পুলিশের নজর এড়িয়েই বৈসরনে পর্যটকরা! নিরাপত্তার যে যে গাফিলতি স্বীকার কেন্দ্রের

Amit Shah on Kashmir: কেন পুলিশের অনুমতি ছাড়াই এমন বিপজ্জনক জায়গায় পর্যটকদের প্রবেশ সম্ভব হচ্ছে? এর দায় কার?

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে নৃশংস হামলায় নিরস্ত্র সাধারণ পর্যটকদের প্রাণ গেছে। গত মার্চ থেকেই পর্যটকদের ঢল নেমেছিল ভূস্বর্গে। ভারত সরকার ২০১৯ সালের অগাস্টে ৩৭০ ধারা বিলোপের পরেই জোর দিয়েছিল, কাশ্মীর এখন সন্ত্রাসমুক্ত। কাশ্মীরকে ভারতের অন্য যে কোনও অংশের মতোই নিরাপদ বলে দাবি করা হয়েছিল। সাধারণ মানুষ সেই ভরসাতেই কাশ্মীরমুখী হচ্ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কাশ্মীরে যখন এত পর্যটক, এমন 'পিক সিজনে' কেন নিরাপত্তায় এমন গাফিলতি? পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণের বৈসরন উপত্যকায় কেন কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই? ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কি এতই দুর্বল?

গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তার ব্যর্থতা যে ছিল, তা মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশই। ইন্ডিয়া টুডে-র এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে এই নৃশংস ঘটনার কয়েকদিন আগে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একজন সন্ত্রাসবাদী সন্ত্রাসী হামলার ইঙ্গিত দিয়ে মন্তব্য করেছিল কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনী তাতে আমল দেয়নি। ফলে গুরুতর ফল ভোগ করতে হলো সাধারণ মানুষদের।

আরও পড়ুন- সমস্ত প্রবেশ নিষিদ্ধ! পাকিস্তানকে ‘জব্দ’ করতে যে যে সিদ্ধান্ত নিল ভারত সরকার

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই আক্রমণটি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ছক কষে পরিকল্পিত উপায়েই করা হয়। পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাসীদের আন্তর্জাতিক মাথারা এই জঙ্গিদের 'রিয়েল টাইম' নির্দেশনা দিয়েছিল। গোয়েন্দা সূত্র আরও জানাচ্ছে, হামলার সঙ্গে জড়িত জঙ্গিরা অস্ত্র ব্যবহারে সুপ্রশিক্ষিত ছিল। ব্যাপক পর্যটকদের সমাগম, জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও বৈসরনে নিরাপত্তা বাহিনী কম মোতায়েন রয়েছে এমন বিস্তারিত তথ্য তাদের কাছে ছিল। আক্রমণকারী সন্ত্রাসীদের মাথায় হেলমেট-মাউন্ট ক্যামেরা ছিল। সম্ভবত পর্যটকদের হত্যাকাণ্ড রেকর্ড করে সেই ফুটেজ সহযোগী সন্ত্রাসীদের কাছে পাঠানোর উদ্দেশ্যেই এই ব্যবস্থা হয়েছিল।

তাহলে কি ধরে নিতে হবে এই হামলা চাইলে এড়তেই পারত কেন্দ্রের বিজেপি সরকার? প্রতিরক্ষার গাফিলতিতেই প্রাণ গেছে সাধারণ মানুষের?

বৃহস্পতিবার একটি সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছে। সেখানে একাধিক গাফিলতির কথা 'মেনে' নিয়েছে সরকার। কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, বৈসরন তৃণভূমিতে পর্যটকদের যাওয়ার জন্য কোনও পুলিশি ছাড়পত্রই ছিল না। তিনি আরও বলছেন, এই তৃণভূমিটি প্রধান সড়ক থেকে বেশ দূরে। কেবল পায়ে হেঁটে বা টাট্টুঘোড়ায় চেপেই এখানে প্রবেশ করা যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। সুতরাং প্রশ্ন উঠছে যে, তৃণভূমিতে হামলা করা সহজ তা জঙ্গিদের জানাই ছিল। তারা এই পথটির সুব্যবহার করেছে। কেন পুলিশের অনুমতি ছাড়াই এমন বিপজ্জনক জায়গায় পর্যটকদের প্রবেশ সম্ভব হচ্ছে? এর দায় কার?

বিরোধী সূত্রের মতে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সর্বদলীয় বৈঠকে জানিয়েছিলেন, পুলিশি অনুমতি ছাড়াই বৈসরম তৃণভূমি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এবং দুই দিনে হাজারেরও বেশি পর্যটক এখানে গেছেন। লোকসভা সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি নিরাপত্তা কর্মীদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে কেন এত দেরি হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্ন করেছেন, সিআরপিএফ ইউনিটকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা। সেই প্রশ্নের উত্তরে অমিত শাহ বলেছেন, ঘটনার দিন বৈসরনে কোনও নিরাপত্তাই ছিল না। সেদিন পহেলগাঁওয়ে ৫০০ জন নিরাপত্তা কর্মী উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁদের ওই ঘটনাস্থলে যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লেগে যায়।

আরও পড়ুন- কেন পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকাকেই বেছে নিল জঙ্গিরা?

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেছেন, হামলার আগে অন্তত পাঁচ দিন বৈসরনের আশেপাশে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও যোগাযোগ সংকেত খুঁজে পাওয়া যায়নি। সন্ত্রাসীরা কোনও যোগাযোগ যন্ত্র ব্যবহার করেনি।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যে সন্ত্রাসবাদীরা এতদিন রেইকি করে পরিকল্পনা প্রস্তুত করল, নতুন কৌশল ব্যবহার করে, আমেরিকান অস্ত্র ব্যবহার করে, আফগানিস্তান থেকে আসা বিভিন্ন গোলাবারুদ ব্যবহার করে নিজেদের অভিযান সফল করল, তাহলে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কী করল এতদিন ধরে? তাদের এসব আটকানোর কোনও প্রস্তুতিই নেই?

লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি বলছেন যে, সুস্পষ্টভাবেই নিরাপত্তা ব্যর্থতা জনিত ঘটনা। হাজার হাজার লোক পুলিশের অজান্তেই একটি এলাকায় ঘোরাফেরা করছে, কাশ্মীরের মতো সংবেদনশীল জায়গায় কীভাবে এমন ঘটনা ঘটছে তা সত্যিই প্রশ্ন জাগায়। সমস্ত দলই সর্বসম্মতভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কেন্দ্রকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিরোধীদের তরফে এই ঘৃণ্য হামলার নেপথ্যের কারণ সন্ধানে যুক্তিপূর্ণ প্রশ্নগুলি এলে হয়তো কাশ্মীরের নিরাপত্তার ফাঁক আরও স্পষ্ট হবে। আরও স্পষ্ট হবে, শুধুমাত্র সরকারি প্রতিশ্রুতিতে ভরসা করে যে সাধারণ মানুষরা কাশ্মীর যাচ্ছেন, সরকার কি আদৌ তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত?

More Articles