগ্ন। তবুও রাজনৈতিক দলগুলি নির্লিপ্ত নির্বিকার। তাদের কোনও প্রতিবাদ পত্র এখনও হাওয়ায় ভেসে আসেনি। আসলে উন্নয়নের প্রশ্নে, কর্পোরেটের স্বার্থে শাসক, বিরোধী, সব দলের একই সুর। পুঁজির নিজস্ব জগতের সংকট কাটাতে এবং কাল্পনিক পুঁজির এই পাহাড়কে বাস্তবের জমিতে নামিয়ে বিনিয়োগ করে মুনাফা বৃদ্ধির হার বাড়ানোর স্বার্থে সব দায় গিয়ে পড়ছে প্রকৃতি-পরিবেশ ও মানুষের জীবন যাপনের ওপর। এছাড়া সংকটগ্রস্ত মুমূর্ষ পুঁজির আর বাঁচার উপায় নেই। মিডিয়ার প্রচারে গড়ে তোলা সর্বশক্তিমান কর্পোরেট বাহিনীর এই দুর্বল গ্রন্থিতেই সজোরে আঘাত হানতে হবে জোটবদ্ধ শক্তির উপর ভর করে। জনগণের সচেতন প্রয়াসকে এই শক্তি ভয় পায় বলেই একতার শক্তিকে দূর্বল করতে বারবার করে আঘাত নেমেছে সংগ্রামী জনগণের উপর।
তবুও হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ও শিক্ষকদের এক বড় অংশ সহ সারা দেশের প্রকৃতি প্রেমিক মানুষরা লড়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ প্রশাসন নির্মম আঘাত হানে। বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী জখম হন। প্রতিবাদকারীদের থানায় আটকে রেখে পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বলছেন, “উন্নয়নের দোহাই দিয়ে কোনও অজুহাতেই বন্যপ্রাণ, পাখি, সবুজ বনানী সহ প্রকৃতি পরিবেশকে এইভাবে ধ্বংস করা অযৌক্তিক, অমানবিক।” দেশের বন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ীও এইভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো যায় না। সমস্ত পরিবেশ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সরকার, প্রশাসন ও কর্পোরেট বাহিনী প্রকৃতি পরিবেশকে লুঠ করে অবাধ গতিতে এগিয়ে চলেছে। পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট ডেকেছিলেন। পড়ুয়া ও শিক্ষকরা প্রকল্পের যৌক্তিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হন। আন্দোলনকারীদের দাবি, বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করে এই বিশেষ অঞ্চলকে ‘ডিমড ফরেস্ট’ তালিকাভুক্ত করা হোক।
অনেক খারাপের মধ্যেও আপাত এক খুশির খবর লড়াকুদের মনোবল চাঙ্গা করেছে। তেলঙ্গানা হাইকোর্ট ২ এপ্রিল রায়, “অসংখ্য পশুপাখি, বৃহৎ বনানী, জীববৈচিত্র্য সম্বলিত ৪০০ একর বনভূমিকে এইভাবে ধ্বংস করা যায় না।” তেলঙ্গানা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কর্পোরেশনকে হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, পরবর্তী শুনানির আগে কোনওরকম ধ্বংসযজ্ঞ বা বনাঞ্চল সাফ করা চলবে না। এই বনাঞ্চলকে ডিমড ফরেস্ট হিসেবে ঘোষণা করার মামলাকারীদের দাবি সম্পর্কে আদালত অনুসন্ধান করবে এবং নিশ্চিত হয়ে রায় দেবে। আদালতে সরকারের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, এই বনভূমি ২০০৪ সালে ‘আইএমজি আকাডেমিক’-কে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কাজ শুরু করতে না পারায় সরকার জমি ফিরিয়ে নেয়। তিনি আরও বলেছেন, “এই জমি, জঙ্গল এলাকা বলে চিহ্নিত নয়।” যুক্তি পেশ করেন, “বনভূমি সংলগ্ন অঞ্চলে রয়েছে অনেক বহুতল বিল্ডিং এবং একটি হেলিপ্যাড।" শহর সংলগ্ন এলাকায় বনভূমি আছে বলেই যে তা নিয়ে যা খুশি করা যায় না, সুস্থ প্রাকৃতিক পরিবেশ পাওয়া যে নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার তা সরকারের তরফে আদালতে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে না। সদর্পে সরকারি আইনজীবী বলছেন, “অসংখ্য সরীসৃপ প্রজাতি, ময়ূর, হরিণ থাকলেই একটি বনাঞ্চল সংরক্ষিত হয়ে যেতে পারে না।”
বিভিন্ন রাজ্যের পরিবেশ-কর্মী, প্রকৃতিপ্রেমীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন। বিভিন্ন সরকারি দফতর ও রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিয়ে এই প্রাণঘাতী প্রকল্প আটকানোর প্রক্রিয়া চলছে। উল্লেখ্য, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশের বেশি পড়ুয়া অন্য রাজ্যের। তাঁরা এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন জঙ্গল ভালোবেসে প্রকৃতিকে রক্ষা করার তাগিদে, হায়দরাবাদের ফুসফুস বলে পরিচিত এই বনভূমিকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে। উন্নয়নের প্রবল বেগে হাঁসদেও অরণ্য, গড়চিরৌলি, দেউচা পাঁচামি, পুরুলিয়ার ঠুগরা, বান্দু সহ দেশের প্রায় সব প্রান্তে প্রকৃতি পরিবেশ ভয়ঙ্করভাবে বিপন্ন হচ্ছে। বিস্তৃর্ণ বনভূমি ও খনিজ সম্পদ দখল করার চক্রান্তে বাস্তার অঞ্চলের আদিবাসীদের ভারত সরকার নির্বিচারে হত্যা করছে মাওবাদী জুজুর কথা প্রচার করে।
আরও পড়ুন- লক্ষ্য ৩০ হাজার কোটি! যে কারণে সাফ হচ্ছে হায়দরাবাদের জঙ্গল
দেশের ১৮টি রাজ্যের দুই শতাধিক জেলায় নিজের দলকে সঙ্গী করে ২ কোটির বেশি গাছ লাগিয়েছেন পিপলবাবা। নির্বিচারে জঙ্গল ধ্বংস প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, “যে দেশ পাহাড়, ঝরনা, জঙ্গলকে আগলে রাখতে পারে না, যে দেশ এইসব কিছুকেই ধ্বংস করতে চায়, যে দেশ বনভূমিকে সম্মান করে না, জঙ্গলের গুরুত্ব বোঝে না,বনভূমি সংরক্ষণ করতে জানে না, সেই দেশের কোনও উন্নতি হবে না। দেশের মানুষের সত্যিকারের কোনও কল্যাণও হবে না।” তিনি আরও বলছেন, “ভুটান, জাপান, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, জার্মানি, ডেনমার্কের মতো দেশগুলি হ্যাপি ইনডেক্স, গ্রোথ ইনডেক্স এবং হেল্থ ইনডেক্সে প্রথম সারিতে আছে কারণ, এই দেশগুলো তাদের নদী, জলাভূমি, জঙ্গল, পাহাড়, সবকিছুকে আগলে রাখে। সংরক্ষণ করে।”
এই প্রসঙ্গে প্রয়াত জ্যোতিরাও ফুলের একটি জীবনদর্শন সামনে আনা যাক। তিনি বলেছিলেন, “মানুষের লেখা ধর্মগ্রন্থের পরিবর্তে প্রকৃতিই ঈশ্বরের প্রকৃত প্রকাশ।” তাঁর মতে, ধর্মীয় গ্রন্থে পাওয়া ব্যাখ্যা এবং নিয়মের চেয়ে ‘ঈশ্বরের সৃষ্টি’ প্রাকৃতিক জগত অনেক বেশি করে মানুষের উপলব্ধির জগতে নাড়া দেয়। কারণ, ধর্মগ্রন্থগুলি মনুষ্য সৃষ্ট এবং তাই মানুষের পক্ষপাত, সীমাবদ্ধতা এবং ব্যাখ্যার দোষে দুষ্ট। কিন্তু প্রাকৃতিক জগত তার নিজস্ব রূপ, রস,গন্ধ, সৌন্দর্য, মাধুর্য বিলিয়ে প্রকৃতির সন্তান মানুষকে প্রাকৃতিক করে। ঈশ্বর সম্পর্কে তাঁর ধারণা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু তাঁর জীবনদর্শনের মধ্য দিয়ে তিনি ধর্মীয় কর্তৃত্বের প্রতি অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসে মানুষকে স্বাধীন অনুসন্ধানে ব্যাপ্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বারবার। নিজের ক্ষুদ্র গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে প্রকৃতিকে অন্বেষণ করার কথা রবীন্দ্রনাথও বলেছেন – “আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া।”
স্পষ্ট বুঝে নেওয়ার সময় এসেছে – চাকরি না থাকা, কর্মসংকোচন, কাজের সময় বৃদ্ধি, লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, স্বাস্থ্যের খরচ জনগণের ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়া, বেহাল শিক্ষা ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, মানবাধিকারের চূড়ান্ত অবমাননা: এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে প্রকৃতির বিনষ্টি, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, জীবন জীবিকা হরণ, ভাষা-সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ শিকড়চ্যুত করা — সব মিলেমিশে আছে। সব সমস্যাগুলিই এক বড় মালায় গ্রন্থিত, যে মালার সুতো ধরা আছে রাষ্ট্র ও কর্পোরেট বাহিনীর হাতে।
তাই পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত হয়ে গেছে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে। পুঁজির সঙ্গে প্রকৃতির দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে সম্মিলিত হতে হবে গরিব মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থেই, আগামী প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থেই। সুস্থ পরিবেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার স্বার্থে পথে নামতেই হবে সম্মিলিত শক্তির ওপর ভরসা করে, সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের ওপর ভর করে। নান্য পন্থা।