ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরেই বন্ধ ইরানের আকাশপথ! জবাব ফেরাতে পারবেন নেতানিয়াহু?
Iran-Israel Conflict: এদিকে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি সামনে আসতেই নিজেদের আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে ইরান।
আগেই ইজরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ইরান। কিন্তু হিজবুল্লাহ দমনে কোনও নমনীয়তা দেখাতে রাজি হয়নি ইজরায়েল। মঙ্গলবারই লেবাননে স্থল আক্রমণ শুরু করেছে নেতানিয়াহু সেনা। তার দু'দিন আগেই হিজবুল্লাহের সর্বোচ্চ নেতা নাসরাল্লেহর মৃত্যু হয়েছে ইজরায়েলের হামলায়। রাজধানী বেইরুট থেকে শুরু করে লেবাননের একাধিক জায়গায় হামলার পর হামলা চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েল। বাদ যায়নি সিরিয়াও। হাউথিদের হামলার পাল্টা হিসাবে ইয়েমেনেও হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। ইজরায়েলে হামলা চালালে তার ফল ভালো হবে না, জানিয়ে দিয়েছিল আমেরিকাও। তবে আমেরিকার হুঁশিয়ারি সামনে আসতে না আসতেই ইজরায়েলে হামলা চালিয়ে দিল ইরান। মঙ্গলবার রাত থেকেই ইজরায়েলকে নিশানা করে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে শুরু করল ইরান। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ভূখণ্ডে একের পর এক আছড়ে পড়তে লাগল সেই সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্র।
ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে অন্তত ২০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তারা। তার মধ্যে একাধিক মাঝারি পাল্লার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। নিশানা করা হয় ইজরায়েলের বেয়ারশেভার কাছে এফ-৩৫ ফাইটার জেট রাখার জন্য ব্য়বহৃত নেভটিম বিমানঘাঁটি-সহ একাধিক বিমানঘাঁটিকে। শুধু বিমানঘাঁটিই নয়, নেটজারিম মিলিটারি ফেসিলিটি এবং তেল আভিভের কাছে মোসাদের সদর দফতরকেও নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। ইতিমধ্যেই সেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একাধিক ভিডিও ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ইরানের শীর্ষ সেনাকর্তা মহম্মদ বাগেরির দাবি, ইজরায়েলর দুটি সামরিক ঘাঁটি ও ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের সদর দফতরকে নিশানা করেছে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র। ইজরায়েলের তরফে পাল্টা দাবি করা হয়েছে, ইরানের দিক থেকে একাধিক রকেটকে প্রতিহত করেছে ইজরায়েলের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্য়বস্থা। আমেরিকা জানিয়েছে, তাদের দিক থেকেও ইরানের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝপথেই রুখে দেওয়া হয়। যদিও ইরানের দাবি, তাদের অধিকাংশ রকেটই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন: হিজবুল্লাহকে চাপে রাখতেই লেবাননে স্থল আক্রমণ! ইজরায়েলে পাল্টা পরমাণু হামলার ফন্দি আঁটছে ইরান?
এদিকে ইরানের এই হামলার পরেই স্পষ্ট ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইরানের প্রতি তাঁর সাফ বার্তা, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফল ভুগতে হবে ইরানকে। ইরানকে এ বিষয়ে আগেভাগেই সতর্ক করেছিল আমেরিকাও। ইরান হামলার পরে মঙ্গলবার রাতেই মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন নেতানিয়াহু। সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের বলেছেন, ‘‘ইরান হামলা করে ঠিক কাজ করেনি। এর ফল ভুগতে হবে তাদের।’’ ইজ়রায়েলি সেনা জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইরান পর পর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। যদিও সেই হামলা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। ইরানি হামলায় এখনও পর্যন্ত তেমন ক্ষতির কথা জানায়নি ইজ়রায়েল। ইরান হামলার নিন্দা করে ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়াল আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ইজ়রায়েলকে সম্পূর্ণ সমর্থন করা হবে। আমেরিকা সেনা সাহায্য করবে ইজ়রায়েলকে। তবে থেমে নেই ইরানও। নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারির পর বুধবার ইরানি সেনা জবাবে জানিয়েছে, ইজ়রায়েল যদি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নেয়, তবে পাল্টা হামলা চালানো হবে।
Op. True Promise II: Iran launches hundreds of missiles at Zionist entity, 90% hit targets
— Press TV 🔻 (@PressTV) October 2, 2024
Follow Press TV on Telegram: https://t.co/B3zXG73Jym pic.twitter.com/IxJfhOOZyE
গাজায় ইজরায়েল সশস্ত্র যুদ্ধ ঘোষণা করার পর থেকেই ইজরায়েলে এক বছর ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হিজবুল্লাহ। প্রায়শই জবাব ফিরিয়ে দিত ইজরায়েলও। তবে এর মধ্যে লেবাননে পেজার হামলার নেপথ্যে ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ফের ইজরায়েলে হামলা চালাতে শুরু করে হিজবুল্লাহ। তার উত্তরে হিজবুল্লাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করে দেয় ইজরায়েল। তার পর থেকেই লেবাননে হামলার পর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। হিজবুল্লাহের বিরুদ্ধে হামলার প্রতিবাদে ইজরায়েলে হামলা চালায় ইয়েমেনের জঙ্গিগোষ্ঠী হাউথিরাও। হিজবুল্লাহ হোক বা হাউথি, কিংবা হামাস, সব কটি জঙ্গিগোষ্ঠীকেই মদত জুগিয়ে থাকে ইরান। হিজবুল্লাহের উপর ইজরায়েলের একের পুর এক হামলাকে ভালো চোখে দেখেনি ইরান। গাজ়ায় হামলার বর্ষপূর্তির ঠিক আগেই লেবাননে ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ শুরু করেছে ইজ়রায়েলি সেনা। মঙ্গলবার ইজ়রায়েলি সেনার ট্যাঙ্ক বহর দক্ষিণ লেবাননে অনুপ্রবেশের পর প্রত্যাঘাত শুরু করে ইরান!দীর্ঘদিন ধরেই ইজরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেই রয়েছে ইরানের। লেবাননকে কেন্দ্র করে নতুন মাত্রা পেয়েছে সেই সংঘাত।
এদিকে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি সামনে আসতেই নিজেদের আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। সামরিক, বেসরকারি কোনও বিমানই ঢুকতে পারবে না ইরানের আকাশসীমায়। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আপাতত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। ইতিমধ্যেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে। ইজরায়েলের পাল্টা হামলা যে এই যুদ্ধকে আরও ভয়ঙ্কর জায়গায় নিয়ে যেতে পারে, তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। ভারতে ইরানের রাষ্ট্রদূত ইরাজ এলাহি ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে 'একবিংশ শতাব্দীর হিটলার' বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে,হিজবুল্লাহ কোনও জঙ্গি সংগঠন নয়, তারা লেবাননের একটি রাজনৈতিক দল। তবে আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো বেশ কিছু দেশেরই কালো তালিকায় রয়েছে দলটি। কিন্তু ইজরায়েল-ইরানের এই সংঘাত পরিস্থিতিতে ভারত সাহায্য় করতে পারে বলেও আশাবাদী ইরাজ। যদিও এই মুহূর্তে কোনও পক্ষ না নিয়ে শান্তির বার্তা দিয়েই মুখ খুলেছে নয়াদিল্লি। বুধবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সব পক্ষকে সেখানে সংযত থাকার আহ্বান দেওয়া হয়েছে। আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চায় নয়াদিল্লি। বুধবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘‘পশ্চিম এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তার সঙ্কট নিয়ে আমরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের অনুরোধ করছি। এই সংঘাত যেন বৃহত্তর এলাকায় ছড়িয়ে না পড়ে, সেটা দেখতে হবে। আমাদের অনুরোধ, সমস্ত সমস্যা আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে সমাধান করা হোক।’’
এদিকে এরই মধ্যে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতারেসের ইজরায়েলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নেতানিয়াহু সরকার। ইরান যেভাবে ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলে, তাতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মদতের অভিযোগ তোলা হয়েছে তাদের তরফে। একই সঙ্গে লেবাননে আগ্রাসন বাড়ানোর পথেই এগোচ্ছে ইজরায়েলি সেনা। ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের যে বিশেষ ইউনিট এতদিন গাজায় হামাস নিধনে মোতায়েন ছিল, তাদের সেখান থেকে সরিয়ে এনে লেবাননে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যাতে তারা হিজবুল্লাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
আরও পড়ুন:ইজরায়েলের হামলায় নিহত নাসরাল্লাহ, এবার হিজবুল্লাহর দায়িত্ব সামলাবেন কে?
মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তির ছায়া লম্বা হতেই তেলের দাম বাড়ার আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। গোটা বিশ্বে অন্যতম তেল রফতানিকারক হিসেবে বিখ্যাত ইরান। কিন্তু যুদ্ধ লাগলে তেলের দাম বাড়বেই। যার প্রভাব পড়বে ভারত-সহ একাধিক দেশেই। ফলে সেটাও এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে যথেষ্ট চিন্তার বিষয় বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল। ইতিমধ্যেই আমেরিকাকে এই সংঘাতে নাক গলাতে বারণ করেছে ইরান। তবে বন্ধু দেশ ইজরায়েলের হয়ে এই সংঘাতে পক্ষপাতিত্ব করবে বলেই মনে হচ্ছে আমেরিকা। সেই পরিস্থিতিতে ইরানকে সাহায্য করতে যদি রাশিয়াও এগিয়ে আসতে চায়, তাহলে বড়সড় বিশ্বযুদ্ধ বাধার সম্ভবনা উড়িয়ে দিতে পারছে না ওয়াকিবহাল মহল।