কৌশল বদল, যেভাবে ভারতে গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে পাকিস্তান

বছরের শুরুতেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এক নেপালি নাগরিককে গ্রেফতার করার পর পশ্চিম এশিয়া, নেপাল ও ভারত জুড়ে পাকিস্তানি গুপ্তচরবৃত্তির নেটওয়ার্ক সামনে এসেছে। এই নেটওয়ার্ক ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সংবেদনশীল ও গোপন তথ্য পা...

গুপ্তচরবৃত্তির কৌশল বদলাচ্ছে পাকিস্তান। সীমান্ত পার করা অনুপ্রবেশকারীদের পরিবর্তে বিদেশী নাগরিকদের মাধ্যমে ভারতে গুপ্তচরবৃত্তি ইসলামাবাদের। নেপাল ও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলি থেকে যারা সীমান্ত পার করে ভারতে অবাধ যাতায়াত করতে পারে, তাদের নিয়োগ করছে পাকিস্তানি সংস্থা আইএসআই। 

পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ধরা পড়েছে একের পর এক পাক গুপ্তচর। বছরের শুরুতেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এক নেপালি নাগরিককে গ্রেফতার করার পর পশ্চিম এশিয়া, নেপাল ও ভারত জুড়ে পাকিস্তানি গুপ্তচরবৃত্তির নেটওয়ার্ক সামনে এসেছে। এই নেটওয়ার্ক ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সংবেদনশীল ও গোপন তথ্য পাকিস্তানে পাচার করত বলে জানা গেছে।

নেপালের রাউতহাট জেলার বাসিন্দা আনসারুল মিয়া আনসারিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় অভিযুক্তের কাছ থেকে ভারতীয় সেনার বেশ কিছু গোপন নথি, একটি ল্যাপটপ এবং প্রিন্টার উদ্ধার হয়। তবে একটি সিডি গ্রেফতারের ঠিক আগে নষ্ট করে টয়লেটে ফ্ল্যাশ করে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে, এতে গোপন সামরিক তথ্য ছিল বলে ধারনা করা হচ্ছে। পুলিশের সন্দেহ, গ্রেফতারি এড়াতে আনসারি ইচ্ছা করেই সিডিটি ধ্বংস করে দেয়। 

আরও পড়ুন-কাতারের ট্যাক্সিচালক থেকে আইএসআই এজেন্ট! কীভাবে পাক গুপ্তচরকে ধরল ভারত?

আনসারিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে সে আইএসআই-এর হয়ে কাজ করছিল। আনসারি স্বীকার করেছে 'ইয়াসির' নামের পাকিস্তানি হ্যান্ডেলারের সাথে সে নিয়মিত যোগাযোগে ছিল। এই ইয়াসির হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ ও ভয়েজ কলে আনসারিকে কী করতে হবে বলে দিত।

আনসারি আরও জানিয়েছে যে, সে নিয়মিত নেপাল হয়ে ভারতে প্রবেশ করত। প্রায়শই জাল বা দ্বৈত-পরিচয়পত্র ব্যবহার করে চেকপোস্ট পার করত সে। ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশের পর সে হার্ড কপি বা ডিজিটাল মাধ্যমে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহকারীদের সাথে যোগাযোগ করত।

আরও পড়ুন-পাকিস্তানের গুপ্তচর! কে এই ভারতীয় ট্রাভেল ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রা?

এই গুপ্তচর চক্রের সাথে কমপক্ষে আরও দুইজন ব্যক্তি জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। কুরিয়ার বয় হিসেবে পরিচিত "পিন্টু" দিল্লির আইএসবিটি-র কাছে আনসারিকে একটি সিডি পৌঁছে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। আনসারি দাবি করে যে, গ্রেফতারির ভয়ে সে সিডি ধ্বংস করে ফেলেছে। 

এছাড়া ঝাড়খণ্ডের রাঁচির বাসিন্দা আখলাক আজমের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। আনসারির ভারত সফরের সময় আজম তাকে নানা সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করে। গোয়েন্দা ইউনিটগুলি আজমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং ফরেনসিকের জন্য তার মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার কল লগ ও হোয়াটসঅ্যাপ ডেটা থেকে একাধিক পাকিস্তানি নম্বর এবং অজ্ঞাত বিদেশী হ্যান্ডেলারদের সাথে ঘন ঘন যোগাযোগের উল্লেখ পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন-পাক এজেন্টের প্রেমে পড়ে গুপ্তচর! ভারতের এই কূটনীতিকের কী পরিণতি হয়েছিল?

আনসারির মোবাইল ফোন থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা পাকিস্তানি কন্ট্যাক্ট নম্বরসহ হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, পশ্চিম এশিয়া, নেপাল এবং উত্তর ভারতে বিস্তৃত কল রেকর্ড এবং সামরিক ঘাঁটির ধরণ ও গোপন কৌশলগত তথ্য উদ্ধার করেছেন। তথ্যগুলো মূল্যায়নের জন্য সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত শুধু আনসারি নয়। পহেলগাঁও হামলার পর গত কয়েক সপ্তাহে, পাক গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ভারতজুড়ে কমপক্ষে ১৫ জনকে আটক করেছে। রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, গুজরাট এবং পঞ্জাব থেকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে।

More Articles