২০১৯ থেকে সক্রিয়! যেভাবে কাশ্মীরে একাধিক হামলা চালিয়েছে TRF

TRF in Kashmir: নামে রেজিস্ট্যান্স শব্দটি জুড়ে ইসলামিক ধর্মীয় উগ্রবাদের সম্পর্ক নেই, এ আসলে জনগণের আন্দোলন — এমন ধারণাই প্রচার করতে চেয়েছিল টিআরএফ। 

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন তৃণভূমিতে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার দায় স্বীকার করেছিল দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। নিষিদ্ধ পাক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার (এলইটি) একটি ছায়া সংগঠন হচ্ছে টিআরএফ। টিআরএফ অনলাইন মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে ওঠে ২০১৯ সালের অগাস্টে ভারত সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করে ৩৭০ ধারা বাতিল করার পরেই। অনলাইনে ক্রমেই প্রচার বাড়াতে বাড়াতে প্রায় ছয় মাস পরে, টিআরএফ সরাসরি কাজ শুরু করে। নামে রেজিস্ট্যান্স শব্দটি জুড়ে ইসলামিক ধর্মীয় উগ্রবাদের সম্পর্ক নেই, এ আসলে জনগণের আন্দোলন — এমন ধারণাই প্রচার করতে চেয়েছিল টিআরএফ।  ২০১৯ পরবর্তী কাশ্মীরে, নিরপেক্ষ চেহারার আড়ালে থেকে কাজ করতেই 'প্রতিরোধ' শব্দটিকে সামনে আনা হয় যাতে ইসলামিক নাম থেকে দূরত্ব বজায় রাখা যায়।

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক টিআরএফ-কে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের অধীনে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, সন্ত্রাসীদের নিয়োগ, সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ এবং পাকিস্তান থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে অস্ত্র আর মাদক পাচারের প্রচারের অভিযোগে 'সন্ত্রাসবাদী সংগঠন' হিসেবে ঘোষণা করে। তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে এলইটির একটি ছায়া সংগঠন হিসাবে অস্তিত্ব প্রকাশ করে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছিল, দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে অনলাইনে যুবকদের নিয়োগ করছে। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের প্রচার, সন্ত্রাসবাদীদের নিয়োগ, সন্ত্রাসবাদীদের অনুপ্রবেশ এবং পাকিস্তান থেকে জম্মু কাশ্মীরে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য পাচারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত রয়েছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। টিআরএফ সোশ্যাল মিডিয়ায় মগজধোলাইয়ের কাজটি করে। ভারতের বিরুদ্ধে গিয়ে এমন সন্ত্রাসবাদী দলে যোগ দেওয়ার জন্য মানুষদের উস্কানি দেয় টিআরএফ, জানিয়েছিল মন্ত্রক।

উল্লেখ্য, ২০১৯ থেকে সক্রিয় হওয়ার পর ২০২০ সালে ঘটা বিভিন্ন হামলার দায় নিতে শুরু করে টিআরএফ৷ আগে কাশ্মীরে এই ধরনের হামলা হলেই দায় স্বীকার করতে দেখা যেত লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীদের৷ এখন সমস্ত হামলার দায় শুধুমাত্র টিআরএফ-ই স্বীকার করে। জম্মু কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে উপত্যকায় সর্বাধিক সংখ্যক জঙ্গি নিহত হয়েছে টিআরএফ-এর।

আরও পড়ুন-কাশ্মীরে নিরস্ত্র পর্যটকদের উপর মর্মান্তিক হামলার নেপথ্যে TRF! কারা এই গোষ্ঠী?

২০২০ সাল থেকে কোন কোন হামলা চালায় টিআরএফ?

৫ এপ্রিল ২০২০: কেরানে দুই টিআরএফ জঙ্গি পাঁচজন ইন্ডিয়ান স্পেশাল ফোর্সের নিরাপত্তারক্ষীকে হত্যা করে এবং পরে নিজেরা আত্মহত্যা করে।

১৮ এপ্রিল ২০২০: সোপোরে টিআরএফ জঙ্গিরা ভারতীয় বাহিনীর উপর অতর্কিতে হামলা চালায়, এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং আরও ২ জন আহত হয়।

৩ মে ২০২০: দুই টিআরএফ জঙ্গির হাতে একজন কর্নেল, একজন মেজর এবং একজন এসওজি-র ইন্সপেক্টর সহ পাঁচ ভারতীয় সুরক্ষা বাহিনীর কর্মী নিহত হন।

৫ মে ২০২০: চার সিআরপিএফ জওয়ান এবং একজন স্থানীয় নিরস্ত্র বিশেষভাবে সক্ষম নাগরিক নিহত এবং পাঁচজন সিআরপিএফ কর্মী আহত হন। নিহত সিআরপিএফ জওয়ানদের কাছ থেকে চুরি যায় দু'টি রাইফেল।

২১ মে ২০২০: এক সিআরপিএফ/জেকেপি পার্টিতে হামলা চালায় টিআরএফ, এতে ২ জন কর্মী নিহত এবং একজন আহত হন।

৮ জুন ২০২০: টিআরএফ জঙ্গিরা এক কাশ্মীরি পণ্ডিত গ্রাম প্রধানকে হত্যা করে।

১ জুলাই ২০২০: ভারতীয় বাহিনীর ওপর অতর্কিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা, এতে দু'জন নিহত ও তিনজন আহত হন। ক্রসফায়ারে নিহত হন ৬৪ বছরের এক সাধারণ নাগরিক।

৮ জুলাই ২০২০: স্থানীয় এক রাজনীতিবিদ, তাঁর বাবা ও ভাইসহ তিন নিরস্ত্র নাগরিককে হত্যা করে জঙ্গিরা।

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০: স্থানীয় বিশিষ্ট আইনজীবী বাবর কাদরিকে হত্যা করে জঙ্গিরা।

৬ অক্টোবর ২০২০: স্থানীয় এক রাজনীতিবিদের বাসভবনে হামলা চালিয়ে বিজেপি নেতার পিএসওকে হত্যা করে। এক টিআরএফ জঙ্গিও নিহত হয়।

৩০ অক্টোবর ২০২০: টিআরএফ জঙ্গিরা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তিন নিরস্ত্র নাগরিককে হত্যা করে, যারা বিজেপি কর্মী ছিলেন।

৮ নভেম্বর ২০২০: তল্লাশি অভিযানের সময় টিআরএফ জঙ্গিরা ভারতীয় বাহিনীর মুখোমুখি হয়, তিন ভারতীয় সেনা, একজন বিএসএফ সদস্য এবং তিন টিআরএফ জঙ্গি নিহত হয়।

২৩ ডিসেম্বর ২০২০: টিআরএফ জঙ্গিরা সিআরপিএফ পার্টিতে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং তারপরে তাদের উপর গুলি চালায়, এতে দু'জন নিহত এবং একজন আহত হয়।

৩১ ডিসেম্বর ২০২০: টিআরএফ জঙ্গিরা সৎপাল নিশ্চল নামে এক জহুরিকে হত্যা করে।

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১: শ্রীনগরে দুই স্থানীয় পুলিশকর্মীকে হত্যা করে টিআরএফ জঙ্গিরা।

২৯ মার্চ ২০২১: সোপোরে বিজেপির পুরসভার কাউন্সিলরদের সভায় অতর্কিত হামলা চালায়।

১ এপ্রিল ২০২১: এক রাজনীতিবিদের বাড়িতে হামলা চালানোর সময় টিআরএফ জঙ্গিরা স্থানীয় এক পুলিশকর্মীকে হত্যা করে।

২২ জুন ২০২১: টিআরএফ জঙ্গিরা একজন সিআইডি ইন্সপেক্টরকে হত্যা করে।

২৭ জুন ২০২১: স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা, তাঁর স্ত্রী ও মেয়েসহ তিনজনকে হত্যা করে।

৭ অগাস্ট ২০২১: টিআরএফ জঙ্গিরা স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে এবং আরেকজনকে আহত করে।

৫ অক্টোবর ২০২১: শ্রীনগরে কাশ্মীরি পণ্ডিত ব্যবসায়ী মাখন লাল বিন্দ্রোকে হত্যা করে।

৭ অক্টোবর ২০২১: শ্রীনগরের একটি স্কুলে ১ জন হিন্দু ও ১ জন শিখ সহ ২ অমুসলিম শিক্ষককে হত্যা করে জঙ্গিরা।

৯ অক্টোবর ২০২১: টিআরএফ জঙ্গিরা দুই পুলিশকর্মীকে হত্যা করে।

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩: অনন্তনাগ এনকাউন্টার।

৯ জুন ২০২৪: রিয়াসি আক্রমণ।

২২ এপ্রিল ২০২৫: পহেলগাঁও হামলা।

প্রশ্ন উঠছে, ২০১৯ সাল থেকে যে গোষ্ঠী একটু একটু করে সক্রিয় হচ্ছে, যে গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্থানীয় যুবকদের মগজধোলাই করে তাঁদের ব্যবহার করার অভিযোগ আছে, সেই দল এত হামলা চালিয়ে, স্থানীয় মানুষকে ব্যবহার করেও নিরাপদে থেকে গেল কীভাবে? কাশ্মীরে কেন্দ্র সরকারের প্রতিরক্ষা তবে এতই দুর্বল?

More Articles