'ম্যাডম্যান থিওরি' বা 'পাগল তত্ত্ব'! ট্রাম্পের খেয়ালখুশি সিদ্ধান্ত নিয়ে যা বলছেন বিশ্লেষকরা

Trump: ইরান আক্রমণ থেকে শুরু করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি-কে আক্রমণ সবটাই ছিল অপ্রত্যাশিত। এই সিদ্ধান্তগুলিকে 'ম্যাডম্যান থিওরি' বা 'পাগল তত্ত্ব' বলছেন বিশ্লেষকরা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইচ্ছেমতো একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এমনটাই দাবি করছেন বিশ্লেষকরা। ইরান আক্রমণ থেকে শুরু করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি-কে আক্রমণ সবটাই ছিল অপ্রত্যাশিত। এই সিদ্ধান্তগুলিকে 'ম্যাডম্যান থিওরি' বা 'পাগল তত্ত্ব' বলছেন বিশ্লেষকরা। খবর বিবিসি-র।

ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুই করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের আক্রমণ করে। কানাডা-র বিরুদ্ধে বলেছিলেন, কানাডা-কে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ড দখল করতে প্রয়োজনে সামরিক শক্তির ব্যবহার করা হতে পারে। গ্রিনল্যান্ড হলো আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল।

ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আবার পানামা খালের মালিকানা ফিরিয়ে নিতে হবে। নেটো সনদের অনুচ্ছেদ ৫-এ বলা হয়েছে, প্রতিটি সদস্য দেশকে অন্য সদস্য দেশের প্রতিরক্ষায় সাহায্য করতে হবে। তবে ট্রাম্পের একের পর এক বক্তব্য এই প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে, সম্প্রতি ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের সময় ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি এই সংঘাতে ইজরায়েলের সঙ্গে মিলে ইরান আক্রমণ করবেন কিনা? ট্রাম্প বলেছিলেন, "আমি এমনটা করতে পারি আবার না-ও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করব।" হোয়াইট হাউস বিবৃতি দিয়ে জানায়, ইরানের সঙ্গে বোঝাপড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে পথে হাঁটবেন কি না, তা আগামী দু-সপ্তাহের মধ্যে জানা যাবে। কিন্তু সেই ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ইরানে হামলা চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুন-Trump Big beautiful bill: ট্রাম্পের নতুন বিগ বিউটিফুল বিল কী?

অতীতের ঘটনাগুলি থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্প যে কোনো সময় তাঁর মত বদলান। নিজের কথাই আবার অস্বীকারও করেন। ট্রাম্প তাঁর খামখেয়ালি আচরণকে বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছেন। তিনি এটিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই ব্যবহার করছেন। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলোও এভাবেই নিচ্ছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন যিনি অনিশ্চয়তায় কাজ করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ১৯৬৮ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান করতে, তিনিও ইচ্ছে মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। নিক্সন যখন দেখলেন উত্তর ভিয়েতনামের শত্রুরা অপ্রতিরোধ্য, তখন এই সিদ্ধান্ত নেন। নটর ডেম ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল ডেশ বিবিসি-কে বলেন, "এক সময় নিক্সন তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার-কে বলেছিলেন, তোমার উচিত উত্তর ভিয়েতনামী আলোচকদের বলা যে নিক্সন একজন বদ্ধ উন্মাদ, কেউ জানে না সে কী করবে, তাই উচিত হবে দ্রুত একটা চুক্তিতে আসা, নাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে'।" এই কৌশলকেই 'ম্যাডম্যান থিওরি' বা 'পাগল তত্ত্ব' বলে।

বিবিসি বলছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এটিকে 'ম্যাডম্যান থিওরি' বা 'পাগল তত্ত্ব' বলে উল্লেখ করছেন। একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝাতে চাইছে, তিনি তাঁর খেয়াল খুশি মতো যেকোনো কিছু করতে পারেন। লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স-এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোভিট্‌জ বিবিসি-তে দাবি করেছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তগুলি অনেকটাই নির্ভর করে তাঁর পছন্দ এবং মেজাজের উপর।

আরও পড়ুন- India-US trade: ট্রাম্পের বাণিজ্য চুক্তি! কেন সমস্যায় ভারত?

এই কৌশলেই ট্রাম্প তাঁর শত্রুদের উপর একধরনের চাপ সৃষ্টি করছেন। তাঁর মর্জি মতো কাজ করতে বাধ্য করছেন। প্রশ্ন উঠছে, শত্রুদের মধ্যে কি এর প্রভাব পড়ছে? বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এমন খেয়াল খুশি সিদ্ধান্তে প্রতিপক্ষও এখন আর বিভ্রান্ত হচ্ছে না বরং তারাও বুঝতে পারছে ট্রাম্প কী করতে পারেন।

যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ওভাল অফিসে আসার পর ট্রাম্প খুব অপমান করেছিলেন। এই নিয়ে বিতর্কেরও তৈরি হয়েছিল। পরে দেখা যায়, জেলেনেস্কি যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ দিতে রাজি হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের ইরান আক্রমণে উল্টো প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত। আর এটি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে আরও বেশি আগ্রহী করে তুলবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগের নেতাদের বৈদেশিক সংঘাতে জড়ানোর নীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তিনি নিজেকে ‘শান্তির দূত’ বলেও দাবি করেন। ট্রাম্পের হামলার পর ইরানের কাতার হামলায় আরও উদ্বেগ বাড়ছিল। এই পরিস্থিতিতে তিনি যদি আবার হামলা চালাতেন তাহলে দলের ভেতরেই তাঁকে বিদ্রোহের মুখে পড়তে হতো। এই সকল পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেছিলেন।

এইভাবেই তিনি খেয়ালখুশি মতো একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপর কী হবে, তাই এখন দেখার।

More Articles