বন্ধু বিনে চাপ কমে না! মানসিক চাপ কমানোর শ্রেষ্ঠতম যে পথ বাতলালেন গবেষকরা
Stress Release: গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে এবং মানসিক সুস্থতার উন্নতি করতে পারে।
"চাপ নিস/নিও না"। খুব সহজ তিন শব্দের এক বাক্য। তবে, প্রায় অসম্ভবসম বিষয়। এই দ্রুতগতির পৃথিবীতে, চাপ আমাদের জীবনে এক স্থায়ী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানসিক চাপ শুধুই তো মানসিক নয়, শরীরে বিশ্রী প্রভাব ফেলে যায় এই চাপ, যার ফলে কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। চাপ নিস না বললেই চাপ না নিয়ে থাকা যায় না। ফলে রোগকে নির্মূল না করা গেলেও, রোগের উপসর্গ যাতে বিব্রত না করে সেই প্রতিকার খোঁজাই কাজের কাজ আপাতত। তাই আমাদের জীবনে ক্রমাগত বাড়তে থাকা চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্টিসলের মাত্রা কমানোর সহজ উপায় খুঁজে বের করা অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞরা বলবেন ধ্যান, প্রকৃতির মধ্যে হাঁটা, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, নানা থেরাপি এবং মানসিক চাপ লিখে রাখা এর থেকে বাঁচার উপায় হতে পারে। তবে এ ছাড়াও দ্রুত এবং সহজ পদ্ধতি আছে যা কার্যকরভাবে কর্টিসলের মাত্রা কমাতে পারে। বন্ধুদের সঙ্গে ছোট ছোট কথোপকথন, মন দিয়ে কথা শোনা, মন দিয়ে কোনও কাজে যুক্ত হওয়ার মতো সহজ দৈনন্দিন অভ্যাসগুলিও আমাদের মানসিক চাপ কমানোর উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
দীর্ঘায়ু বিশেষজ্ঞ ড্যান বুয়েটনার হাই নেট পারপাস পডকাস্টে এই বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এমন কিছু সহজ অভ্যাস সহজেই মেনে চলার পরামর্শ দেন যেগুলি সহজ সাধারণ হলেও খুবই কার্যকরী।
একটি ছোট চাপমুক্ত অভ্যাস
বুয়েটনার উল্লেখ করেছেন, চাপমুক্ত থাকার এবং কর্টিসলের মাত্রা কমানোর সেরা উপায়গুলির মধ্যে একটি হচ্ছে অন্যদের সঙ্গে কথোপকথনে জড়িত হওয়া, নিছক প্রতিবেশীর সঙ্গে দিনে একবার গল্প করার মতো সহজ বিষয়। তিনি বলছেন, এই মিথস্ক্রিয়াগুলি আসলে 'স্ট্রেস রিলিভার' বা আরও সহজভাবে বলতে গেলে, চাপ কমানোর টোটকা। অন্য যে কোনও মানুষের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথোপকথন অবিশ্বাস্যভাবে চাপ কমানোয় সাহায্য করতে পারে। আসলে আমাদের পরিবেশ এবং আমরা যাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে থাকি, তাদের ভূমিকা এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনোবিদরা বলেন, আমরা যে পাঁচজন ব্যক্তির সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাই, তাঁদের স্নায়ুতন্ত্র আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে।
আরও পড়ুন- সব কিছুর জন্য নিজেকেই দায়ী করেন? কেন বেড়ে ওঠে ‘ভিকটিম’ মানসিকতা?
কর্মক্ষেত্রজনিত চাপের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানীরা হামেশাই পরামর্শ দেন যে, যদি কর্মক্ষেত্রে চাপ অনুভব করেন, তাহলে সহকর্মীর সঙ্গে নৈমিত্তিক আড্ডার জন্য কিছুটা বিরতি নিন, তা আপনার চাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। গভীর কথোপকথনে ডুবে যাওয়ার দরকার নেই; কখনও কখনও, হালকা, দৈনন্দিন আলোচনাই যথেষ্ট। এই মিথস্ক্রিয়াগুলি আমাদের মানসিক চাপের এক চক্র থেকে বের করে আনে। সারাক্ষণের এই মানসিক চাপ কর্টিসল বাড়িয়ে তোলে।
আমাদের সামাজিক সম্পর্কই আমাদের জীবন বীমা
বুয়েটনার বলছেন, পৃথিবীর যে যে অঞ্চলের মানুষের আয়ু বেশি, তাদের দীর্ঘায়ু হওয়ার মূল রহস্যগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে তাদের শক্তিশালী সামাজিক এবং পারিবারিক সংযোগ। এই সম্পর্কের যোগাযোগ কেবল দীর্ঘমেয়াদের উপরই প্রভাব ফেলে না, তাৎক্ষণিকভাবে মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। খুব সহজ করে বলতে গেলে, আপনি যখন প্রচণ্ড চাপে থাকেন তখন বন্ধু বা মা, বাবার সঙ্গে হালকা, কিছুটা সান্ত্বনাদায়ক আড্ডার পরে কতটা ফুরফুরে লাগে ভেবেই দেখুন!
এই একটি বিষয়ে বিশ্বের সমস্ত দীর্ঘায়ু বিশেষজ্ঞই কিন্তু একমত। ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডঃ ডেনিস ল্যাম্বোলি, ‘Guess My Age If You Can’ বইতে ডঃ অলিভিয়ার কোর্টিন ক্লারিন্সের সঙ্গে এই বিষয়ক এক আলোচনায় ১৯৩৮ সালের এক হার্ভার্ড গবেষণার উল্লেখ করেছেন। বেশি সামাজিক মিথস্ক্রিয়া কীভাবে আয়ুষ্কাল বাড়াতে এবং জীবনের সামগ্রিক মান বাড়াতে সাহায্য করে সেই নিয়েই ওই গবেষণা হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে এবং মানসিক সুস্থতার উন্নতি করতে পারে। ৩০০,০০০-এরও বেশি পুরুষ ও মহিলাদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যাদের সামাজিক সম্পর্ক কম তাদের অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা দ্বিগুণ। মানুষকে ভালো রাখতে পারে যোগ্য মানুষই।