পহেলগাঁও হামলার মাস্টারমাইন্ড! কে এই সইফুল্লা কাসুরি?
Pahalgam Mastermind: পহেলগাঁও হামলার মাস্টারমাইন্ড সইফুল্লা কাসুরি ওরফে সইফুল্লা খালিদ পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একজন সিনিয়র কমান্ডার।
মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে টিআরএফ। পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন এটি। ২৮ জন নিরস্ত্র ভারতীয় নাগরিককে হত্যা করেছে টিআরএফ-এর চার-পাঁচ জন জঙ্গি। গোয়েন্দা সংস্থার অনুমান, এই হামলার মূল চক্রী সইফুল্লা কাসুরি ওরফে সইফুল্লা খালিদ। অন্যদিকে টিআরএফ-এর নেতৃত্বে ছিল আসিফ ফৌজি।
২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করা হয়, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ পায়। তারপর থেকেই জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়তে থাকে বলে নানা মহলের অভিযোগ। ৩৭০ ধারা বাতিলের কিছুকাল পরই তৈরি হয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। জম্মু ও কাশ্মীরে কয়েক দশক ধরে সন্ত্রাসবাদের পিছনে রয়েছে পাকিস্তান এবং তাদের মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ এবং তাদের জঙ্গি প্রধানরা সকলেই পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছে।
২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলা চালিয়েছিল পাক জঙ্গি-সহ চার-পাঁচজনের একটি দল। তার কয়েকদিন আগে তারা বৈসরন উপত্যকায় অনুপ্রবেশ করেছিল বলে জানা যাচ্ছে। গোয়েন্দাদের অনুমান, এই হামলার আগে বারেবারে রেইকি হয়েছে এই উপত্যকার। কারণ হামলা ছিল ভীষণই পরিকল্পিত। প্রশ্ন হচ্ছে, পহেলগাঁও হামলার মূল চক্রী হিসেবে যার নাম উঠে আসছে, সেই সইফুল্লা কাসুরি আসলে কে?
পহেলগাঁও হামলার মাস্টারমাইন্ড সইফুল্লা কাসুরি ওরফে সইফুল্লা খালিদ পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একজন সিনিয়র কমান্ডার। কাসুরি এলইটি প্রধান ভারতের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা হাফিজ সাঈদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেও জানা যায়। পাক সেনাবাহিনীতেও তার যথেষ্ট প্রভাব ছিল বলে জানা যায়। সূত্রের খবর, সইফুল্লা খালিদ পাকিস্তানের গুজরানওয়ালা শহর থেকে পুরো কাজটা করছিল।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সইফুল্লা কাসুরিকে হাফিজ সাঈদ তার জামাত-উদ-দাওয়া (JUD)-এর রাজনৈতিক ফ্রন্ট মিলি মুসলিম লিগ (MML)-এর সভাপতি করে। ২০১৭ সালের ৮ অগাস্ট এই পার্টির গঠন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে আলোচনা হয়েছিল।
পহেলগাঁও হামলার মাস দুই আগে পাকিস্তানের পঞ্জাবের কাঙ্গলপুরে দেখা গিয়েছিল সইফুল্লা কাসুরিকে। সেখানে পাক সেনার একটি বড় ব্যাটেলিয়নে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য সইফুল্লাকে ডেকেছিলেন পাক সেনার কর্নেল জাহিদ জারিন। সেনাকর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি করতেই নাকি খালিদকে ডাকা হয়েছিল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সইফুল্লার সেই বক্তৃতায় বেশিরভাগই ছিল ভারতবিরোধী কথা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালানোর ‘পরামর্শ’-ও দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়াতেও এমন সভার আয়োজন করেছিল পাক সেনা। সেই সভাতেও সইফুল্লা ভারতবিদ্বেষী বক্তৃতা রেখেছিল। এমনকী কাশ্মীর দখলের হুঙ্কারও দিতে শোনা যায় সইফুল্লা খালিদকে।
এর আগে, সইফুল্লা খালিদ প্রকাশ্যে কাশ্মীর নীতিতে পাকিস্তানের কৌশলগত পরিবর্তনের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে ২০১৯ সালে ভারত ৩৭০ ধারা বাতিল করার পরে। এমনকী কাশ্মীরে লস্করের কার্যক্রম দমিয়ে দেওয়ার পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছিল এই জঙ্গি।
দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট-এর আসিফ ফৌজি কে?
ইতোমধ্যেই টিআরএফ মঙ্গলবার পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করেছে। বুধবার জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ তিন হামলাকারীর স্কেচ প্রকাশ করেছে। ইন্ডিয়া টুডে-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই তিন সন্ত্রাসবাদীদের আসিফ ফৌজি, সুলেমন শাহ এবং আবু তালহা বলে চিহ্নিত করা গিয়েছে। এর মধ্যে আসিফ ফৌজি এই জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিল বলে জানা যাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুই জঙ্গি পাকিস্তানি ভাষা পশতু-তে কথা বলছিল। আর দু'জন বিজভেরা ও ত্রালের স্থানীয় বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মুজফফরাবাদ ও করাচির সেফ হাউসগুলিতে হামলাকারীদের ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের হদিশ মিলেছে। যার থেকে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসী যোগসূত্র নিশ্চিত। সূত্রের খবর, আক্রমণকারী জঙ্গিদের মাথায় হেলমেট-মাউন্ট ক্যামেরা ছিল। সম্ভবত পর্যটকদের হত্যাকাণ্ড রেকর্ড করে তাদের সহযোগী সন্ত্রাসবাদীদের কাছে ফুটেজ পাঠানোর জন্যই তা করার হয়েছিল।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলির অনুমান, খুবই সতর্কতার সঙ্গে এই হামলার ছক কষা হয়েছিল। জঙ্গিরা এক মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায় ছিল। যে সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত সফরে এসেছেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরবে, সেই সময় পহেলগাঁওয়ে হামলা চালায় জঙ্গিরা। তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ দাবি করেছেন, এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, "ভারত সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করবে না। এই জঘন্য সন্ত্রাসী হামলার অপরাধীদের রেহাই দেওয়া হবে না।"