ধৈর্যই এ শহরে আমার পরম বন্ধু | ফরাসি বন্ধুদের চোখে কলকাতা

Bengali and French Culture: কলকাতায় একটা রয়াল এনফিল্ড চালিয়ে ঘুরত জাক, সেটা চালিয়ে গোটা উত্তরবঙ্গ ঘুরে এসেছিল একা।

তিন বছর পার করলাম ফ্রান্সে। ‘কান টানলেই কলকাতা’ সিরিজে এতদিন লিখছিলাম ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ। কাজের জন্য এ দেশে আসার আগে থেকেই শুরু হয়েছিল ফরাসি ভাষা শেখা। একটা নতুন ভাষা অনেক জানলা খুলে দিয়েছিল। আমি দূর থেকেই চেষ্টা করেছিলাম স্টিরিওটাইপ থেকে বেরিয়ে ফরাসি মননকে ধরার। এই চেষ্টায় আমার নিত্যদিনের সাথী ছিল আমার দুই ফরাসি শিক্ষক জাক ও ভালেরি। একটু একটু করে ওরা আমাকে চিনিয়েছিল ওদের দেশ, দেশের মানুষ ও ইতিহাস, শিল্প ও সংস্কৃতি। ওরা দু'জনেই তখন কলকাতাবাসী। ওদের সঙ্গে আড্ডায় আমি প্রথম দেখতে শিখেছি বাঙালি আর ফরাসির মিল-অমিল। সেইসব হাতে-কলমে যাচাই করার সুযোগ পেয়েছিলাম ফ্রান্সে আসার পর। এই সিরিজের শেষ লেখা লিখতে বসে মনে হলো, টেবিলটা একটু ঘুরিয়ে দিলে কেমন হয়? কলকাতায় থাকতে জাক আর ভালেরির কেমন লাগত? দেশের কথা মনে পড়ত? কী দেখে মনে হতো, এ তো আমার শহরের মতোই! কী দেখে মন কেমন করত নিজের দেশের জন্য?

আজ লিখব জাক আর ভালেরি-র কলকাতার স্মৃতি রোমন্থন। 

২০১৯-এর জুলাই মাসের কোনও একদিন জাক প্রথমবার ভারত আসে। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে দেখে, প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে শহর। ওর বাঙালি বন্ধুরা নাকি ওকে তখন বলেছিল— এমন মুষলধারে বৃষ্টিতে আগমন নাকি শুভ লক্ষণ! কীসের শুভ তা ও জানে না, তবে জাক-এর মনে হয়েছিল, জীবনে প্রথমবার যদি প্যারিসে কেউ একই অবস্থায় পৌঁছয়, সে মুহূর্তে পৃথিবীর কোনওকিছুই তার মোটেই তেমন আনন্দময় বা শুভ মনে হবে না!

আরও পড়ুন- আত্মযত্ন আর বাহুল্যবর্জন! বঙ্গ-ফরাসি ফ্যাশনের শিকড়ে ছিল যে মন্ত্র

ভালেরি গত ১৫ বছর ধরে ভারতের বাসিন্দা। ওখানেই পাকাপাকি থাকার ইচ্ছা। খানিক হঠাৎ করেই ও এসে পড়ে কলকাতায়। ২০১৯ থেকে ২০২১, আড়াই বছর কলকাতায় কাটিয়ে ও এখন হায়দরাবাদে থাকে। কলকাতায় যাওয়ার অনেক আগেই, ভারতে গিয়ে ওর  বাঁ কাঁধে মা কালীর একটা উল্কি করিয়েছিল। ও বলে, কালীর মধ্যে আমি অন্ধকারের ওপর আলোর জয়, শক্তি ও সাহসের প্রতীক দেখি, তাই এই দেবীকে আমি বেছে নিয়েছিলাম। ভারতে কয়েক বছর কাটানোর পরেও, কলকাতায় যাওয়ার ব্যাপারে শুরুতে ভালেরির গভীর দ্বিধা ছিল। কলকাতাকে ভালোবেসে ফেলার পর ও মজা করে বলে যে, কাঁধে কালী ভর করে ওকে কলকাতা টেনে নিয়ে গিয়েছিল! কোভিডের মতো কঠিন এবং অস্বাভাবিক সময়টিও, কলকাতায় থাকার জন্যই নাকি ওর জীবনের অন্যতম সেরা সময়গুলির একটি হয়ে উঠেছিল বলে ওর ধারণা।

জাক পৃথিবীর নানা শহর ঘোরা মানুষ। আমরা মজা করে ওকে বলতাম যাযাবর ফরাসি। ওর মতে, পিছনে ফিরে তাকালে, ভারতের মতো একটি দেশে, বিশেষ করে কলকাতায় মানিয়ে নেওয়া ওর নতুন করে তেমন কঠিন মনে হয়নি। প্রথম থেকেই ভিড় আর শব্দকে জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছিল বলে কলকাতার দৈনন্দিন জীবনের বাকি বিষয়গুলো ওর কাছে সহজ হয়ে যায়। এমনকী, প্রশাসনিক কাজ সম্পর্কে জাক বলেছিল, ফ্রান্স বা অন্য যে দেশগুলোতে ও থেকেছে তার আগে, তুলনায় কলকাতার সরকারি দফতরের অভিজ্ঞতা তার চেয়ে বেশি ধীর বা জটিল মনে হয়নি। ও শুধু বারবার নিজেকে মনে করাত— ধৈর্যই এ শহরে আমার পরম বন্ধু, রাগ করে কোনও লাভ নেই। একদিন না হলে পরেরদিন ফিরে গেলেই কাজ হয়ে যাবে, এটাই শহরের মূলমন্ত্র। চেনাজানা মানুষের উপর বিশ্বাসই এখানে একমাত্র ভরসার। কলকাতায় একটা রয়াল এনফিল্ড চালিয়ে ঘুরত জাক, সেটা চালিয়ে গোটা উত্তরবঙ্গ ঘুরে এসেছিল একা। ভ্রমণে বেরনোর আগের দিন বলেছিল, "আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমি একাই একটা বাইক কিনে বাইকের লাইসেন্স বের করার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি কলকাতা শহরে।" নতুন শহরে ফ্ল্যাট ভাড়া পাওয়ার পদ্ধতিও ফ্রান্সের যে কোনও শহরের তুলনায় সহজ ছিল বলে ওর ধারণা। "পরিচিতি থাকলে এখানে অনেক কাজ সহজে হয়। ফ্রান্সের তুলনায় নিয়মকানুন এখানে অনেক সহজ। আমি এমন একটি বাড়িতে থাকতাম যেখানে কোনও কেয়ারটেকার ছিল না— ফলে আমার ফরাসি প্রতিবেশী আর বাড়িওয়ালা ছাড়া আমার যাওয়া-আসা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাত না। পরে বুঝেছিলাম, এটা কিন্তু কলকাতায় ব্যতিক্রম— এখানে গোপনীয়তা একধরনের বিলাসিতা।"

জাক-এর বাইক

ভালেরির কলকাতা-বাস যদিও সবটাই এত রূপকথার মতো ছিল না। প্রশাসনিক ধীরগতি ও আধার কার্ড সংক্রান্ত কাজকর্ম করতে ও নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে শেষমেশ কলকাতা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এছাড়াও, একজন ফ্রিল্যান্সার বা স্বনিযুক্ত কর্মী হিসেবে অর্থনৈতিক স্থিতি পাওয়া এ শহরে বড় বাধা ছিল। চাকরির সংখ্যা এখানে সীমিত, বেতনও কম।

আরও পড়ুন- মৎস্যপ্রেমে বাঙালিকেও হার মানাবে মেছো ফরাসিরা

কথার মাঝে জাক হঠাৎ বলে, "কলকাতার সবকিছুই কত রঙিন, তাই না? বাড়ির দেওয়াল, মানুষের পোশাক, আর অবশ্যই খাবার! সেই তুলনায় ফ্রান্স একঘেয়ে লাগে! এখানে এসে আমি হাতে করে খাওয়া শিখেছি, বন্ধুরা বলেছিল এভাবে খেলে খাবারের স্বাদ বাড়ে!" বাঙালি ও ভারতীয় খাবার— যেমনটা ও শুনেছিল আসার আগে, তেমনটাই পেয়েছে— স্বাদে, গন্ধে, আর রঙে সমৃদ্ধ। আর সবচেয়ে মজা পেয়েছিল, ফ্রান্সের মতো বাঙালিদের কাছেও খাবার কেবল খাদ্য নয়— এ বিষয়ে আলোচনা, সারাদিনের ভাবনাচিন্তা, পরিকল্পনা    জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ। "বাংলা আর ফ্রান্স, দু'দেশেই আমরা খাবারের জন্যই বাঁচি, উল্টোটা নয়", জানিয়েছে জাক।

ভালেরি এর সঙ্গে যোগ করে, "কলকাতায় আমি প্রথম এসেই প্রচুর উষ্ণ হৃদয়ের, কৌতূহলী ও বিশ্ব সম্পর্কে খোলা দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। শুরু থেকেই এই ব্যাপারটি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে। ফ্রান্সে আমরা এক গ্লাস ওয়াইন হাতে নিয়ে দুনিয়াকে নতুন করে ভাবতে ভালোবাসি, কলকাতায় বাঙালিরা সেটাই করে এক কাপ চায়ের আড্ডায় (যদিও সবসময় নয়)। আমাকে অবিলম্বে আপন করে নিয়েছিল কলকাতাবাসী। আমার বন্ধুরা আমায় নিয়ে যেত নানা জায়গায়— কখনও বাজার, কোনওদিন জ্যাজ শোনার ক্যাফে, ঐতিহাসিক গলিপথ, শহরের প্রথম চাইনিজ রেস্তোরাঁ, পার্ক— এই সব কিছু এক অসাধারণ উদারতায় আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখাত। আমি দেখেছিলাম বাঙালিদের নিজের শহরের প্রতি প্রেম। এরপর থেকে আমি রাতের পর রাত শহর ঘুরে বেরিয়েছি একাই। আমি অবাক হয়ে দেখতাম শিল্পের প্রতি বাঙালির গভীর সংযোগ— সঙ্গীত, গান, নৃত্য, সাহিত্য, কবিতা, সিনেমা— যেন, শিল্প ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। ইতিহাস বা জীবনযাত্রা, এমনকী ঐতিহ্যের দিক দিয়ে ইওরোপ বা বিশেষ করে ফ্রান্সের সঙ্গে যতই পার্থক্য থাকুক না কেন, আমার মনে হয়েছে, বাঙালি আর ফরাসির অনেক মিল। আমরা সংস্কৃতি, ভাষা, খাদ্যকে, শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতিকে আত্মপরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ বাহক হিসেবে চিহ্নিত করেছি। তর্কপ্রবণতা, চিন্তাধারার স্বাধীনতা, সঙ্গীত, সিনেমা— এইসবের মধ্যে নিজেদের খুঁজি। এ আমাদের মধ্যে বিস্ময়কর মিল।" যদিও দৈনন্দিন জীবনধারা, সামাজিক গতি ও পারিবারিক কাঠামোতে আছে গভীর পার্থক্য, যেগুলি কোনও দূরত্ব তৈরি না করে বরং দু'টি কৌতূহলী সংস্কৃতির মধ্যে এক সমৃদ্ধ সংলাপের জায়গা খুলে দিয়েছে বলেই মনে হয় ভালেরির।

ভালেরির স্মৃতিচারণে মনে হয়, কলকাতা এক অবিস্মরণীয় শহর, যা সময়ের বাইরে অমর হয়ে দাঁড়িয়ে অতীতের জৌলুস আর রঙ নিঃশব্দ বহন করছে। শহরের পথে হাঁটতে হাঁটতে ভালেরি গভীরভাবে লক্ষ্য করেছে  শহরটির রুক্ষ সৌন্দর্য আর পুরনো স্মৃতিমাখা আকর্ষণ। দক্ষিণ বা উত্তর কলকাতার জরাজীর্ণ বাড়ির গা বেয়ে নেমে আসা বটের ঝুরির সঙ্গে ওর কবিতায় তুলনা করেছে এই অদ্ভূত মেলানকোলিক সৌন্দর্যের। খানিক উদাস গলায় ভালেরি বলে, "ভারতে সবাই বলে, কলকাতা নাকি খুব সক্রিয় বা গতিশীল শহর নয়। আজকাল সক্রিয়তা মানে কেবল অর্থনৈতিক গতিশীলতা বোঝায়। কলকাতার প্রাণ আমি খুঁজে পাই তার অসংখ্য উৎসব পালনের আনন্দে অথবা সন্ধ্যায় এক বোতল বিয়ার নিয়ে ছাদে বসে সূর্যাস্ত আর বাদুড়ের উড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা— এগুলোই ছিল আমার কাছে সবচেয়ে উপভোগ্য সময়। এই শহর আমাকে বদলে দিয়েছে, তার বিশৃঙ্খলার জন্য নয়। সে আমাকে শিখিয়েছে ধীরে চলতে, অন্য চোখে দেখতে এবং অপূর্ণতাতেও সৌন্দর্য খুঁজে নিতে। কলকাতায় বসবাস আমার কাছে কেবল ভ্রমণের স্মৃতি নয়, এক গভীর ছাপ — রঙিন একটা ছাপ, যা বৈপরীত্য, অনুভূতি আর অস্তিত্বের কাব্যময় রূপ। আমি প্রায়ই কলকাতাকে মনে করি মিষ্টি, নস্টালজিক এমন একটি জায়গা হিসেবে, যেখানে কোনও এক সময়, আমি আমার আরেকটি 'বাড়ি' খুঁজে পেয়েছিলাম।"

আরও পড়ুন- সর্ষের ভিতর ভূত না, সর্ষের মধ্যে সুখ পেয়েছে ভোজনবিলাসী বাঙালি ও ফরাসি

ভাষাশিক্ষক জাকের নেশা নতুন দেশে নতুন ভাষা শেখা। বাঙালির ভাষা নিয়ে গর্বকে ও অচিরেই বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়— বাংলা শেখার চেষ্টা করতেই হবে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে একটা মজার তথ্য ছিল। জাক শুনেছিল, কোনও এক একটি তালিকা অনুযায়ী, বাংলা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ভাষাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়, ফরাসির পরেই। কে এই তালিকা তৈরি করেছে বা কীসের ভিত্তিতে— তা কেউ জানে না (যদিও জাক নিজের মতো করে একটা ধারণা করে নিয়েছিল)। এই কারণটুকুই যথেষ্ট ছিল ওর বাংলা শেখার জন্য। যে ক্লাসে ভর্তি হলো, দেখা গেল সেই ক্লাস ছিল মূলত বাংলা লেখা শেখার জন্য, যেখানে সবাই আগে থেকেই ভাষাটি জানত। সেই ক্লাস জাক-এর মনমতো হয়নি, যেখানে ও নিজে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বাঙালিদের ফরাসি শেখায়, সেখানে ওর এই কাঠখোট্টাভাবে ভাষা শেখার রীতি পোষায়নি। তার মধ্যেই চলে আসে কোভিড, অতএব, সেই ক্লাসের সেখানেই ইতি। তবুও স্থানীয়দের সঙ্গে কথাবার্তায় অনেকগুলি বাক্য শিখে দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত ব্যবহার করতো জাক। খুব আনন্দ পেত যখন বাজার, ট্যাক্সি বা চায়ের দোকানে একটু বাংলা বলার চেষ্টা করলেই মানুষ ওর প্রচেষ্টার অত্যন্ত আন্তরিকভাবে প্রশংসা করত। ওর মনে হতো, "আমি তখন স্রেফ এ শহরে বিদেশি ছিলাম না, হয়ে উঠেছিলাম সকলের প্রতিবেশী, আপনজন।" আলিওঁস ফ্রন্সেসের উলটো ফুটে চায়ে দোকানে গেলে দোকানি ওকে জিগেস করতেন, "একটা বিস্কুট?" 'বিস্কুট' শব্দে ভারি মজা পেত জাক। ফরাসি শব্দ জিকুই থেকে ইংরিজিতে হয়েছে বিস্কিট, বাঙালি তাকে করেছে বিস্কুট। শব্দের এমন মধুরায়ন ওকে এত প্রভাবিত করেছে যে আজও ফ্রান্সে আমাদের দেখা হলে চা দিলে বলে, "বিস্কুট দেবে?"

আমার মনে আছে, একবার আমি আর জাক হাঁটছি পার্ক স্ট্রিটে, প্রথম কোভিড বিধিনিষেধের পর আমরা বেরিয়েছি। মুক্তির আশ্বাসে ফুরফুরে মন, হঠাৎ আমি বলে উঠেছিলাম "এই তো জীবন কালীদা!" পরবর্তী আলোচনায় জাক বুঝে নিয়েছিল, বাংলায় এই অভিনব অভিব্যক্তির অর্থ (কালীদা কে, সে প্রশ্নও করেছিল!)। অনেকদিন পর একদিন আমাদের বাড়িতে বসে লুচি আর সাদা আলুর তরকারি খেতে খেতে জাক তৃপ্তিভরে বলে উঠেছিল, "এই তো জীবন কালীদা!" ভ্রমণিক আমার এই শিক্ষক-বন্ধু এখন এশিয় মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশ দেখার নেশায়। ওর হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইলের বিবরণে আজও বাংলা অক্ষরে লেখা আছে ‘পায়ের তলায় সর্ষে’। বাঙালি আর ফরাসি ভ্রমণবিলাসিতা নিয়ে এ সিরিজে আর লেখা হলো না!

More Articles