কী কী দাবিতে রাতভর অবস্থান এসএসসি শিক্ষকদের? সদুত্তর দেবে শিক্ষা দফতর?

SSC Teachers' Protest: তবে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, নাট্যকার, অভিনেতা ব্রাত্য বসু বলছেন, এই আন্দোলনের কোনও অর্থই নেই, "যাঁরা ওখানে আছেন (অর্থাৎ যাঁরা এসএসসি ভবনের সামনে আন্দোলন করছেন) , তাঁদের অনেকেই হয়তো অযোগ্য।"

কয়েকমাস আগে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দুর্নীতি, আরজি করে নিহত ধর্ষিত চিকিৎসকের বিচার সংক্রান্ত ইস্যুতে সল্টলেক চত্বরে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান দেখেছিল গোটা রাজ্য। স্বাস্থ্যর পর এবার শিক্ষাক্ষেত্রের ভুক্তভোগীরা পথে নেমেছেন। আক্ষরিক অর্থেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে পথেই বসেছেন রাজ্যের শিক্ষকরা। কথা ছিল সোমবার সন্ধেয় এসএসসি শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের ‘যোগ্য-অযোগ্য’ তালিকা প্রকাশ করবে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। কিন্তু কোনও তালিকাই প্রকাশ করতে পারেনি কমিশন। সোমবার গভীর রাতে কমিশন এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানায়, “২০১৬ সালে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে যে, এসএসসি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলবে এবং বিভাগ কর্তৃক জানানো হচ্ছে, যে শিক্ষকেরা চাকরি করেছেন, তাঁদের বেতন বর্তমান ব্যবস্থা অনুসারে বিতরণ করা হবে।” ব্যাস। ‘যোগ্য-অযোগ্য’ বাছাই করা তাহলে হবে না? এই নিয়ে কোনও শব্দই খরচ করেনি কমিশন। ফলে শিক্ষকদের অবস্থানও আরও জোরদার হয়েছে। সারা রাত ধরে এসএসসি ভবনের বাইরে অবস্থান-বিক্ষোভ তো চলেইছে, মঙ্গলবার সকালেও এসএসসি কার্যালয় ঘেরাও করে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।

কী দাবি শিক্ষকদের?

এসএসসি ভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষকদের মূল দাবি যে অযোগ্য প্রার্থীদের জন্য এত দুর্নীতি, যাদের আলাদা করতে না পেরে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদেরও পেটে লাথি পড়েছে, সেই ‘অযোগ্য’-দের চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হোক।

এসএসসি-তে ‘যোগ্য’ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের দাবিতেই অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা। কিন্তু ‘যোগ্য’-দের তালিকা এখনও প্রকাশই করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যোগ্যদের যদি বাছা না যায়, তাহলে অন্তত অযোগ্যদেরই বাছাই করা হোক। শিক্ষকদের দাবি, স্কুল সার্ভিস কমিশন অন্তত ‘অযোগ্য’-দের তালিকা প্রকাশ করে অবিলম্বে চাকরি থেকে বহিষ্কার করুক তাঁদের।আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আরও দাবি, ওই তালিকার পাশাপাশি ওএমআর শিটও প্রকাশ করতে হবে।

এসএসসি ভবনের পাশাপাশি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসের ভিতরেও অনশন শুরু করেছেন শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিরা। সোমবার বিকেল থেকে অবস্থান শুরু হয়। সেই রাত থেকেই আমরণ অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নেন এসএসসির গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি শিক্ষাকর্মীদের আট জন। শিক্ষাকর্মীদের দাবি, শিক্ষকদের মতো তাঁদের জন্যও ‘ক্ল্যারিফিকেশন পিটিশন’ চাইতে হবে। ‘যোগ্য-অযোগ্য তালিকা’ প্রকাশেরও দাবি তুলেছেন শিক্ষাকর্মীরা।

তবে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, নাট্যকার, অভিনেতা ব্রাত্য বসু বলছেন, এই আন্দোলনের কোনও অর্থই নেই। কেন? ব্রাত্য সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “যাঁরা বঞ্চিত শিক্ষক, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো তাঁদের মাইনে পাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তাই এই আন্দোলনেরও কোনও মানে নেই। আর যাঁরা ওখানে আছেন (অর্থাৎ যাঁরা এসএসসি ভবনের সামনে আন্দোলন করছেন) , তাঁদের অনেকেই হয়তো অযোগ্য। তাঁদের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট কোনও গাইডলাইন না দিলে তো আমরা কিছু বলতে পারি না। আমরা দ্রুত রিভিউ পিটিশনের জন্য যাচ্ছি। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টই আমাদের গাইডলাইন দিয়ে দেবেন। আমরা যে ভাবে এগোচ্ছি, তাঁদের আস্থা রাখা উচিত। এ বার আস্থা রাখবেন কি রাখবেন না, সেটা তাঁদের ব্যাপার।’’

রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের দিকে ঠেলে দিয়ে শিক্ষার দুর্নীতির ইস্যুকে আপাতত পাশ কাটিয়েই যেতে চেয়েছেন ব্রাত্য। সুপ্রিম কোর্ট ঠিক কী বলছে? দেশের শীর্ষ আদালত বলেছে, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্যানেলে যারা 'সন্দেহভাজন' তালিকায় নেই, এমন শিক্ষকরা আপাতত স্কুলে যেতে পারবেন। তবে শিক্ষাকর্মীরা পারবেন না। নিজেদের একগুচ্ছ দাবি নিয়ে এসএসসি দফতর পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ, যোগ‍্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ এবং গ্রুপ-সি গ্রুপ-ডি শিক্ষাকর্মী মঞ্চের প্রতিনিধিরা এসএসসি দফতরের সামনে পৌঁছন সোমবার কারণ কমিশন কথা ছিয়েছিল যোগ্য-অযোগ্য তালিকা প্রকাশ করা হবে।

যোগ্য-অযোগ্য তালিকা প্রকাশের দাবিতে গত ১১ এপ্রিল বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিরা। সেই বৈঠকে এসএসসি-র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারও ছিলেন। উল্লেখ্য, ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছিলেন, ২১ এপ্রিলের মধ্যে ‘যোগ্য-অযোগ্য’ তালিকা প্রকাশের বিষয়ে তাঁরা আশ্বাস পেয়েছেন। এমনকী শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও বলেছিলেন, আইনি পরামর্শ নিয়ে ওই দিনের মধ্যে যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করার চেষ্টা করবে এসএসসি। এখন ব্রাত্য বলছেন, এই আন্দোলনের কোনও অর্থই নেই।

অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চাকরিহারা শিক্ষকদের বলছেন স্কুলে গিয়ে ক্লাস নিতে। “কেন গরমের মধ্যে বসে রয়েছেন? আপনারা স্কুলে যান। যাঁরা আপনাদের উস্কানি দিচ্ছে, তাঁরা টাকা দেবেন না। সরকার আপনাদের বেতন দেবে,” মেদিনীপুর থেকে বক্তব্য রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, মেদিনীপুরে আছেন বলেই সমস্যা, “আমি কলকাতায় থাকলে এক সেকেন্ডে মিটিয়ে দিতাম। আমি মেদিনীপুরে ছিলাম। রাত পর্যন্ত কথা বলেছি। ঠিকমতো বেতন পাচ্ছেন কিনা সেটা দেখা দরকার। বাকিটা আমাদের উপর ছেড়ে দিন।”

রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার এমন দুর্দিন যে শাসকের আমলে, যে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এমন ঢালাও অভিযোগ, শেষে সবটা তাদের উপরেই 'ছেড়ে দিতে' পারবেন তো শিক্ষকরা?

More Articles