কলকাতার চড়ক সন্ন্যাসী, সঙদের গান ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশদের

Charak Gajan: কলকাতায় সেকালে চড়ক উপলক্ষ্যে বের হতো সন্ন্যাসী এবং সঙের শোভাযাত্রা। ১৯১৩ সাল থেকে নব পরিকল্পনায় জেলেপাড়ার সঙ বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। একসময় এই সঙের গান লিখতেন রূপচাঁদ পক্ষী, গুরুদাস দাস প্রমুখ গীতিকারেরা।

এই কিস্তি যখন প্রকাশিত হবে, ততক্ষণে হুড়হুড় করে ঢুকে পড়েছে একটা নতুন বছর, যার নাম ১৪৩২। সংক্রান্তির গাজনের মেলা, সন্ন্যাসীদের দীর্ঘ সুরেলা ডাক, মেলার বিকিকিনি আর তারপর রাত পোহালেই সুসজ্জিত পয়লা বৈশাখ! কত আশা আর স্বপ্ন। বইপাড়া থেকে অলংকারের বিপণি, মণিহারী দোকান থেকে রেস্টুরেন্ট সবাই যেন নব-আনন্দে জেগে ওঠার তোড়জোড় শুরু করেছে। একটা বছর চলে গেলে নতুন একটা বছরের জন্ম হয়। রোমান দেবতা জানুসকে মনে পড়ে। প্রাচীনকালে কল্পনা করা হয়েছিল, এই দেবী হলেন এক পথ, এক যুগ থেকে অন্য পথ, অন্য যুগে যাওয়ার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। সে কারণে তাঁর দু'টি মুখ। এক মুখ চেয়ে আছে সামনের দিকে, পা এগিয়ে দিয়েছেন ভবিষ্যতের দিকে আর অন্য মুখটি নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে পিছনের দিকে। ফেলে আসা দিনের স্মৃতি আর আলোছায়া, আগামীর অজানা পাড়ি দেবার পথ – স্বপ্নমায়ায় বোনা। এই জানুস দেবতার সঙ্গে মিশে আছে স্মৃতিমেদুরতা আর অচেনা ভবিষ্যতের স্বপ্ন! জানুস-এর সূত্রেই পাশ্চাত্যে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রথম মাসের নাম জানুয়ারি। জানুসকে রোমান কল্পনায় ভাবা হয়েছিল, একইসঙ্গে, শুরু আর সমাপ্তির দেবতা। জানুয়ারি মাসের মতন। তখনও তার শরীরে ফেলে আসা বছরের স্পর্শ আর অন্যদিকে নতুন বছরের প্রতিশ্রুতি। ঘটনার কত স্রোত। কত হাতছানি!

আমি এই পয়লা বৈশাখের আনন্দ উৎসবে একলা হয়ে বসে বসে ভাবি, কত ফেলে আসা পয়লা বৈশাখের কথা। বছর যখন ফুরিয়ে যায়, কিছুদিন হয়তো তার রেশ থাকে, তারপর ফিকে হতে হতে সে মিলিয়ে যায় কোন বিস্মৃতির অতলে। আমার কেন জানি না, কলকাতা শহরের বাসভ্রমণের অভিজ্ঞতার সঙ্গে একটা তুলনা টানতে ইচ্ছে করে। যখন কেউ বাসে উঠবে বলে হাত দেখায়, সেই নতুন যাত্রীর প্রতি যত্ন-আত্তি উপচে পড়ে। ড্রাইভারের, কন্ডাক্টরের, কখনও খালাসি থাকলে তাঁরও। নামার লোকেরা পুরনো বছরের মতো। তাদের নামানোর সময় শুধু তাড়া, শুধু ধাক্কা, শুধু অকরুণ কর্কশ অভিব্যক্তি। পুরনো বছর যেন। কোনওক্রমে তাকে ফেলে আসা, নতুনের নবরবিকিরণ আর নবধারাজলের দিকে উন্মুখ হয়ে তাকানো। তাকে বরণ করে ঘরে তোলা। জীবনে তোলা।

আরও পড়ুন- সাঁ সুসি থিয়েটার এবং আরেকটা কলকাতা

রবীন্দ্রনাথকে এই প্রসঙ্গে মনে না পড়ে থাকা যায় না। ‘বলাকা’ কাব্যগ্রন্থের ৪৫ নং কবিতা এক্ষেত্রে স্মরণীয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, বাঙালি জীবনের প্রায় প্রতিটি মুহূর্ত, উৎসব-পরব আর উদযাপন, বিষাদ বা বিচ্ছেদ – কত না যত্নে ছন্দ-ঝংকারে ভরে তুলেছেন রবীন্দ্রনাথ! এই যে এক বর্ষ সমাপন আর অন্য বছরে পদার্পণ, এর নানা মেটাফর উঠে আসে রবীন্দ্রনাথের গানে আর কবিতায়। বসন্ত থেকে বৈশাখে এই পরিবর্তন, সম্ভোগ থেকে রিক্ততায় এই পরিক্রমা তাঁর আবহমান বিষয়। ‘বলাকা’-র কবিতায় তারই ইশারা –

‘পুরাতন বৎসরের জীর্ণক্লান্তি রাত্রি/ ওই কেটে গেল, ওরে যাত্রী।/ এসেছে নিষ্ঠুর,/ হোক রে দ্বারের বন্ধ দূর,/ হোক রে মদের পাত্র চুর।/ নাই বুঝি, নাই চিনি, নাই তারে জানি, ধরো তার পাণি;/ ধ্বনিয়া উঠুক তব হৃৎস্পন্দনে তার দীপ্ত বাণী। ...’

আবার ‘কল্পনা’ কাব্যগ্রন্থের ‘বর্ষশেষ’ কবিতায় –

‘শান্ত ঝড়ে, ঝিল্লিরবে, ধরণীর স্নিগ্ধ গন্ধোচ্ছাসে/ মুক্ত বাতায়নে/ বৎসরের শেষ গান সাঙ্গ করি দিনু অঞ্জলিয়া/ নিশীথ গগনে।’

এ কবিতার উপশিরোনামে লেখা আছে – ‘১৩০৫ সালে ৩০ শে চৈত্র ঝড়ের দিনে রচিত’।

আজ ১৪৩২ সনে বসে আমি সেই শতাধিক বছর পুরনো ঝড়ের রাত্রি নিয়ে ভাবি। বারংবার মনে হয়, অভাবিত ভবিষ্যতের বজ্রময় যাত্রা আর কাল-কালান্তর জন্ম-জন্মান্তরের গতিময় ধাবন্ত মহাকাশে এই মুহূর্তটুকুই প্রাপ্তি। প্রলয় মেঘে সর্বনাশের কত ইশারা। আগামীর কত অঙ্গীকারও।

এ বছর অবশ্য গাজন আর চড়ক পুজোয় কোনও ঝড় ঝঞ্ঝাকে উৎপাত করতে দেখা যায়নি। গত অনেক বছরে হয়েছিল, হয়তো আগামী বছরে হবে। এমন অনেক স্মৃতি-বিস্মৃতির কথা শোনা যায় আকাশে-বাতাসে। কোনও এক বছর পয়লা বৈশাখে ঘরোয়া এক গানের আসর বসেছিল আমার এক বন্ধুর বাড়ি। তার বাড়ি ছিল পূর্ণ দাস রোডে। সেখানে এক গায়িকার কণ্ঠে শুনেছিলাম, (সম্ভবত তাঁর নাম ছিল ঊর্মি) রবীন্দ্রনাথের একটি গান ‘দাঁড়াও আমার আঁখির আগে’। সেই সন্ধ্যা, সেই বন্ধুদল, সেই হইচই, সেই ছাদের কালবৈশাখী, আজও ভোলা গেল না। ওই গানের আর্তি আর সুর যখনই এখন শুনি, বছর চল্লিশ বিয়াল্লিশ বছর আগের স্মৃতি হঠাৎ লাফ দিয়ে ওঠে। হয়তো গানের সঙ্গে মিশে যায় কত স্মৃতি কত গায়ক-গায়িকার মুখ। সেই মেয়েটির সঙ্গে বছর তিরিশ আগে একবার বোধহয় দেখা হয়েছিল, পথচলতি, রবীন্দ্রসদনের কোনও অনুষ্ঠানে। কিন্তু ওই সন্ধের ‘দাঁড়াও আমার আঁখির আগে’-র সেই অবিস্মরণীয় পঙ্‌ক্তিগুলি – ‘দাঁড়াও যেখানে বিরহী এ হিয়া তোমার লাগিয়া/ একেলা জাগে...’ – এখনও আমার স্মৃতিলোকে চিরজাগ্রত। বেহাগের দীর্ঘায়ত আকুতি আর আবেদন যেন আকাশ-বাতাসে ছড়িয়ে যায়। ওই যে বললাম, একটা পয়লা বৈশাখ থেকে অনেক পয়লা বৈশাখ মাথা তোলে।

আরও পড়ুন- সুরা-মাংস-কবরখানার পথ! যেভাবে বদলে যাচ্ছে পার্কস্ট্রিটের সড়ক বাস্তবতা

কলকাতায় সেকালে চড়ক উপলক্ষ্যে বের হতো সন্ন্যাসী এবং সঙের শোভাযাত্রা। ১৯১৩ সাল থেকে নব পরিকল্পনায় জেলেপাড়ার সঙ বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। একসময় এই সঙের গান লিখতেন রূপচাঁদ পক্ষী, গুরুদাস দাস প্রমুখ গীতিকারেরা। পরবর্তীকালে লিখতেন অমৃতলাল বসু, সজনীকান্ত দাস, পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় – এইসব নামী স্রষ্টারা। সঙের মিছিলে নানারকম সাজপোশাকে রঙ্গব্যঙ্গের হল্লাবাজি ছিল তৎকালে প্রধান মনোরঞ্জন। তার সঙ্গে থাকত নানা ধরনের নাচগানও। সমকালীন রাজনীতি, বিশেষত ব্রিটিশ বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতে সঙের শোভাযাত্রায় বিশেষ গুরুত্ব ছিল। সমাজের নানা ঘটনা, বড় মানুষদের কুকীর্তি, মাতালদের উপদ্রব, বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা, ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে, পুলিশের নানা অমানবিকতা, সাহেব-সুবোদের দৌরাত্ম্য, গুন্ডা বদমাইশদের ক্রিয়াকলাপ, ভূত-প্রেতের উৎপাত – এমন হরেক মজাদার মানুষ এবং সাজপোশাক দেখা যেত সঙের আমোদে। এইসব আমোদে মাঝেমধ্যে যথেষ্ট অস্বস্তিকর হয়ে পড়ত সরকারের চোখে! কেননা সমালোচনার ঝাঁঝ হয়তো রঙ্গরসিকতার তিক্ততা পেরিয়ে ধারালো কামড় বসিয়ে দিত ব্রিটিশ সরকার এবং তার ধামাধরা আমলা পাইক বরকন্দাজ এবং শাসকগোষ্ঠীর গালে। যেমন ধরা যাক,

‘যেন কুঞ্জে আসে না বিলিতি চতুর, বিলিতি বসন দে করে দূর,/ বিলিতি বেলোয়ারি কর্‌ লো চুর,/ পুষো না পুষো না বিলিতি কুকুর/ বিলিতি বাবু রে বাঁধ লো চেনে।।’

ইংরেজ বাবুরা নিজেরাই এসব পড়ে খেপে উঠে চাবুক হাতে নেটিভ পাড়ায় পৌঁছতেন আর এলোপাথাড়ি চাবুক চালাতেন, না কি তাঁদের মোসাহেব আর দিশি চাটুকারেরা তর্জমাসহ অর্থগুলি প্রাঞ্জল করে বুঝিয়ে তাদের ক্ষিপ্ত করে তুলত, সেকথা অবশ্য স্পষ্ট করে কোথাও উল্লেখ করা নেই। তবে এটুকু জানা যাচ্ছে, ১৯২৯ সালে জেলেপাড়ার সঙ শেষবারের মতো পথপরিক্রমায় বেরিয়েছিল। সে সময়ের পুলিশ কর্তৃপক্ষ কড়া ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিল যে, এইসব শোভাযাত্রায় যেসব পালা উপস্থাপিত হবে অথবা যেসব গান গেয়ে এদিক-ওদিক নাচ-হুল্লোড় হবে সেসব আগে থেকে থানায় জমা দিয়ে অনুমোদন নিতে হবে। ফলে, এই সব অপমানকর শর্ত এবং কঠোর নজরদারি স্বতঃস্ফূর্ত ফুর্তি আর মস্করাকে গলা টিপে চিরতরে হত্যা করে দিল। স্বাধীনতার আগে সঙের রঙ্গযাত্রা আর সম্ভবপর হয়নি। বছরের শেষ দিকে নিম্নবর্গের মানুষের এমন বাঁধভাঙা হৈ-হুল্লোড় অবশ্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, ভাষায় এবং অজস্র জনপদে দেখতে পাওয়া যায়। মিখাইল বাখতিন এইসব রঙ্গযাত্রার মধ্যে দেখতে পেতেন উৎক্রম বা সাবভার্সানের নানা প্রবণতা। ‘কার্নিভ্যালেস্ক’-এর এমন অভিনব উপস্থাপন মিখাইল বাখতিনের বিশেষ অবদান। এইসব হৈ-হুল্লোড়, অশালীন ভাষা, অনর্গল চোখা আক্রমণ আর উচ্চকোটির ক্ষমতাবানদের টেনে কাদায় নামানোর স্বপ্ন নিয়েই এমন উৎসব-পরব সার্থক হয়।

আমি হাঁটতে হাঁটতে ক্রিক রো দিয়ে ওয়েলিংটন স্কোয়ারে পোঁছই। কল্পচক্ষে এই বন্ধ হয়ে যাওয়া সঙের শোভাযাত্রা হঠাৎ দেখতে পাই। তবে উনিশ শতক বা বিশ শতকের প্রথমার্ধ নয়, আমি দেখতে পাই সমকালের কলকাতা নিয়ে, তার বাস্তবতা নিয়ে নানা রঙ্গব্যঙ্গের আয়োজন। দেখি, ছুটে আসছে গোরা পুলিশ। লাল পাগড়ি, পায়ে বুট, হাতে লাঠি। সহসা মনে হয়, Creek কথার মানে তো খাল। এই বৌবাজার, হিন্দ সিনেমার কাছে খাল? আরও মনে পড়ে এই রাস্তা এই সঙ সেজে লোকের সঙ্গে আমোদ করার হল্লাবাজির রাস্তা প্রসিদ্ধ ছিল ‘কলকাতার জেলেপাড়া’ হিসেবে। স্বাভাবিক লাগে এই দুইয়ের সম্পর্ক। একটা খাল আর তার পাশে মৎস্যজীবীদের বসতি! পুরনো ম্যাপ এবং কলকাতার ইতিহাস তন্নতন্ন করে খোঁজ মেলে এক অদ্ভুত তথ্যের। সত্যিই ক্রিক রো, ওয়েলিংটন স্কোয়ার, বেন্টিং স্ট্রিট, হেস্টিংস স্ট্রিট হয়ে এক খাল গঙ্গায় গিয়ে পড়ত। চারপাশে জেলেদের বসতি ছিল অনেকখানি জায়গা জুড়ে। পরে আবর্জনায় ভরা খালের সংস্কার হয় এবং রাস্তা বানানো হয় তার ওপর। এখনো তার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে ‘ক্রিক রো’ নামটিতে। ভাগ্যিস!

আরও পড়ুন- জাতপাত ব্যবস্থা থেকে মুক্তির বড় উপায় গাজনের সন্ন্যাসী হয়ে যাওয়া

বর্ষশেষের এই আমোদ-আহ্লাদ আর অন্যদিকে পথ জুড়ে ‘কার্নিভ্যালেস্ক’ সঙের মিছিল যেন সমাপ্তির এক বিপুল বিদ্রোহ। যেন সারা বছরের যত আনুগত্য, যত মাথা নীচু করা আপোস, যত মন জুগিয়ে চলা চাটুকারিতা, বেতনভুক্‌ সম্প্রদায়ের বিনতি, দমবন্ধ করা প্রভুতোষণ – এইসব ব্যক্তিগত আর গোষ্ঠীগত বেদনা, বেদনাজাত ক্রোধ এবং গণরোষ এইসব রঙ্গব্যঙ্গে মূর্ত হয়ে ওঠে। যে কোনও স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, আমরা জানি, হাসিঠাট্টা এবং বিদ্রূপ মস্করা কালে-কালে ক্ষমতার চক্ষুশূল হয়েছে। প্রাচীন যুগ থেকে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত তার বিস্তার। একদিনের ছোট্ট পরিসরে সেই প্রবল ক্রোধ, সেই ঘৃণা, সেই প্রত্যাখ্যান ফুঁসে ওঠে।

সংক্রান্তির চড়কের এই উল্টো গর্জন যেন মহার্ঘ ‘উচ্চ’ অবস্থানের ‘মাথা’-র বিরুদ্ধে কাদামাখা ‘পা’-এর বিদ্রোহ। শুধু ‘পা’-ই বা বলব কেন উদর, যৌনতা, বর্জ্য-পায়ু সবের বিদ্রোহ! সেজন্য ক্ষুধা, কাম, উচ্ছিষ্ট নিয়ে এসব অভিব্যক্তির ইঙ্গিত। উচ্চাবস্থানের ‘ভদ্র’ ‘রুচিশীল’ – শোষণ আর অত্যাচারকে যেন চ্যালেঞ্জ করে ‘কার্নিভ্যালেস্ক’। যথাযথ ‘কালবৈশাখী’।

পয়লা বৈশাখ বরং অনেক স্থিতাবস্থার প্রতীক। যে কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ নয়, নিয়ে আসে বিপুল আশা আর আকাঙ্খা। পুরনো বছরের বিদায়ের পর অনেক প্রতিশ্রুতি আর অজানা ভবিষ্যতকে বুকে নিয়ে দূর থেকে হাতছানি দেয়। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে কৃষিফসলের সূত্রে বছর গণনার এই পদ্ধতি বাংলায় ভিন্ন এক প্রতীক হয়ে উঠেছে। এর গায়ে কোনও ধর্ম সম্প্রদায়ের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। বরং দেখা যাচ্ছে এক জাতিবর্ণ নির্বিশেষে মেলা-পরবের আহ্বান। বাঙালি এবং অন্যান্য জাতির ক্ষেত্রে উৎসব-পার্বণের সঙ্গে কোনও না কোনও ধর্মীয় বা সম্প্রদায়গত চিহ্ন জুড়ে থাকে। সব বাঙালিই নতুন বছরের দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ‘আশা’ এক কুহকিনী! সকলেরই সে মন ভোলায়। জাতি ধর্ম বর্ণ তখন সম্পূর্ণ লোপাট হয়ে যায়। ‘পয়লা বৈশাখ’ সেই মুক্ত, ‘আশাময়’, এক সূত্রপাতের ঘোষণা। কোনও এক পয়লা বৈশাখে বহু বছর আগে গিয়েছিলাম উলুবেড়িয়ায়। মেলায় ঘুরতে আর ঝাঁজি পান্তুয়া খেতে। ‘মধুর’ সেই গল্প আর একদিন হবে। ফেরার পথে ট্রেনে এক অন্ধ গায়ক গাইছিলেন, ‘বারে বারে আর আসা হবে না’।

More Articles