মানুষ বন্ধুবান্ধব মিলে মদ্যপান করতে শিখেছে শিম্পাঞ্জিদের থেকেই?
Wild chimpanzees & Alcohol: গবেষণা বলছে, এই যে একসঙ্গে বসে মানুষের খানাপিনা, বনভোজন এর উত্তরাধিকার সম্ভবত শিম্পাঞ্জির থেকেও এসে থাকতে পারে।
একটা বয়সের পর, বন্ধুবান্ধবরা একসঙ্গে বসা মানেই, সেই বসা, সেই আড্ডা নেহাত শুষ্ক আড্ডা নয়। হাজার হাজার বছর ধরেই মানুষ একসঙ্গে মিলে খাওয়াদাওয়া করতে ভালোবাসে। বনভোজনের শিকড়ে যে মানুষের একজোট হয়ে খাওয়ার আদিম গন্ধ মাখানো আছে, সেই দাবি নেহাতই অস্বীকার করা যায় না। শুধু খানা নয়, পিনা-তেও মানুষ জোট বাঁধতে ভালোইবাসে। তবে গবেষণা বলছে, এই যে একসঙ্গে বসে খানাপিনা, এর উত্তরাধিকার সম্ভবত শিম্পাঞ্জির থেকেও এসে থাকতে পারে। গবেষকরা সদ্য দেখেছেন, শিম্পাঞ্জিরাও একসঙ্গে বসে 'মদ' খেতে ভালোইবাসে।
পশ্চিম আফ্রিকায় দেখা গেছে, বন্য শিম্পাঞ্জিরা অ্যালকোহলযুক্ত ফল ভাগাভাগি করে খাচ্ছে। হ্যাঁ সেই ফল খেয়ে বেহেড মাতাল হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয় না ঠিকই তবে, হালকা ঝিমঝিম নেশা যে হয় তা স্পষ্ট। মার্কিন যুক্তরাজ্যের এক্সেটার ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে গবেষকরা গিনি-বিসাউয়ের ক্যান্টানহেজ জাতীয় উদ্যানে কিছু শিম্পাঞ্জিদের ভিডিও করেন। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, শিম্পাঞ্জিরা একসঙ্গে বসে গাঁজানো কাঁঠাল ভাগ করে খাচ্ছে।
আরও পড়ুন-মানুষ আর শিম্পাঞ্জির মিলনের ফল! ১৯২০ সালের যেভাবে তৈরি হয়েছিল হিউম্যানজি!
কর্নওয়ালের এক্সেটারের পেনরিন ক্যাম্পাসের পরিবেশ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের অ্যানা বোল্যান্ড বলছেন, "মানুষের ক্ষেত্রে, আমরা জানি যে অ্যালকোহল খাওয়ার ফলে ডোপামিন এবং এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয় এবং এর ফলে মন ভালো লাগে, বিশ্রামের অনুভূতি হয়। আমরা এও জানি যে একসঙ্গে বসে খাবার এবং মদ খাওয়ার ঐতিহ্যের নেপথ্যে আছে সামাজিক সংযোগ গঠনের চেষ্টা, সামাজিক যোগাযোগ শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এই ধরনের আয়োজন। এখন আমরা দেখছি যে বন্য শিম্পাঞ্জিরা গেঁজে যাওয়া ফল ভাগ করে খাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ওদেরও কি মানুষের মতোই অনুভূতি হচ্ছে?”
মোশন-অ্যাক্টিভেটেড ক্যামেরা ব্যবহার করে, গবেষকরা ১০টি এমন খানাপিনার আয়োজনে শিম্পাঞ্জিদের বড় এবং আঁশযুক্ত গেঁজে যাওয়া ফল ভাগ করে খাওয়ার ছবি তোলেন। ওই ফলে অ্যালকোহল কতখানি আছে তা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সর্বোচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে ০.৬১%।
এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের কিম্বারলি হকিংস বলছেন, "শিম্পাঞ্জিরা কিন্তু সব সময় খাবার ভাগ করে খায় না, তাই এমন গেঁজে যাওয়া ফল বিশেষভাবে খাওয়ার আচরণটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।" অ্যালকোহলের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম ঠিকই, তবে যেহেতু শিম্পাঞ্জিরা প্রতিদিন প্রচুর ফল খায় তাই ঠিকঠাক পরিমাণেই অ্যালকোহল শরীরে যায় তাদের। প্রতিদিন প্রায় এক কেজির উপর এমন ফল তারা খায়। সব মিলিয়ে বিষয়টা খানিক আমাদের হালকা বিয়ারে চুমুক দেওয়ার মতোই।
আরও পড়ুন-ভারতে বাড়ছে মহিলাদের মদ্যপান, তবে কি সমাজ সাক্ষী থাকছে নতুন বদলের?
হকিংস এবং তাঁর সহকর্মীরা পশ্চিম আফ্রিকার শিম্পাঞ্জিরা কীভাবে মানুষের তৈরি পাম স্যাপ অ্যালকোহল চুরি করে খায় সেই উল্লেখও করেছেন। ২০১৫ সালে এই নিয়ে একটি গবেষণাপত্রও প্রকাশ করেছিলেন তাঁরা। এই মদ খেয়ে অনেক শিম্পাঞ্জিই মাতলামিও করেছে, নানা ধরনের বিরক্তিকর আচরণ, অন্যদের ঘুমোতে না দেওয়ার মতো কাজ শিম্পাজিরা করেছে, কিঞ্চিৎ মাতাল হয়ে।
সাম্প্রতিক গবেষণার গবেষকরা অবশ্য বলেছেন, শিম্পাঞ্জিদের গাঁজানো কাঁঠাল খেয়ে 'মাতাল' হওয়ার সম্ভাবনা কমই। তবে ভাগাভাগি করে খাওয়ার বিষয়টি সব বয়স এবং সব লিঙ্গের শিম্পাঞ্জিদের মধ্যেই দেখা যায় বলে মনে করা হচ্ছে। চিপ এবং আটে নামে দু'টি প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী শিম্পাঞ্জিকে দেখা গেছে, বড়সড় কাঁঠাল ফেলে তারা ছোট গাঁজানো টুকরোটিই খাচ্ছে।
মান্ডজাম্বে এবং গ্যারি নামে দুই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ শিম্পাঞ্জিকে বেশ যুদ্ধং দেহি মনোভাব নিয়েই গাঁজানো ফলের কাছে আসতে দেখা গেছে। মান্ডজাম্বে একটি টুকরো নিয়ে আগে খেতে শুরু করে। অন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ শিম্পাঞ্জি ববি গ্যারিকে দূরে সরিয়ে রাখে। পরে অবশ্য সবাই মিলেই ওই ফল খায়।
বন্য শিম্পাঞ্জিদের এমন গাঁজানো ফল ভাগ করে খাওয়া থেকে স্বাভাবিকভাবেই তাই একটি প্রশ্ন জাগে, মানুষের এই সবাই মিলে খানাপিনার আসর বসানোর শিকড়ে কি শিম্পাঞ্জিরাই আছে? হকিংস বলছেন, "শিম্পাঞ্জিরা ইচ্ছাকৃতভাবেই গাঁজানো ফল খোঁজে। তবে সেটি কীভাবে তারা হজম করে সে সম্পর্কে আমাদের আরও গবেষণা করতে হবে, তবে হতেই পারে শিম্পাঞ্জিদের থেকেই মানুষ 'ফিস্ট' করতে শিখেছে। তবে নির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।