ইজরায়েলের হাসপাতাল লক্ষ্য করে ইরানের হামলা! নেতানিয়াহুর হাত ধরবেন ট্রাম্প?

Iran Israel Conflict: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সতর্ক করে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ইজরায়েলের পাশে যোগ দেয়, তবে তারা “অপূরণীয়” ক্ষতির মুখোমুখি হবে।

ইজরায়েলের একাধিক স্থান লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল ইরান। এর মধ্যে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল সোরোকা মেডিকেল সেন্টারও রয়েছে। ইজরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইজরায়েল ইরানের একটি নিষ্ক্রিয় পারমাণবিক চুল্লি ও নাতাঞ্জ অঞ্চলের পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। পাল্টা কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান বলেই মনে করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের কানফাটা শব্দ শুনতে পাওয়া গিয়েছে তেল আভিভ, জেরুজালেমেও।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বিয়েরশেবা শহরের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে ইরানের এই হামলায় হাসপাতাল ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অস্ত্রোপচারের জন্য ব্যবহৃত একটি বিল্ডিং মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তবে, হামলার আগে এই ভবন থেকে বেশিরভাগ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন। হাসপাতালে না আসার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে। গত শুক্রবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইজরায়েলের কোনও হাসপাতালে প্রথম সরাসরি হামলা চালাল ইরান।

ইজরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানের আরাক অঞ্চলে একটি নিষ্ক্রিয় পারমাণবিক চুল্লি এবং নাতাঞ্জে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একটি কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা রোধ করা। ইজরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানিয়েছে, ইরানের মিসাইল হামলায় একজন গুরুতর আহত এবং ২২ জন সামান্য আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন- ইরানের শাসনব্যবস্থার পতন ঘটানোই মূল লক্ষ্য ইজরায়েলের? যা জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা

গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষের সপ্তম দিনে এসে মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি আরও জটিল হলো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইজরায়েলের অক্ষে যোগ দেওয়ার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি বলেছেন, “আমার কিছু পরিকল্পনা আছে, তবে আমি শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করি। পরিস্থিতি বদলাতে পারে। দেখা যাক”। ইজরায়েল ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করতে মার্কিন অস্ত্রের সাহায্য চেয়েছে। এই সম্ভাবনায় যুদ্ধ আরও প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সতর্ক করে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ইজরায়েলের পাশে যোগ দেয়, তবে তারা “অপূরণীয়” ক্ষতির মুখোমুখি হবে। তবে,ইরানের একজন বরিষ্ঠ কূটনীতিক বলছেন, তারা এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ট্রাম্পের প্রতিনিধি বা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি বলে মতপ্রকাশ করেছেন। তিনি ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতে চান।

এদিকে, ইরানে গত ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রায় সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বিভ্রাট চলছে। নেটব্লকস নামে একটি সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরানে ইন্টারনেট সংযোগে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, ইজরায়েলের গুপ্তচরবৃত্তি ও সামরিক কার্যকলাপ রোধ করতে সরকার এই পদক্ষেপ করেছে।

ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা এখনও রয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, কূটনীতির মাধ্যমে বড় ধরনের যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব। তবে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা “নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের” প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। পাশাপাশি ইরানের অনুররোধে শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সেই বৈঠকে অংশ নেবে ইজরায়েলও। এই আবহে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

More Articles