পহেলগাঁও হামলার আগে ২০০০ সাল থেকে যেভাবে জঙ্গিদের নিশানা হয়েছে সাধারণ মানুষ
Pahalgam Attack: কাশ্মীরের মানুষকে ব্যবহার করেই টিআরএফ এমন হামলা চালাল অথচ ভারতের প্রতিরক্ষাবাহিনীর কাছে কোনও খবর নেই?
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন নিরীহ পর্যটককে হত্যা করেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের জঙ্গিরা। এই বছর পর্যটকদের লক্ষ্য করে সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক আক্রমণ তো বটেই, সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া সমস্ত জঙ্গিহামলার মধ্যে নৃশংসতম হয়ে উঠেছে এই ঘটনা। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটানোর দাবি করেছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এই ঘটনার পরেও শ্রীনগর যাওয়ার আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আবারও সেই দাবি তুলেছেন। X-এ একটি পোস্টে অমিত শাহ বলেছেন, "জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনায় মর্মাহত। মৃতদের পরিবারের সদস্যদের পাশে আছি। সন্ত্রাসের এই জঘন্য কাজে জড়িতদের রেহাই দেওয়া হবে না। আমরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ করব।" প্রশ্ন উঠছে, যে সাধারণ মানুষ সরকারের দাবির উপর আস্থা রেখে 'নিরাপদ' কাশ্মীরে ছুটি কাটাতে গেছিলেন, তাঁদের প্রতিশ্রুতিভঙ্গের দায় সরকার নেবে? কেন এখনও এত দুর্বল কাশ্মীরের নিরাপত্তা? কাশ্মীরের মানুষকে ব্যবহার করেই টিআরএফ এমন হামলা চালাল অথচ ভারতের প্রতিরক্ষাবাহিনীর কাছে কোনও খবর নেই? ২০০০ সাল থেকে টানা হামলা চলছে সাধারণ মানুষের উপর। কাশ্মীর শান্ত হয়নি। কেবল ২০০৬ থেকে ২০১৬, এই ১০ বছরের পর্বে তেমন বড় আক্রমণ ঘটেনি।
২০০০ সাল থেকে কাশ্মীরে সাধারণ নাগরিক ও সেনার উপর যে যে বড় সন্ত্রাসবাদী হামলাগুলি হয়েছে:
২১ মার্চ, ২০০০
অনন্তনাগের ছাটিসিংপোরায় বন্দুকধারী জঙ্গিদের হাতে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়। ২১ মার্চ রাতে অনন্তনাগ জেলার ছাটিসিংপোরা গ্রামে সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে জঙ্গিরা হত্যা করে।
অগাস্ট ২০০০
নুনওয়ান বেস ক্যাম্পে সন্ত্রাসবাদী হামলায় অমরনাথের তীর্থযাত্রী সহ ৩২ জন নিহত হন জঙ্গিদের গুলিতে
জুলাই ২০০১
আবার নিশানায় অমরনাথ তীর্থযাত্রীরা। অনন্তনাগের শেষনাগ বেস ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়।
১ অক্টোবর, ২০০১
জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা ভবনের বাইরে একটি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ ঘটে৷ আত্মঘাতী ওই সন্ত্রাসী হামলায় ৩৬ জন নিহত হন।
২০০২
চন্দনওয়ারি বেস ক্যাম্পে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ১১ জন অমরনাথ তীর্থযাত্রী নিহত হন।
আরও পড়ুন- কাশ্মীরে নিরস্ত্র পর্যটকদের উপর মর্মান্তিক হামলার নেপথ্যে TRF! কারা এই গোষ্ঠী?
২৩ নভেম্বর, ২০০২
শ্রীনগর থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে লোয়ার মান্ডায় একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটে৷ জম্মু-ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে নয়জন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মী, তিন মহিলা এবং দুই শিশু সহ ১৯ জন প্রাণ হারান।
২৩ মার্চ, ২০০৩
কাশ্মীরের দক্ষিণে সোপিয়ান এলাকার নাদিমার্গ গ্রামে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হাতে নিহত হন ২৪ জন। হামলার নিশানায় ছিলেন ১১ জন কাশ্মীরি পণ্ডিতের পরিবার। পুলওয়ামা জেলার এই গ্রামে নিহতদের মধ্যে ১১ জন ছিলেন মহিলা এবং ২ জন শিশু।
১৩ জুন, ২০০৫
শ্রীনগর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে পুলওয়ামায় একটি আরডিএক্স ভর্তি ট্রাকে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ হয়। পুলওয়ামার একটি সরকারি স্কুলের সামনে একটি ভিড় বাজারে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি বিস্ফোরণে দুই স্কুলপড়ুয়া শিশু এবং তিনজন সিআরপিএফ অফিসার সহ ১৩ জন সাধারণ মানুষ নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হন৷
১২ জুন, ২০০৬
কুলগামে নয়জন নেপালি ও বিহারি শ্রমিক নিহত হন।
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
উরিতে ভারতীয় সেনা ব্রিগেড সদর দফতরে চারজন জইশ-ই-মহম্মদ সন্ত্রাসবাদী হামলা চালালে ১৯ জন সেনা নিহত এবং ৩০ জন আহত হন।
১০ জুলাই, ২০১৭
দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বোয়াটেং গ্রামে পুলিশ এবং জঙ্গিদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে সাতজন তীর্থযাত্রী নিহত হন।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
পুলওয়ামা জেলার জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় মহাসড়কের লেথাপোরাতে এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নিরাপত্তা কর্মীদের গাড়ির কনভয়ে আক্রমণ চালায় যাতে ৪০ জন সেনা নিহত হন।