গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনাই, যা উঠে এল তদন্তে

Bangladesh: শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে আসার পর অনেক কল রেকর্ডিংই ভাইরাল হয়েছে। যেগুলির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, গুলি চালানোর নির্দেশ সংক্রান্ত অডিও টেপটি হাসিনার কণ্ঠস্বর বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা! এমনই তথ্য উঠে এল বিবিসি-র তদন্তধর্মী প্রতিবেদনে। এবছর মার্চের শুরুর দিকে একটি কল রেকর্ডিং ভাইরাল হয়। যেখানে শোনা যায় নিরাপত্তাবাহিনীর এক কর্মীকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিচ্ছেন, "এখন লেথাল ওয়েপন ব্যাবহার করবে। যেখানে পাবে সোজা গুলি করবে"। সেই সময় সুর সপ্তমে উঠেছিল কোটা আন্দোলনের। ২০২৪-এর ১৮ জুলাই এই ফোন কথোপকথন হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। সেই ভাইরাল অডিওর ফরেনসিক বিশ্লেষণ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ পুলিশ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনের ট্রাইব্যুনালও তদন্ত করে জানিয়েছে যে, এই কণ্ঠস্বর শেখ হাসিনার। বিবিসিও অডিওটি নিয়ে তদন্ত করে তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তারা ইয়ারশটের অডিও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এই কল রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন যে, অডিওটি এডিট করার বা পরিবর্তন করার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এআই-এর সাহাজ্যে কৃত্রিমভাবে অডিওটি তৈরি করার সম্ভাবনাও কম। তবে ফোনে কোন আধিকারিককে এই নির্দেশ শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন, তা প্রকাশ করেনি বিবিসি। দ্বিতীয় ব্যাক্তির কণ্ঠস্বর নিয়ে কোনো তদন্ত হয়েছে কিনা তাও জানা যায়নি।

ফাঁস হওয়া অডিও সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে যে, ১৮ জুলাই ওই ফোনালাপের সময় শেখ হাসিনা তাঁর ঢাকার বাসভবন তথা গণভবনে ছিলেন। বিবিসির হাতে আসা পুলিশ নথি অনুযায়ী, হাসিনার এই কলের পরবর্তী দিনগুলিতে ঢাকা জুড়ে সামরিক রাইফেল ব্যাবহার করা হয়। শেখ হাসিনার ভাইরাল হওয়া বহু কলের মধ্যে এটি একটি। বাংলাদেশের ন্যাশানাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের পরিকাঠামো ব্যবহার করে এই কলটি করা হয়।

আরও পড়ুন- বারবার জেগেছে বাংলাদেশ! অবাক করবে সে দেশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস

শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে আসার পর অনেক কল রেকর্ডিংই ভাইরাল হয়েছে। যেগুলির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, গুলি চালানোর নির্দেশ সংক্রান্ত অডিও টেপটি হাসিনার কণ্ঠস্বর বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এই নিয়ে ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান বিবিসি-কে জানিয়েছেন, রেকর্ডিংটি স্পষ্ট ও যথাযথভাবে প্রমাণিত এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত। যা জুলাই গণহত্যায় হাসিনার ভূমিকা প্রতিষ্ঠার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে আদালতে হাসিনা এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন। একজন আওয়ামী লীগ মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, বিবিসি কর্তৃক উদ্ধৃত রেকর্ডিং সত্য কিনা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না।

গতবছর জুলাই-অগাস্ট মাসে অভ্যুত্থানের সময় নিহতের সংখ্যা ৮৩৪ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কোটা আন্দোলন থেকে হাসিনার পদত্যাগ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর সবথেকে বড় গণহিংসা এটি। প্রথমে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের উত্তরসূরিদের সরকারি চাকরিতে কোটা নির্ধারণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তা গণআন্দোলনের রূপ নেয়। এতটাই তীব্র আকার ধারণ করে এই আন্দোলন যে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনব্যাবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেয়। এমনকি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন দেখার শত শত মৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ। কী শাস্তি অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য! সময়ই দেবে সেই উত্তর।

More Articles