নীতিপুলিশের উলটোদিকে ভালবাসাই পুঁজি! রমরমিয়ে চলছে লভ হোটেল
Love Hotels, Japan: ফ্যান্টাসি থিমে রাজপ্রাসাদ, মহাকাশযান বা গুপ্তধনের দ্বীপের মতো সাজসজ্জা দেখা যায়, যেখানে অতিথিরা বাস্তব থেকে স্বপ্নজগতে হারিয়ে যেতে পারেন।
ভালবাসা বৈচিত্র্যময়। যুগ-যুগান্তর ধরেই ভালবাসা রঙিন আলোকে আলোকিত। ভালবাসার স্থান-কাল-পাত্র হয় না। কোনও নির্দিষ্ট গণ্ডিতে তাকে বাঁধা যায় না। তাই তো আদিম যুগ থেকেই ভালবাসার ধরণ কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না। ভালবাসা আবেগময়ী, ক্ষেত্র বিশেষে বদলে যায় আকাঙ্খা। ভালবাসার জন্য চারপাশটা হঠাৎ অন্যরকম লাগতে শুরু করে। মনে হয় ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের মতো’। কখনও মেঘ, কখনও বৃষ্টি, কখনও রোদ, আবার কখনও উত্তাল উন্মাদনার মতো। ধরুন এমন একটি ঘর, যে-ঘর সাজানো রয়েছে আপনার ভালবাসার মতো করে। যেখানে আপনি সহজেই খুঁজে পাবেন ফ্যান্টাসির উন্মাদনা, তাহলে কেমন হবে? একটা অ্যাকোরিয়ামের মতো ঘর, পায়ের নীচে খেলা করছে জ্যান্ত মাছ অথবা আপনার ঘরের মাথায় কৃত্রিম মেঘ বা তারা। আবার ঘরের ভিতরেই আস্ত একটা পার্ক! আবার কখনও আলমারি-ভর্তি বড়দের খেলনা! একটা ঘরের চারিদিক আয়না দিয়ে ঘেরা। আহা... এ যেন এক রূপকথা! আদতে এই বাস্তব রূপকথার জন্মদাতা, জাপান। এককালের গোপন ডেরা এখন পুঁজিবাদের দৌলতে ‘লভ হোটেল’ হয়ে উঠেছে।
জাপানের রাজধানী টোকিয়ো এবং ওসাকার বুকেই রয়েছে জাপানের বিখ্যাত ‘লভ হোটেল’। বহু আগে থেকে এই ধরনের হোটেলের চল থাকলেও, এই ধরনের প্রথম আধুনিক হোটেলটি জাপানে শুরু হয় ১৯৬৮ সালে ওসাকা শহরে। সেই হোটেলটির নাম ছিল ‘হোটেল লভ’। সেই থেকেই এই ধরনের হোটেলের নামকরণ। ১৬০৩ সাল থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত সময়কালকে জাপানে ‘এডো যুগ’ হিসাবে ধরা হয়। সেই এডো যুগেই শিকড় গেড়েছিল গোপন ভালবাসার অস্থায়ী ঠিকানা। সে-যুগে প্রকাশ্যে ভালবাসা খুব একটা সুনজরে দেখত না সমাজ। তাই প্রেমিক-প্রেমিকারা গোপনে মেলামেশার জন্য খুঁজে নিয়েছিল এক বিকল্প আস্তানা। সেই পথের প্রবেশ ও প্রস্থানের ঠিকানা গোপনই থাকত। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই আস্তানায় পড়ল আধুনিক প্রলেপ। নিষিদ্ধ প্রেমের ঠিকানা বদলে গেল পুঁজিবাদের দৌলতে। জাপানের লভ হোটেল সংস্কৃতি সেই চিরাচরিত ধারণাকে এক অভিনব মাত্রা দিয়েছে। যেখানে শুধু শারীরিক সম্পর্ক নয়, বরং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, থিম-ভিত্তিক ফ্যান্টাসির অভিজ্ঞতা এবং সামাজিক ট্যাবু ভাঙার এক অনন্য জায়গা তৈরি হয়েছে। আধুনিক প্রজন্মের কাছে লভ হোটেল এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ এবং সামাজিক মুক্তির নামান্তর। শুধু জাপান নয়, সারা বিশ্বেই এই প্রবণতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে এই হোটেলগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
আরও পড়ুন-
ভালোবাসা মানে ওয়ো রুম! ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে রেকর্ড হোটেল বুকিং ভারতের কোথায়?
লভ হোটেলের থিমগুলি মূলত অতিথিদের ফ্যান্টাসি পূরণের জন্য তৈরি। ফ্যান্টাসি থিমে রাজপ্রাসাদ, মহাকাশযান বা গুপ্তধনের দ্বীপের মতো সাজসজ্জা দেখা যায়, যেখানে অতিথিরা বাস্তব জীবন থেকে একেবারে অন্য জগতে হারিয়ে যেতে পারেন। স্কুল থিমের ঘরে অনেকেরই নিষিদ্ধ ফ্যান্টাসি পুরনের জন্য তৈরি করা হয় স্কুল ক্লাসরুম, বেঞ্চ এবং ইউনিফর্মের পরিবেশ। হাসপাতাল থিমের ঘরে সাদা বিছানা, চিকিৎসার সরঞ্জাম এবং নার্স-ডাক্তারের পোশাক থাকে, যারা ‘রোলপ্লে’ ভালোবাসেন এমন যুগলদের জন্য আকর্ষণীয়। জাপানে অ্যানিমে ও কার্টুন থিমের ঘর, যেমন ‘হ্যালো কিটি’ বা ‘মারিও’ সাজানো হয়, যা তরুণ দম্পতিদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। ক্যারাওকে থিমের ঘরে সাউন্ডপ্রুফ রুম, বড় স্ক্রিন এবং মিউজিক সিস্টেম থাকে, যেখানে যুগলরা গান গেয়ে মজা করতে পারেন। রোমান্টিক প্রাসাদ থিমের ঘর, গোলাপের পাপড়ি, ঝাড়বাতি এবং বিলাসবহুল বিছানায় সাজানো হয়, যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকারা শান্ত ও আরামদায়ক সময় কাটাতে পারেন। মোটর কার থিমের ঘর সাজান হয় গাড়ির গ্যারেজের মতো করে। এবং অনেক হোটেলে গাড়ি নিয়ে সরাসরি রুমে প্রবেশের সুযোগও থাকে। মহাকাশ থিমের ঘরে থাকে নীল আলো, তারার ছবি। সেখানে স্পেসশিপের আদলে পরিবেশ তৈরি হয়, যা অতিথিদের মহাশূন্যের অনুভূতি দেয়। পাইরেট থিমের ঘর জাহাজের কাঠের ফ্লোর, দড়ি এবং জলদস্যুদের সাজ-সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি হয়, যা এক অদ্ভুত রোমাঞ্চের অনুভূতি এনে দেয়। আসলে প্রতিটি থিমই অতিথিদের নতুন অভিজ্ঞতা ও ভিন্ন এক ফ্যান্টাসির জগতে নিয়ে যাওয়ার কথা ভেবে তৈরি।

জাপানে, ক্লাসরুমের আদলে লভরুম
লভ হোটেলের ধারণা এখন কেবল জাপানে সীমাবদ্ধ নয়। দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে লভ হোটেলের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। বিশ্বের থিম-ভিত্তিক হোটেল বাজার ২০২৪ সালে প্রায় ১৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ছিল এবং ২০২৫-২০৩২ সালের মধ্যে এটি ৪.৯৬% হারে বাড়বে বলে পূর্বাভাস। আজকের তরুণ-তরুণীরা আগের তুলনায় অনেক বেশি ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রতি সংবেদনশীল। পরিবার কিংবা সমাজের বাঁধাধরা নিয়মে তারা নিজেদের আবেগের প্রকাশ খুঁজে পায় না। লভ হোটেল তাদের সেই কাঙ্খিত ব্যক্তিগত স্পেস দেয় যেখানে তারা কোনও সামাজিক বিচার কিংবা লজ্জার ভয় ছাড়াই নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারে। এখানে গোপনীয়তা রক্ষার জন্য স্বয়ংক্রিয় বুকিং, গোপন প্রবেশপথ, এমনকী কখনও-কখনও সরাসরি গাড়ি থেকে রুমে যাওয়ার সুযোগও থাকে। আধুনিক প্রজন্ম অনেক বেশি ‘ফ্যান্টাসি-ড্রিভেন’। তাদের জীবনযাপন সোশ্যাল মিডিয়া, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম দ্বারা প্রভাবিত। লভ হোটেলের থিম-ভিত্তিক রুম, বিশেষ আলোকসজ্জা, কেরাওকে, রোল-প্লে উপযোগী ডিজাইন, এই সমস্ত কিছু এক অন্যরকম রোমাঞ্চ তৈরি করে, যা তাদের ফ্যান্টাসি পূরণের সুযোগ দেয়।
ভারতে এখনও লভ হোটেল সংস্কৃতি তেমন প্রসার লাভ করেনি। ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে মাত্র দুইটি লভ হোটেল আছে—একটি কলকাতায়, আরেকটি নভি মুম্বাইতে। তবে, ঘন্টা-ভিত্তিক বুকিংয়ের প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়েছে। StayUncle বা OYO-এর মতো প্রতিষ্ঠান ‘ঘণ্টা রুম’ সংস্কৃতি চালু করেছিল, যেখানে অবিবাহিত যুগলরা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই নিরাপদে সময় কাটাতে পারত। যদিও সামাজিক চাপে StayUncle বন্ধ হয়ে যায়, তবুও ভারতের মেট্রো শহরগুলিতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই চাহিদা এখনও প্রবল।
আরও পড়ুন-
জাপানি জুডো ক্ষীণ সুতোয় বেঁধে দিয়েছিল রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিতকে
সমীক্ষা বলছে, জাপানে লভ হোটেলের নিয়মিত ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৭০% যুগল অবিবাহিত, এবং প্রায় ২০% বিবাহিত দম্পতি, যারা নিজেদের সম্পর্ককে নতুন করে আবিষ্কার করতে চান। যখন লভ হোটেল বিশ্বের বাজারে তার চিহ্ন রেখেছে ঠিক সেই সময় ভারতের কিছু রাজ্যে অবিবাহিত যুবকযুবতীদের একসঙ্গে হোটেলের ঘরে থাকা নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দলের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ করার মতো। অনেক সময় দেখা গিয়েছে বেশ কিছু ধর্মীয় সংগঠন যুবকযুবতীদের প্রকাশ্যে হেনস্তা করেছে। অনেক সময় ধর্মীয় মেরুকরণেরও চেষ্টা হয়েছে। ভারতে অবিবাহিত যুবক-যুবতীদের হোটেলে থাকার বিষয়ে কোনও আইনগত নিষেধাজ্ঞা নেই, তবুও বহু সময় সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপের ফলে তাদের এই অধিকার সীমিত হয়ে পড়ে। বেশ কিছু রাজ্যে ‘নৈতিকতা রক্ষার’ নামে মোরাল পুলিশিং-এর ঘটনা বেশি ঘটে। অনেক সময় স্থানীয় সমাজের কিছু গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংগঠন অবিবাহিত যুগলের হোটেলে থাকা নিয়ে আপত্তি তোলে এবং হোটেল মালিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে OYO-র মতো অনেক হোটেল কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়িক সুরক্ষার কথা ভেবে, অবিবাহিত যুগলদের বুকিং বাতিল করে দেয় বা প্রবেশে বাধা দেয়। উত্তরপ্রদেশের মীরাট, গুজরাটের কিছু শহর, মধ্যপ্রদেশের নির্দিষ্ট এলাকা—এই ধরনের রেড বা চেকিংয়ের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। উত্তর প্রদেশের কিছু এলাকায় ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে OYO হোটেলগুলি অবিবাহিত যুগলদের জন্য ‘বিবাহ সম্পর্ক প্রমাণ’বাধ্যতামূলক করেছে। যদিও আদালতের রায় বলছে, অবিবাহিত যুগলের একসঙ্গে থাকা বেআইনি নয়, কিন্তু সামাজিক বাস্তবতায় ‘অনৈতিক আচরণ’ বা ‘সামাজিক অপমান’-এর ভয় দেখিয়ে এই অধিকারকে বারবার খর্ব করা হয়। বেশ কিছু রাজ্যে বারংবার এই ধরনের ঘটনা ঘটে, কারণ এখানে ঐতিহ্য, সংস্কার ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে, OYO বা এই ধরনের হোটেল সংস্থাগুলি আইনি অধিকার থাকলেও, সমাজের তথাকথিত নৈতিকতার দোহাইয়ে নিজেরাই অবিবাহিতদের থাকার অনুমতি সীমিত করে দেয়।
শুরুতেই বলেছি, ভালবাসা বৈচিত্রময়। সেই বৈচিত্রের উদাহরণ হল ‘দ্য ওয়াল্ড অফ হোটেল’-এর নির্মাণপ্রনালী। দ্য ওয়াল্ড অফ হোটেল শুধু একটি হোটেল নয়, এটি একটি শক্তিশালী প্রতিবাদের ভাষা। ইংরেজ-শিল্পী ব্যাঙ্কসি নির্মিত এই ব্যতিক্রমী হোটেলটি ফিলিস্তিনের বেথলেহেম শহরে অবস্থিত, যেখানে জানলা দিয়ে বাইরের পৃথিবী নয়, বরং দেখা যায় কেবল ইজরায়েলি বিভাজন প্রাচীর। প্রতিটি ঘরের জানলা থেকে ধূসর, নির্মম কংক্রিটের দেয়াল স্পষ্ট দেখা যায়, যার ওপারে শুধুই বিভাজন, সেনা-পাহারা, এবং কাঁটাতারের বেড়া। ব্যাঙ্কসি ইচ্ছাকৃতভাবেই এই হোটেলটিকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে পর্যটকরা এখানে এসে আরাম খোঁজার বদলে সংঘাত, দখলদারিত্ব এবং মানবাধিকারের প্রশ্নগুলির সামনে দাঁড়িয়ে যান। তাই একে বলা হয় ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ দৃশ্যের হোটেল’, যেখানে জানলা থাকলেও মুক্তির নয়, বরং প্রতিবাদের দৃশ্য ধরা দেয়।

জাপানে, স্পেসশিপের আদলে লভরুম
লভ হোটেল এবং দ্য ওয়াল্ড অফ হোটেল-এর মধ্যে সমাজভিত্তিক পার্থক্য অত্যন্ত গভীর। লভ হোটেল সাধারণত ব্যক্তিগত আনন্দ, ফ্যান্টাসিপূরণ এবং গোপন সম্পর্কের আশ্রয়স্থল। এখানে মানুষ সমাজের চোখ এড়িয়ে, স্বল্প সময়ের জন্য মুক্তির স্বাদ নিতে আসেন। লভ হোটেল তাই এক ধরনের ব্যক্তিগত অবকাশ—সেখানে সমাজের নিয়মের বাইরে গিয়ে নিজস্ব ইচ্ছা মেটানো যায়। অপরদিকে, দ্য ওয়াল্ড অফ হোটেল কোনও ব্যক্তিগত মুক্তির জায়গা নয়, বরং এক নির্মম সামাজিক সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মঞ্চ। এই হোটেলে প্রবেশ মানে নিজের অস্বস্তি, রাজনীতি, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তোলা—এই দেওয়াল কেন? এই সীমারেখা কার জন্য? লভ হোটেল যেখানে পালানোর প্রতীক, দ্য ওয়াল্ড অফ হোটেল সেখানে প্রতিবাদের প্রতীক। একদিকে ব্যক্তিগত ইচ্ছার মুক্তি, অন্যদিকে সমাজের বিবেক জাগানোর দায়। এই দুই হোটেলই ভিন্ন-ভিন্নভাবে সমাজের গভীরে প্রবেশ করে—একটি আত্মগোপনের পথ, অপরটি নিজেরই মুখোমুখির দাঁড়ানোর দরজা।
বিশ্বের লভ হোটেল শিল্প শুধু সম্পর্কের ব্যক্তিগত পরিসরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আজ একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক খাত। জাপান এই শিল্পের প্রধানকেন্দ্র। সেখানে বর্তমানে প্রায় ৩৭,০০০ লভ হোটেল চালু রয়েছে এবং প্রতি বছর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বার এই হোটেলগুলোতে মানুষ প্রবেশ করে। অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ১৪ লক্ষ ভিজিটর লভ হোটেল ব্যবহার করেন। গবেষণা অনুযায়ী, ২০০৯ সালে এই শিল্পের বার্ষিক রাজস্ব ছিল প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা একই সময়ে জাপানের অ্যানিমে শিল্পের রাজস্বের তুলনায় দ্বিগুণ। এই বিশাল বাজার এতটাই গুরুত্ব পেয়েছে যে, জাপানে অনেক লভ হোটেল নগদ প্রবাহ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করার জন্য সিকিউরিটাইজ করা হয়, যা এই শিল্পের পেশাদার আর্থিক অবকাঠামো তৈরি করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে থিম-ভিত্তিক হোটেল বা ‘এক্সপেরিয়েন্স হোটেল’-এর বাজারও দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে। সমীক্ষা বলছে, ২০২৩ সালে থিম-ভিত্তিক হোটেল শিল্পের বাজার ছিল প্রায় ১২.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ১৩.২০ বিলিয়ন ডলার। ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে এই শিল্পের বাজার পৌঁছবে ১৬.২১ বিলিয়ন ডলারে এবং বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে প্রায় ৫.৩%। অন্য এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই প্রবৃদ্ধি ২০২৯ সাল নাগাদ পৌঁছতে পারে ২৩.৭ বিলিয়ন ডলারে, যেখানে বার্ষিক গড়বৃদ্ধি (CAGR) হবে প্রায় ৬.৫%। বিশ্বের লভ হোটেল এবং থিম হোটেল শিল্পে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল এখন সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ ক্ষেত্র। ২০২৪ সালে এই অঞ্চলে হোটেল শিল্পে মোট বিনিয়োগ হয়েছে ১২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৪.৩% বেশি। শুধু জাপানেই ২০২৪ সালে হোটেল বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই শিল্পে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বাড়ার মূল কারণ হল তরুণ প্রজন্মের স্বল্প সময়ের থাকার চাহিদা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার গুরুত্ব এবং অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক পর্যটনের উত্থান।