"ছেলে বলল, মা... গুলি!" পহেলগাঁওয়ের বিভীষিকা ভুলতে পারছেন না নিহত বিতানের স্ত্রী

Pahalgam Victim: সোহিনীর দাবি, সন্ত্রাসবাদীরা গুলি করার আগে পর্যটকদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করেছিল, "এখানে হিন্দু কারা আছে?"

ফ্লোরিডা থেকে এসেছিলেন নিজের বাড়িতে, কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা পাটুলিতে। এসেই কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা। স্ত্রী সোহিনী আর সন্তানকে নিয়ে বিতান অধিকারী কাশ্মীর ঘুরতে গেছিলেন, তবে আর ফেরেননি। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন যে পর্যটকরা, বিতানও ছিলেন তাঁদের মধ্যে। মঙ্গলবার এই মর্মান্তিক ঘটনার আগেও বাড়িতে ফোন করেছেন, কথা বলেছেন বিতান। পরমুহূর্তেই সব শেষ। বিতান ও তাঁর স্ত্রী কর্মসূত্রে থাকতেন ফ্লোরিডায়। গত ৮ এপ্রিল তিন বছরের পুত্র হৃদানকে নিয়ে কলকাতায় আসেন তাঁরা। ১৬ এপ্রিল তিনজনে জম্মু-কাশ্মীর বেড়াতে যান। সেখানে স্ত্রী সোহিনীর চোখের সামনে জঙ্গিরা গুলি করে তাঁর স্বামীকে!

বছর চল্লিশের বিতান অধিকারী ছিলেন পেশায় প্রকৌশলী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেসের হয়ে কাজ করতেন তিনি। গত বুধবার, কলকাতায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। ঘুরতে গিয়েছেন, আনন্দ করছেন, এমন সময়ে হামলা! তাও স্ত্রী আর পুত্রের সামনে গুলি! এক নিমেষে পায়ের তলার মাটি সরে যায়, মাথা তোলপাড় হয়ে যায়! এই 'ট্রমা' আজীবন তাড়া করে বেড়াবে সোহিনীকে, তাঁর পুত্রকে।

সোহিনী সেই দিনের কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, "আমার ছেলে বলল মা...আওয়াজ...গুলি!" গুলির শব্দে তাঁদের ছেলে হৃদান চরম ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তারপর সন্তান আর স্ত্রীর সামনেই গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন বিতান।

"আমরা বুঝতে পারিনি। আমরা কিছু আওয়াজ শুনোট পাচ্ছিলাম। আমার স্বামী বলছিলেন, কোথাও আতশবাজি ফাটছে হতে পারে। বিতান আমার হাত ধরে দৌড়তে গেল। আমি ঘুরে দেখলাম, একজনকে গুলি করা হয়েছে। অনেকে নীচে পড়ে গেছে। আমরা আমাদের মাথা নিচু করে রেখেছি,” চোখের সামনে ঘটনাগুলোকে একটু একটু করে বর্ণনা করেছেন সোহিনী।

আরও পড়ুন- পুলিশের নজর এড়িয়েই বৈসরনে পর্যটকরা! নিরাপত্তার যে যে গাফিলতি স্বীকার কেন্দ্রের

সোহিনী বলছেন, মিনি সুইজারল্যান্ড বৈসরন তৃণভূমিতে ছুটি কাটানোর ওই নরম মুহূর্তে সশস্ত্র জঙ্গিরা কাছে এসে তাঁদের ধর্মীয় পরিচয় জানতে চায়। সোহিনীর দাবি, সন্ত্রাসবাদীরা গুলি করার আগে পর্যটকদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করেছিল। "এখানে হিন্দু কারা আছে? জিজ্ঞেস করেছিল ওরা এবং তারপরেই গুলি করে। আমি ভেবেছিলাম আমার স্বামী বোধহয় বেঁচে যাবে,” বলছিলেন সোহিনী।

সোহিনী আরও জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি ছিল। "ঘটনাস্থলে কোনও পুলিশ বা নিরাপত্তা ছিল না। ওরা একজনকে জিজ্ঞেস করেছিল, চাচা, আপনি হিন্দু না মুসলিম? তারপর তারা লোকটিকে গুলি করে। অন্য একজনকে জিজ্ঞেস করেছিল সে কলমা পড়তে পারে কিনা। যখন পড়তে পারল না তখনই তাকে গুলি করল। এমনকী কেউ যাতে বেঁচে না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য মৃতদেহগুলোকেও গুলি করে ওরা,” দাবি সোহিনীর।

সাম্প্রতিককালে এই অঞ্চলের সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণগুলির মধ্যে একটি ছিল পহেলগাঁও হামলা।পাকিস্তান-সমর্থিত লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

More Articles