যতীন মেহেতা: সাড়ে সাত হাজার কোটির এক হিরেচোরের গপ্পো
Fugitive Jatin Mehta: যতীন মেহেতা আরব আমিরশাহির যে সমস্ত কোম্পানিগুলোকে ক্রেতা হিসাবে দেখান তাদের কোনও গোডাউন পর্যন্ত নেই। এমনকী যারা সোনা ও হিরে নিয়ে কারবার করে, তাদের অফিসে নিরাপত্তারক্ষীও নেই।
দুর্নীতি ভারত রাষ্ট্রের ভূষণ। প্রজাতন্ত্রের শুরু থেকে একের পর এক অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি (গোবলয়ে ঘোটালা শব্দটি অধিক জনপ্রিয়) সংবাদপত্রের শিরোনাম থেকেছে। দুর্নীতির প্রতি আম-জনতার মনোভাব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। স্বাধীনতার প্রথম দু-দশকে দুর্নীতির প্রশ্নে মানুষ ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল, আজ কিন্তু সমাজজীবনে দুর্নীতির প্রকোপ যেমন বেড়েছে, তেমনই এক ধরনের সামাজিক গ্রাহ্যতাও তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে দুর্নীতির ধরনেরও পরিবর্তন ঘটেছে। প্রথমদিকে দুর্নীতির মধ্যে ছিল কালোবাজারি ও কমিশনরাজ। আমরা যদি আশির দশক পর্যন্ত সংগঠিত দুর্নীতির ইতিহাস লিখতে বসি, তাহলে দেখব এক্ষেত্রে প্রথমে আছে প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত দুর্নীতি। ভারতের বাজেট অনুদানের একটা বড় অংশ যেহেতু বিদেশি কোম্পানির সামরিক অস্ত্র কিনতে ব্যায় হয়, তাই এই কেনাবেচায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়। নেহেরু মন্ত্রিসভার জিপ কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে রাজীব গান্ধির সময়কার বোফর্স কামান, অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময় কারগিল কফিন থেকে মোদিজির আমলে রাফাল বিমান — তালিকা দীর্ঘ ও অন্তহীন।
কিন্তু নব্বইয়ের দশকে খোলা বাজার অর্থনীতি চালু হওয়ার পর থেকে প্রচলিত আইন-কানুনকে দুর্বল করে দেওয়া এবং সংস্কারের দোহাই দিয়ে আর্থিক রক্ষাকবচগুলো তুলে দেওয়ার ফলে এক ধরনের নতুন দুর্নীতি আমাদের নিয়তি হয়ে উঠেছে। অনেকে একে 'Policy induced Corruption' আখ্যা দিচ্ছেন। এই দুর্নীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে টেলিকম কেলেঙ্কারি, টুজি কেলেঙ্কারি, কোলব্লক কেলেঙ্কারি এবং অবশ্যই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে সঞ্চিত জনগণের টাকার লুঠতরাজ। ভারতের প্রত্যেকটি ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় আবার একটা সাধারণ ধরন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে এই উচ্চকোটির ব্যবসায়ীরা ক্ষমতায় আসীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের খুব কাছের লোক। এরা এদের রাজনৈতিক প্রভুদের আশীর্বাদ নিয়ে এবং একশ্রেণির দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের সহায়তায় লক্ষ লক্ষ টাকা লুঠ করছেন। এই লুটেরাদের বেশিরভাগেরই রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তাদের কেলেঙ্কারি জনসমক্ষে আসার সঙ্গে সঙ্গেই এই লুটেরারা তাঁদের মদতদাতাদের সহায়তায় দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। এদের বেশিরভাগকেই এক দশক হয়ে যাওয়া সত্বেও দেশে ফিরিয়ে আনা যায়নি। এই সদলবলে তস্করদের 'ভারত ছাড়ো' অভিযান হয়েছে বর্তমান শাসকদের সময়ে, যাদের প্রধান স্লোগান ছিল 'না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা'। বিজয় মাল্য, ললিত মোদি, মেহুল চোস্কি, নীরব মোদি, যতীন মেহেতা, সঞ্জয় ভাণ্ডারিরা এই গোত্রের সফল উদাহরণ।
এই 'গৌরবময়' তালিকার প্রথম নামটি অবশ্যই গৌতম আদানির নিকটাত্মীয়, গুজরাতি হীরক ব্যবসায়ী যতীন মেহেতার। কীভাবে ব্যবসায়িক ফার্মকে সামনে রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক লুঠ করা যায় এবং তারপর রাতারাতি কোনও ট্যাক্স হেভেনের নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানে বাস করা যায় তার আদর্শ উদাহরণ যতীন মেহেতা। পরবর্তী সময়ে মেহুল চোক্সি ও নীরব মোদির (মামা-ভাগ্নে জুটি) পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ১৪,০০০ কোটি টাকা আত্মসাতের গল্পের ভূমিকা হিসাবে যতীন মেহেতার আখ্যানকে রাখা যেতে পারে।
আরও পড়ুন-বাংলাদেশ তার নীরব মোদি ও বিজয় মাল্য-দের নিয়ে কী করছে?
২০১৩ সালে প্রথম সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়, উইনসোম ডায়মন্ডস এবং ফরএভার প্রিসিয়াস জুয়েলারির মালিক যতীন মেহেতা ভারতের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ৬,৮০০ কোটি টাকা প্রতারণা করেছেন। যদিও যে সমস্ত ব্যাঙ্কের টাকা মারা গেছে তাদের কনসোর্টিয়াম টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়, তার মধ্যেই ২০১৪ সালে যতীন মেহেতা ও তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিরাপদে ভারত ছেড়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট কীটস ও নেভিসে আশ্রয় নেন ও দ্রুত সেই দেশের নাগরিকত্ব পান। পরবর্তী সময়ে সিবিআই, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এই সংস্থার বিরুদ্ধে একাধিক এফআইআর দায়ের করে কিন্তু দেশের মধ্যে যতীন মেহেতার কিছু রিয়েল এস্টেটের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা ছাড়া বিশেষ কিছুই অগ্রগতি হয়নি। এদেশে না হলেও ইংল্যান্ডে একাধিক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে এবং বহু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সেন্ট কিটসের সঙ্গে ভারতের বন্দি প্রত্যর্পন চুক্তি না থাকার কারণে তাদের এদেশে ফেরত আনা এখনও দূর অস্ত।
১৯৮৫ সালে সু-রাজ ডায়মন্ডস (ইন্ডিয়া) লিমিটেড নামে এই কোম্পানির রেজিস্ট্রি হয় যাদের ব্যবসা ছিল হিরে কেটে পালিশ ও তার থেকে অলঙ্কার তৈরি, এছাড়া সোনা ও মূল্যবান রত্ন খচিত অলঙ্কার তৈরি ও রফতানি এদের কাজ ছিল। একইসঙ্গে এরা 'বুলিয়ন' (সোনা ও রুপোর বাট) আমদানি ও স্থানীয় বাজারে বিক্রিরও ব্যবসা করত। উইনসোম নামে পরিবর্তিত হওয়ার পর বিদেশে ব্যবসার জন্য এরা দুটো কোম্পানি খোলে। প্রথমটি ২০০২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে এবং দ্বিতীয়টি বেলজিয়ামে, কোরাডিয়াম এনভি নামে এক কোম্পানি অধিগ্রহণের মধ্যে দিয়ে। দেশের মধ্যে বাজার বৃদ্ধির জন্য ২০০৫ সালে ফরএভার প্রিসিয়াস জুয়েলারির ৪৯% স্টেক কিনে নেয়। কোম্পানির ব্রোশিওর থেকে জানা যায়, তাদের বেঙ্গালুরু, কোচিন, সুরাট, গোয়া ও চেন্নাইতে কারখানা আছে। ২০১৩-১৪ সালে কোম্পানির বার্ষিক বাজেটে ৭,১৩১ কোটি টাকা রাজস্ব দেখানো হয়। এখনও পর্যন্ত গল্পটার মধ্যে কোন সমস্যা না থাকলেও জালিয়াতি শুরু হয় ব্যবসা বিস্তারের নামে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া ও তা খেলাপের মধ্যে দিয়ে।
২০১৬ সালের ১ জুন দ্য মিন্ট পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, এই স্বল্প আলোচিত সংস্থাটি ভারতের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ৬,৮০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। হিসাবটা হলো অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক — ৪৭.৪২ কোটি টাকা, ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া — ৯০.৬১ কোটি টাকা, ব্যাঙ্ক অব মহারাষ্ট্র — ২৯৩.৭৯ কোটি টাকা, কানাড়া ব্যাঙ্ক — ৬৭২.২২ কোটি টাকা, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া — ৭৪৬.৫৯ কোটি টাকা, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক — ৭১.৪৭ কোটি টাকা, আইডিবিআই — ১১৪.৭৯ কোটি টাকা, ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অব কমার্স — ১৬৩.৬০ কোটি টাকা, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক — ১০৫২.১২ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্ক — ৪০৬.১৬ কোটি টাকা, স্টেট ব্যাঙ্ক অব হায়দরাবাদ — ১২৭.৭৭ কোটি টাকা, স্টেট ব্যাঙ্ক অব মরিশাস — ৪৬.৩৩ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া — ২৮০.৩৩ কোটি টাকা এবং বিজয়া ব্যাঙ্ক — ১৪৪.৮২ কোটি টাকা। একইভাবে ফরএভার প্রিসিয়াস ডায়মন্ডস ধার নেয় ২,১২২ কোটি টাকা। এই তালিকা থেকে এটা পরিষ্কার যে কী পরিমাণ 'যোগাযোগ' থাকলে একটা কোম্পানি দেশের প্রায় সমস্ত কোম্পানি থেকে প্রায় একই সময়ে এত কোটি টাকা ঋণ পেতে পারে!
কীভাবে এই জালিয়াতি সংঘটিত হলো তা এবার আমাদের আলোচনায় আসা দরকার। উইনসোম ডায়মন্ডস ও ফরএভার প্রিসিয়াস জুয়েলারি বিদেশ থেকে সোনা, হিরে আমদানি করত, তারপর তার প্রসেস করে অলঙ্কার বানিয়ে পুনরায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ১৩টি কোম্পানির কাছে বিক্রি করত, যাদের সবার মালিক ছিল এক জর্ডান নাগরিক হাতেম সলমন আলি ওবেইদা। এই ব্যবসা করার জন্য ভারতের ব্যাঙ্কগুলো, যেমন পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, কানাড়া ব্যাঙ্ক, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক উইনসোম গ্রুপকে ৪,০০০ কোটি টাকার গ্যারান্টি দেয় (standby letter of credits/SBLC)। এই গ্যারান্টি দেখিয়ে যতীন মেহেতা আন্তর্জাতিক বুলিয়ন ব্যাঙ্ক যেমন স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাঙ্ক লন্ডন, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাঙ্ক অব সাউথ আফ্রিকা, স্কটিও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে সোনা ও হিরে আমদানির জন্য। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে উইনসোম ডায়মন্ডস জানায়, আরব আমিরশাহির ১৩টি কোম্পানি পেমেন্ট না দিতে পারার কারণে তারা ব্যাঙ্কের টাকা শোধ দিতে পারছে না। সঙ্গে সঙ্গে বুলিয়ন ব্যাঙ্কগুলো এসবিএল সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলোর কাছে টাকা দাবি করে। প্রথম পর্বে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলোকে তাদের তহবিল থেকে ৪,৭৬০ কোটি টাকা ঋণ মেটাতে হয়।
আরও পড়ুন-ভারতকে দেখেছিলেন এই কাঁচের মধ্য দিয়েই, দেশ বাঁচাতে পারেনি গান্ধীর চশমাটুকুও!
এই বিপর্যয়ের পর বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলো যতীন মেহেতার বিরুদ্ধে একের পর এক এফআইআর করতে থাকে এবং সিবিআই সহ অর্থনৈতিক অপরাধ তদন্তের বিভিন্ন সংস্থা যেমন ইডি, সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও) তদন্ত শুরু করে। সেই তদন্ত অত্যন্ত ধীর গতিতে চললেও বিভিন্ন খবর বাইরে আসতে থাকে যা প্রমাণ করে ব্যবসায় লোকসান অজুহাত মাত্র, পুরো বিষয়টাই করা হয়েছে ব্যাঙ্কের টাকা জালিয়াতি করে সাইফন প্রক্রিয়ায় অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তথ্যগুলো নিম্নরূপ:
* ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের বোর্ড অব ডিরেক্টরস যথেষ্ট জামানত ও অনুসন্ধান ছাড়াই যতীন মেহেতাকে টাকা দেয়। এমনকী বোর্ডে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিও তাঁর দায়িত্ব পালনে চূড়ান্ত গাফিলতি দেখিয়েছেন।
* ক্রল অ্যাডভাইসারি সলিউশনের অডিট রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ২০১২-১৩ অডিট রিপোর্ট কোম্পানির ডায়মন্ড স্টকের মূল্য ৪৫.১৬ কোটি টাকা যা আবার ২০১৩ সালের মে মাসে হিসাবের কারচুপিতে দেখানো হয়েছে ১৫৩.৪৬ কোটি টাকা। রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, যতীন মেহেতা আরব আমিরশাহির যে সমস্ত কোম্পানিগুলোকে ক্রেতা হিসাবে দেখান তাদের কোনও গোডাউন পর্যন্ত নেই। এমনকী যারা সোনা ও হিরে নিয়ে কারবার করে, তাদের অফিসে নিরাপত্তারক্ষীও নেই। সবচেয়ে বড় কথা, বেশিরভাগ কোম্পানির কোনও অস্তিত্বই নেই। তাই এদের সঙ্গে যতীন মেহেতার ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যবসা করা অসম্ভব, পুরো টাকাই সাইফন করার গল্প।
* এই জর্ডান নাগরিক সলমন আলি ওবেইদা কাগজে কলমে দশটি কোম্পানির ১০০% শেয়ার হোল্ডার, দুটো কোম্পানিতে ৯০% শেয়ার হোল্ডার এবং ১২টি কোম্পানিরই তিনি খোদ ডিরেক্টর।
* একটি কোম্পানি আল আলম জুয়েলারির অন্যতম শেয়ার হোল্ডার বাহামাতে রেজিস্ট্রিকৃত সংস্থা হেরল্ড ইন্টারন্যাশনাল। এই কোম্পানির ২০০৪-০৮ পর্যন্ত ডিরেক্টর হলেন যতীন মেহেতার স্ত্রী সোনিয়া মেহেতা।
* ক্রলের রিপোর্টে আরও দেখা যাচ্ছে আরব আমিরশাহির ঠিকানার কোম্পানিগুলো ভুয়ো ইনভয়েস নিয়ে কাজ করেছে এবং সেখান থেকে ফান্ড ট্রান্সফার হয়েছে উইনসোম গ্রুপের রিয়েল এস্টেট কোম্পানি যেমন সৌম্য কন্সট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড ও সৃষ্টি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডে।
* ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার করা এক এফআইআর থেকে জানা যাচ্ছে, আরব আমিরশাহির ১৩টা কোম্পানির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি যে সলমন আলি ওবেইদার হাতে,তা তাদের কখনও জানানো হয়নি।
* সিবিআইয়ের চার্জশিট থেকে এও জানা যাচ্ছে যে, ব্যাঙ্ক কনসর্টিয়াম, যতীন মেহেতা ও ওবেইদার কোম্পানিগুলোর মধ্যে কখনও পেমেন্ট দেওয়ার বিষয়ে কোনও চুক্তিই স্বাক্ষরিত হয়নি।
* ২০১৯ সালের জুন মাসে জানা যায়, এই সাইফন হওয়া টাকা চিনের কাছে ম্যাকাউ বলে স্বশাসিত অঞ্চলের একটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়েছে।
* এই গোটা ছক ইডির তদন্তেও উঠে আসে। মনে করা হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ১৩টি সংস্থা আদতে যতীন মেহেতার বেনামী শেল কোম্পানি এবং এইগুলো আরেকটি আর্থিক সংস্থা ডকল্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে প্রায় ৭,৫০০ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়ে যায়।
তালিকা দীর্ঘায়িত করে লাভ নেই, শুধু এটা বোঝার যে যতীন মেহেতা ও তাঁর মদতদাতা, সহযোগীরা সবাই মিলে ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে লুঠ করেছেন। এই বিষয়ে বিভিন্ন এজেন্সি নানা ধরনের তদন্তের কথা বললেও বাস্তবে সেই টাকা উদ্ধার করা যায়নি। যতীন মেহেতার যোগাযোগ এতই জোরালো যে তিনি পরিবার সহ এদেশ থেকে পালাতে পেরেছেন। ২০১৮ সালের ১ মার্চ ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, মোদি সরকার যতীন মেহেতার পরিবারকে পালাবার সুযোগ করে দিয়েছেন। এমনকী এও অভিযোগ ওঠে যে নাগরিকত্ব আইনের (১৯৫৫) ৮ ও ২৩ ধারা অনুসারে মেহেতা পরিবারের ভারতের নাগরিকত্ব ত্যাগ অবৈধ কারণ তাঁদের বিরুদ্ধে সিবিআই ও ইডিতে অভিযোগ আছে। মনে করা হয়, একটি বিশেষ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী (পড়ুন আদানি) যতীন মেহেতাকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছে। এখনও পর্যন্ত যতীন মেহেতার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে কোনও রেড কর্নার নোটিশ জারি হয়নি। যদিও বিদেশে পুরোটাই যতীন মেহেতার চিত্রনাট্য মেনে হয়নি। যতীন মেহেতার দুটো কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন ইংল্যান্ডে হওয়ার কারণে স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাঙ্ক সেখানকার আদালতে যতীনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা দায়ের করে। সংবাদে প্রকাশ আদালতের নির্দেশে উইনসোম গ্রুপের বেশ কিছু দেশের মানুষের সম্পত্তি লুঠ করে ভারত ছাড়ার লম্বা লাইনের অগ্রণী চরিত্র হিসাবে আমরা যতীন মেহেতাকে মনে রাখব।