বরাতজোরে বাঁচলেন নেতানিয়াহু! শেষরক্ষা হবে?

Israel-Palestine conflict : বিরোধী দলগুলো আশা করেছিল, নেতানিয়াহুর জোটের মধ্যে থাকা আল্ট্রা-অর্থোডক্স দলগুলোর ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে তারা এই সংসদ ভাঙার প্রস্তাবটি পাস করাতে পারবে।

ইজরায়েলের বিরোধী দলগুলো পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব এনে নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা করেছিল। নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ৬১-৫৩ ভোটে জয়ী হলো। নেতানিয়াহুর জোটের দু'জন সদস্য তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও, শেষ মুহূর্তে 'আল্ট্রা-অর্থোডক্স' বা অতিরক্ষণশীল দক্ষিণপন্থী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা নেতানিয়াহুকে রক্ষা করল।

ইজরায়েলের পার্লামেন্ট, যা নেসেট নামে পরিচিত, ১২০ আসনের সমন্বয়ে গঠিত। বিরোধী দলগুলো আশা করেছিল, নেতানিয়াহুর জোটের মধ্যে থাকা আল্ট্রা-অর্থোডক্স দলগুলোর ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে তারা এই সংসদ ভাঙার প্রস্তাবটি পাস করাতে পারবে। এই দলগুলো সামরিক কর্মকাণ্ড থেকে তাদের সম্প্রদায়ের ছাত্রদের ছাড়ের ইস্যুতে নেতানিয়াহুর সঙ্গে গত কয়েকমাস দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিল। ইজরায়েলে সামরিক কাজে যোগদান বাধ্যতামূলক হলেও, আল্ট্রা-অর্থোডক্স ইহুদি ছাত্ররা দীর্ঘদিন ধরে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে আসছে। ২০১৭ সালে ইজরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট এই ছাড়কে অসাংবিধানিক ঘোষণা করলেও, এখনও নতুন আইন পাস হয়নি।

“এটাই নেতানিয়াহুর সরকারকে প্রতিস্থাপনের জন্য জরুরি সময়” বলেছেন ইজরায়েলের বিরোধী নেতা মেরাভ মাইকেলি। তিনি এই সরকারকে “বিষাক্ত ও ক্ষতিকর” বলে সমালোচনা করেছেন। বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বামপন্থী, মধ্যপন্থী দলগুলো নেতানিয়াহুর ডানপন্থী জোটের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, পাখির চোখ ছিল আল্ট্রা-অর্থোডক্স ভোট। তবে ভোটে দেখা গেছে, আল্ট্রা-অর্থোডক্স দলগুলোর বেশিরভাগ সদস্য বিরোধীদের পক্ষে ভোট দেননি।

নেতানিয়াহুর জোটে শাস ও ইউনাইটেড তোরাহ জুডাইজম নামে দু'টি আল্ট্রা-অর্থোডক্স দল রয়েছে, যারা যথাক্রমে ১১ ও ৭টি আসন নিয়ন্ত্রণ করে। এই দলগুলোই সামরিক ছাড়ের ইস্যুতে তাদের সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষায় চাপ দিয়ে আসছিল। ভোটের আগে নেতানিয়াহুর প্রতিনিধিরা এই দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে সমঝোতায় পৌঁছন! আলাপ আলোচনাই দলগুলিকে ঐক্য বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।

ইজরায়েলের যোগাযোগমন্ত্রী শ্লোমো কার্হি ভোটের পর বলেন, “আমাদের জোট সরকার এগিয়ে চলছে এবং এখন তা আগের চেয়ে শক্তিশালী।” তবে স্পষ্টতই এই জয় নেতানিয়াহুর চ্যালেঞ্জ কমায়নি। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, এখন নির্বাচন হলে তার জোট ক্ষমতা হারাতে পারে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা ধাপে ধাপে হ্রাস পেয়েছে। বহু ইহুদিই এই যুদ্ধ চায় না। এছাড়া, দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর বিচার চলছে।

এই ভোট নেতানিয়াহুকে সাময়িক স্বস্তি দিলেও, জোটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিরোধীদের চাপ অব্যাহত থাকবে। গাজার চলমান যুদ্ধ এবং সামরিক সেবার ইস্যু ভবিষ্যতে তার সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইজরায়েলের রাজনৈতিক মঞ্চে নেতানিয়াহুর এই টিকে থাকার লড়াইয়ের মেয়াদ কতদিন, জানতে চায় বিশ্ব।

More Articles