সদগুরুর ইশা ফাউন্ডেশনে কেমন থাকেন মহিলারা? আদালতের নির্দেশে শুরু তদন্ত!
Sadhguru Ashram Women: ইশা ফাউন্ডেশন সম্পর্কিত সমস্ত মামলার একটি তালিকা তৈরি করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
নিজের মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ধুমধাম করে। দেশজোড়া তাঁর খ্যাতি, আশ্রমের ভক্ত সংখ্যা ক্রমেই বর্ধমান। অথচ তাঁর আশ্রমে যে মহিলা শিষ্যরা রয়েছেন তাঁদের সঙ্গে ঠিক কেমন আচরণ করা হয়? সুশিক্ষিত যুবতীদের পার্থিব জীবন থেকে সরিয়ে কেন সন্ন্যাসীনি তৈরির মরিয়া চেষ্টা করেন আধ্যাত্মিক গুরু সদগুরু জাগ্গি বাসুদেব, যাকে দেশ চেনে সদগুরু নামে? এই প্রশ্ন তুলেছে খোদ আদালত! মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রশ্ন, নিজের মেয়েরই যখন বিয়ে দিয়েছেন, তখন কেন যুবতীদেরকে মাথা মুড়িয়ে পার্থিব জীবন ত্যাগ করতে উত্সাহিত করছেন সদগুরু?
বিচারপতি এস এম সুব্রামনিয়াম এবং ভি শিবজ্ঞানমের একটি বেঞ্চ ইশা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদগুরুকে যে প্রশ্নটি করেছে, তার নেপথ্যে রয়েছে একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকের দায়ের করা অভিযোগ। ওই অধ্যাপকের অভিযোগ ছিল, তাঁর দুই সুশিক্ষিত কন্যাকে ইশা যোগ কেন্দ্রে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য 'মগজ ধোলাই' করা হয়েছে। এমনকী সেখানে বাবা-মা এবং আত্মীয়দেরও আটকে রাখা সন্ন্যাসীদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয় না। অধ্যাপক এস কামরাজ কোয়েম্বাটোরের তামিলনাড়ু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তিনি চেয়েছেন, আদালতে তাঁর কন্যারা সশরীরে উপস্থিত হন। তার জন্য আবেদন করেছিলেন কামরাজ।
সেইমতো আদালতে হাজিরও হন তাঁর দুই মেয়ে। ৪২ বছর এবং ৩৯ বছরের দুই মহিলাই জানিয়েছেন, তাঁরা স্বেচ্ছায় ইশা ফাউন্ডেশনেই থাকছেন। তাদের আটক করে রাখা হচ্ছে না। এ নতুন কিছু না। এর আগেও এমন মামলা হয়েছে যেখানে বাবা-মায়েরা অভিযোগ করেছেন যে মেয়েরা নিজেদের চাকরি, জীবন, পরিবার ত্যাগ করে এই আশ্রমে এসে থাকার পর থেকে তাঁদের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে আর সেই কন্যারা আগেও একইভাবে জানিয়েছেন, ‘স্বেচ্ছায়' এসেছেন তারা।
আরও পড়ুন- ভোলেবাবা, সদগুরু, রামদেবের ‘ভণ্ডামির’ বিরুদ্ধে আইন আনা কতটা জরুরি?
কামরাজের দুই মেয়ের এমন বক্তব্যের পরে আদালতের সিনিয়র বিচারপতি প্রশ্ন করেছিলেন, “আপনারা আধ্যাত্মিকতার পথে আছেন বলে দাবি করছেন। আপনারা কি মনে করেন না যে নিজেদের বাবা-মাকে অবহেলা করা পাপ? 'সবাইকে ভালবাসুন, কাউকে ঘৃণা করবেন না' এটাই তো ভক্তির নীতি। তাহলে আপনাদের মা-বাবার প্রতি আপনাদের মধ্যে এত ঘৃণা দেখতে পাচ্ছি কেন? আপনারা তো বাবা-মাকে সামান্য সম্মান দিয়ে সম্বোধনও করছেন না।"
তবে এইবার বিচারকরা মামলাটি নিয়ে আরও তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইশা ফাউন্ডেশন সম্পর্কিত সমস্ত মামলার একটি তালিকা তৈরি করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেছেন, "আমরা জানতে চাই, একজন ব্যক্তি যিনি নিজে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন এবং মেয়েকে জীবনে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি কেন অন্যের মেয়েদের মগজ ধোলাই করে একজন আশ্রমিকের মতো জীবনযাপন করতে উত্সাহিত করছেন?”
ইশা ফাউন্ডেশন অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, এই মহিলারা স্বেচ্ছায় তাদের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করে। "আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের তাদের পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা এবং বুদ্ধি আছে। আমরা বিবাহ বা সন্ন্যাসীত্ব চাপিয়ে দিই না, কারণ এগুলি ব্যক্তিগত পছন্দ। ইশা যোগ কেন্দ্র হাজার হাজার মানুষ যারা সন্ন্যাসী নন তারাও আছেন, পাশাপাশি এমন অনেকে আছেন যারা ব্রহ্মচর্য বা সন্ন্যাস গ্রহণ করেছেন, জানিয়েছে সদগুরুর সংস্থা।
আরও পড়ুন- সদগুরু থেকে রামদেব: ভেকধারী ‘বাবা’দের যেভাবে কাজে লাগায় বিজেপি
আবেদনকারী কামরাজের আইনজীবী জানিয়েছেন, ইশা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জড়িত একাধিক ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি, সেখানে কর্মরত একজন ডাক্তারের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা (পকসো) আইনের অধীনে মামলা করা হয়েছে।
হলফনামায় আবেদনকারী অধ্যাপক জানিয়েছেন, তাঁর বড় মেয়ে গীতা কামরাজ ২০০৩ সালে মেকাট্রনিক্সে ইঞ্জিনিয়ারিং করে এবং তারপরে যুক্তরাজ্যের একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমটেক করে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই চাকরি পেয়েছিলেন তিনি এবং ২০০৪ সালে প্রতি মাসে প্রায় ১ লক্ষ টাকা বেতন পেতেন। ২০০৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজনের সঙ্গে বিয়েও করেন কিন্তু ২০০৮ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
তারপর থেকে, বড় মেয়ে ইশা ফাউন্ডেশনে যোগ ক্লাসে যেতে শুরু করেন। দিদির পদাঙ্ক অনুসরণ করে, তাঁর ছোট মেয়ে লতা কামরাজ যে নিজে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সেও ওই যোগ কেন্দ্রে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কামরাজের বয়স ৬৯, স্ত্রীর বয়স ৬৩! মেয়েরা চলে যাওয়ার পরে তাঁদের জীবন 'নরক' হয়ে উঠেছে, বলছেন বৃদ্ধ বাবা-মা। কামরাজের অভিযোগ, সদগুরুর যোগ কেন্দ্রে তাঁর মেয়েদেরকে একধরনের খাবার এবং ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে তারা তাদের চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা হারিয়ে গিয়েছে।