ইরান-ইজরায়েল সংঘাত! ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে?
Iran-Israel conflict: চলতি বছর মার্চ মাসে আমেরিকার জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড আমেরিকার কংগ্রেসে এক শুনানিতে বলেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ইরান কোনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।
নব্বইয়ের দশক থেকেই ইজরায়েল অভিযোগ করেছে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু ইরান প্রথম থেকেই তা অস্বীকার করে এসেছে। ইজরায়েল ১৩ জুন ইরানে হামলা শুরুর সময় দাবি করেছিল, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে। যেকোনো সময় এ অস্ত্র তৈরি করে ফেলবে তারা। ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকাতেই দেশটিতে হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল, মত ইজরায়েলি জনপ্রতিনিধিদের। ইজরায়েল সামরিক অভিযানে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলিতে ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছে। শুধু পারমাণবিক স্থাপনাই নয়, বরং ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাটারি, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, অস্ত্রাগার, পরীক্ষাগার এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাসভবনও টার্গেট ছিল। এর পাল্টা জবাব দিতে ইজরায়েলের হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই তেল আভিভে মিসাইল চালায় তেহরান। ইরান কি সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে? দশকের পর দশক ধরে কেন ইরানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠছে? খোলসা করা যাক!
ইজরায়েল-সহ একাধিক দেশের দাবি, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে৷ তবে এর সত্যতা জানা এখনও সম্ভব হয়নি৷ ইজরায়েলেও সপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে এখনও পারেনি। বিশ্লেষকদের একাংশই আবার ইরানকে পরমাণু শক্তিধর না বললেও, পারমাণবিক অস্ত্রের দ্বারপ্রান্তের দেশ বলে উল্লেখ করেন৷
অন্যদিকে, ইজরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা ভিন্ন কথা বলছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ইরান এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। আমেরিকার গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মতো অবস্থায় নেই। শুধু তাই নয়, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে তেহরানের অন্তত তিন বছর লাগবে।আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে এসব তথ্য জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের চারজন কর্মকর্তা।
তবুও এই সন্দেহ কেন? কারণ ইরানে ইউরেনিয়াম সহজলভ্য বলে মত। যদিও তার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে প্রয়োজন ৯০% বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম৷ ইরানের কাছে এখনও এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম নেই বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরাই বলছেন ইরানের ভাঁড়ারে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম রয়েছে। যদিও বেসামরিক খাতে প্রয়োজনের তুলনায় এই পরিমাণ অনেকটাই বেশি। এছাড়া এই পরিমাণ ইউরেনিয়ামও অস্ত্র তৈরির করার কাছাকাছি। অর্থাৎ, ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম দিয়ে প্রায় ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব। আর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে দরকার পড়ে সেন্ট্রিফিউজের। ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক ঘাঁটিতে সেই সেন্ট্রিফিউজও আছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইজরায়েলের হামলায় নাতাঞ্জের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু দেশটির সুরক্ষিত আরেকটি পারমাণবিক স্থাপনা ফরদো এখনও অক্ষত। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা বলছেন, আমেরিকার সহায়তা ছাড়া ফরদো-র ঘাঁটি ধ্বংস করা সম্ভব নয়। কারণ, আমেরিকা প্রয়োজনীয় অস্ত্র না দিলে ও আকাশপথে হামলা চালাতে সাহায্য না করলে ফরদোর ক্ষতি করার মতো সক্ষমতা ইজরায়েলের নেই।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, অস্ত্র তৈরি করার জন্য যে পরিমাণ ইউরেনিয়ামের প্রয়োজন তা না থাকলেও, বর্তমানে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুদ এবং সক্ষমতা ইরানের রয়েছে, তাতে প্রযুক্তি কাজে লাগালে ইরান খুব দ্রুত সে পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে৷
অন্যদিকে, একাংশ পারমাণুবিক বিশেষজ্ঞ এও দাবি করছেন যে, কেবল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করলেই পারমাণবিক অস্ত্র বানানো যায় না৷ তার জন্য একটি কর্মক্ষম যুদ্ধাস্ত্র এবং সেটা নিক্ষেপে সক্ষম মিসাইলও প্রয়োজন৷
চলতি বছর মার্চ মাসে আমেরিকার জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড আমেরিকার কংগ্রেসে এক শুনানিতে বলেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ইরান কোনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। এ ছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অনুমোদন দেননি। ২০০৩ সালে খামেনি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন। ইরান বরাবর দাবি করে এসেছে, শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই তারা এই পারমাণুবিক অস্ত্র প্রকল্প পরিচালনা করছে৷
তবে এও ঠিক যে, পারমাণবিক বোমা তৈরির কাছাকাছি যাওয়ার ফলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক সুবিধা পেয়েছে ইরান। যেমন, পারমাণুবিক চুক্তি থেকে বের হয়ে আসা। আমেরিকা আবার ইরানের সঙ্গে আলোচনায় ফিরে আসতে চাইছিলেন৷ ইরানের সঙ্গে এখন নতুন পারমাণবিক চুক্তি করতে চাইছিলেন ট্রাম্প৷ ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘আমি মনে করি, ইরানের সঙ্গেও চুক্তি হতে পারে৷ খুব সহজ ব্যাপার, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না৷"
ইজরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক ঘাঁটি টার্গেট করে হামলা করেছে৷ এতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভ্যুলেশনারি গার্ড-এর কমান্ডার হোসেইন সালামি-সহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইরান। তবে এসব হামলায় আসলে কতটা ক্ষতি হয়েছে, এর ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে কী প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি৷ আশঙ্কা করা হচ্ছে, ইজরায়েলের হামলার পর যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে তাতে আকস্মিক এ হামলা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির করার পথে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।