ইরানের শাসনব্যবস্থার পতন ঘটানোই মূল লক্ষ্য ইজরায়েলের? যা জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা
Israel: বড় প্রশ্ন হলো, ইজরায়েল কি আবারও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে, যেমনটা ইরানের উপর অতীতের হামলার সময় করেছিল?
আজ ইরান-ইজরায়েল হামলার পঞ্চম দিনেও উভয়পক্ষ হামলা অব্যাহত রেখেছে। বেড়েছে সংঘাতের তীব্রতা। ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক ঘাঁটিতে ইজরায়েলের হামলা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। আলজাজিরা-র বিশ্লেষণমূলক এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, এর ফলে তেহরান তাদের পারমাণবিক নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। দেখা যাক বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন।
মধ্যস্থতাকারী কাতার ও ওমানকে ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ইজরায়েলের হামলা চলাকালীন যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো আলোচনা করবে না তারা। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ইরানে হামলার পরে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) ইরান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলী ভায়েজ বলেন, ইজরায়েলের এই আক্রমণ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির করার পথে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউট (এমইআই) আয়োজিত এক বিশেষজ্ঞ প্যানেল আলোচনায় বলা হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের সামরিক অভিযান আরও কয়েক সপ্তাহ চলতে পারে। ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থার পতন ঘটানোই ইজরায়েলের মূল লক্ষ্য হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই আলোচনায়। সেদিনের আলোচনায় অংশ নেন মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের সাবেক প্রধান জেনারেল জোসেফ এল ভোটেল, মার্কিন নৌবাহিনীর পঞ্চম ফ্লিটের সাবেক কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল কেভিন ডোনেগান এবং ইরান-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও এমইআই-এর সিনিয়র ফেলো অ্যালেক্স ভাতাঙ্কা। ওহাইওর রাইট-প্যাটারসন এয়ার ফোর্স বেসে শিক্ষকতা করেন অ্যালেক্স ভাতাঙ্কা।
ভাতাঙ্কা-র মতে, ইজরায়েলের উদ্দেশ্য কেবল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করা, না কি সরকার পতন করা— তা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে “আমরা হয়তো সে দিকেই এগোচ্ছি"। তিনি আরও বলেন, আমার বিশ্বাস, বেশিরভাগ ইরানের কর্মকর্তাই মনে করেন ইজরায়েল চায় তাদের সরকার ধ্বংস হোক। বড় প্রশ্ন হলো, ইজরায়েল কি আবারও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে, যেমনটা ইরানের উপর অতীতের হামলার সময় করেছিল? তাঁর দাবি, ইজরায়েল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের সমর্থন পাচ্ছে, অথচ তেহরান কারোর কাছ থেকেই সেভাবে সহায়তা পাচ্ছে না। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী— এই মুহূর্তে ইরানকে কতটা সাহায্য করতে পারবে? ইজরায়েলের হামলায় তারা আগে থেকেই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
আলোচনা সভায় ডোনেগান বলেন, প্রশ্ন হলো, ইরান কি মনে করছে তাদের প্রতিশোধ যথেষ্ট হয়েছে, এখন তারা আলোচনায় ফিরতে পারবে? আমার মনে হয়, এখনই তারা আলোচনায় বসবে না। তাঁর কথায়, ইরান চাইলে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করতে পারে, কিন্তু সেটা করলে তাদের নিজরাও তেল রপ্তানি থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে সেটি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত হবে।
প্যানেল সদস্যদের মতে, এই যুদ্ধের ফলাফল নির্ভর করছে ইজরায়েলের উপর। তারা কতদূর অগ্রসর হতে চায় তার উপরই সংঘর্ষের ক্ষয়ক্ষতি নির্ভর করবে। তবে হামলার ধরন, টার্গেট ও ইজরায়েলি নেতাদের বক্তব্য থেকে খানিক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে শুধু পরমাণবিক অস্ত্রই বিষয় নয়, হামলার উদ্দেশ্য আরও বড় হলেও হতে পারে। অনেকেই দাবি করেছেন, ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চাইছে ইজরায়েল।
বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন যে ইরানের ভেতরে ও আঞ্চলিক মিত্রদের কাছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করাই ছিল হামলার অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রথম দফার হামলায় ইরানের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তী হামলাগুলোও সুনির্দিষ্ট টার্গেটে হামলা করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি বেড়েই চলেছে। এতে দেশটির বর্তমান শাসনব্যবস্থা দুর্বল ও অস্থির হয়ে পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে আমেরিকার হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসন। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী চান, আমেরিকা এই যুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ করুক, যাতে ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়। এই আবহেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যে জল্পনা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবারই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করতে বলেছিলেন ট্রাম্প।
অন্যদিকে, বুধবার (১৮ জুন)টেলিভিশনে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খামেনি বলেছেন, ইরানকে যারা চেনে, তারা এই ভাষায় কথা বলে না। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, ইরানের উপর ‘যুদ্ধ’ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর কাছে তাঁরা মাথা নত করবেন না। কোনও ‘চাপিয়ে দেওয়া শান্তি’র কাছেও মাথা নত করবে না ইরান। টেলিভিশন বার্তায় খামেনেই বলেন, ‘‘আরোপিত যুদ্ধের মুখে ইরান কঠোর অবস্থান নেবে। আরোপিত শান্তির বিরুদ্ধেও ইরানের অবস্থান হবে সমান। আরোপের মুখে এই দেশ কারও সামনে আত্মসমর্পণ করবে না।’’ তবে কি সত্যিই আমেরিকা পশ্চিম এশিয়ার ‘যুদ্ধে’ যোগ দেবে? আবার কি ইরানে পালাবদলের পালা? নেতানিয়াহুর নিশানা কি খামেনেই, নেপথ্যে ট্রাম্প?