বিশ্বজুড়ে থাবা বসাচ্ছে খরা! কোটি কোটি মানুষ খাদ্যসঙ্কটে

Food Scarcity: আগামী দশকের শেষে জলের চাহিদা সরবরাহের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি হবে। পরবর্তী ২৫ বছরে বিশ্বের অর্ধেক খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাই নষ্ট হবে।

বিশ্বজুড়ে খরার কারণে কোটি কোটি মানুষ চূড়ান্ত খাদ্যসংকটে দিন কাটাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সংকট আরও গভীর হচ্ছে। একটি নতুন প্রতিবেদন বলছে, পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকায় নয় কোটির বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটের মুখে। সোমালিয়ায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ ক্ষুধার কবলে। অন্তত দশ লক্ষ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে, ভাত জোটাতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। জিম্বাবোয়েতে গত বছর ভুট্টার ফলন ৭০ শতাংশ কমে গেছে। নয় হাজার গবাদি পশু মারা গেছে অনাহারে।

লাতিন আমেরিকায় খরার কারণে পানামা খালের জলস্তর কমছে। এর ফলে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে বাণিজ্যে শিকেয় উঠেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জাহাজ চলাচল এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। মরক্কোতে টানা ছয় বছর ধরে খরা চলছে। এর ফলে জলের ঘাটতি ৫৭ শতাংশে পৌঁছেছে। স্পেনে বৃষ্টির অভাবে জলপাইয়ের উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এর ফলে অলিভ অয়েলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তুরস্কে চাষবাসের জন্য অতিরিক্ত জল তোলার কারণে ভূগর্ভের জলস্তর নেমে গেছে। দেশটির ৮৮ শতাংশ এলাকা এখন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে।

খরার প্রভাব শুধু কৃষিতেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাতেও আঘাত হেনেছে। থাইল্যান্ড ও ভারতে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে চিনি, চাল এবং কফির উৎপাদন লক্ষ্যণীয় ভাবে কমছে। ২০২৩-২৪ সালে আমেরিকায় চিনির দাম ৯ শতাংশ বেড়েছে। রিপোর্ট বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির ধরন বদলে গেছে। কিছু এলাকায় বৃষ্টি কমে গেছে, আবার কিছু জায়গায় তীব্র বৃষ্টি হচ্ছে। জলেল অপচয় এবং দূষণ এই সংকটকে আরও জটিল করেছে।

আরও পড়ুন- এই মুহূর্তে বিশ্বে অনাহারে ভুগছেন কত মানুষ! পৃথিবী জুড়ে খাদ্য সংকট নিয়ে মিলল বিস্ফোরক তথ্য

গত মার্চ মাসের একটি প্রতিবেদন বলেছে, হিমবাহের বরফ গলার কারণে দুশো কোটি মানুষের খাদ্য ও জলের সরবরাহ বিপন্ন হয়েছে। গত মাসে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা বলেছে, গত ১২০ বছরে খরার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে খরার ক্ষতি ৩৫ শতাংশ বাড়বে। জাতিসংঘের মরুকরণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত সম্মেলনের কার্যনির্বাহী সম্পাদক ইব্রাহিম থিয়াও বলেছেন, খরা একটি নীরব ঘাতক। এটি ধীরে ধীরে সম্পদ শেষ করে জীবন ধ্বংস করে। তিনি আরও বলেন, খরা এখন আর দূরের সমস্যা নয়।

বিজ্ঞানীরা দেখাচ্ছেন, জলের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলের অপব্যবহারের কারণে বিশ্ব সংকটের দ্বারপ্রান্তে। আগামী দশকের শেষে জলের চাহিদা সরবরাহের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি হবে। পরবর্তী ২৫ বছরে বিশ্বের অর্ধেক খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাই নষ্ট হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খরা মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। খরা-সহিষ্ণু ফসল, জল সংরক্ষণ এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। এই সংকট এড়াতে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা এবং দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি।

More Articles