তান্ত্রিক চেতনার আড়ালে তারানাথ আদতে ভয়ের সেলসম্যান
Taranath Tantrik: বাংলা সাহিত্যে তারানাথ তান্ত্রিক একমাত্র এমন চরিত্র যে কেবল ভয় সৃষ্টি করে না, সেই ভয়কে সাংস্কৃতিক পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে বাংলা বাজারে একটি পরিপূর্ণ 'ভয়-অর্থনীতি' গড়ে তোলে।
তারানাথ তান্ত্রিকের নাম শুনলেই বাঙালিরা মনে মনে একটা রোমাঞ্চ অনুভব করে। যে রোমাঞ্চের সৃষ্টিকর্তা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে তাঁর ছেলে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সেই রোমাঞ্চকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। বর্তমান সময়ে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের উত্তরসূরিরা সেই রোমাঞ্চকে জীবিত রেখেছেন। সাদা-কালো পর্দায় বারবার ফিরে এসেছে তারানাথ। দর্শক উপচে পড়ে দেখেছে। তারানাথের অডিও স্টোরি মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। একই গল্প বারবার শোনা হয়েছে। বাঙালির অবসরের দোসর হয়ে উঠেছে তারানাথ। বাংলার তন্ত্রের প্রতি আগ্রহ জন্মেছে আপামর বাঙালির। বিভূতিভূষণ এমন একটি চরিত্র এবং প্লট সৃষ্টি করে গিয়েছেন যা বাঙালিকে টেনে নিয়ে গিয়েছে তন্ত্রের শিকড়ের কাছে, বাংলার হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির কাছে। তবুও মূল তন্ত্র থেকে তারানাথ তান্ত্রিক ছিল বহু দূরে। আদতে সে ছিল পুঁজিবাদের ভাবমূর্তি। যার মাধ্যমে ধীরে ধীরে গজিয়ে উঠেছে ব্যবসার শাখা, আমরা ভয়কে ভালোবাসতে শুরু করেছি কুসংস্কার দিয়ে। তন্ত্রের আসল ব্যাখা না জেনে আমরা শুধুমাত্র এক চটজলদি টোটকায় বিশ্বাসী হয়ে উঠেছি। আর এই বিশ্বাসের জন্যই তারানাথ তান্ত্রিক আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে রয়েছে।
তারানাথ তান্ত্রিক জনপ্রিয় হয়েছিল মূলত তার গল্পগুলির গভীর লোকজ শিকড়, বিশ্বাসযোগ্য ভয়, আর মানবিক চরিত্রচিত্রণের কারণে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি এই চরিত্র কোনও অতিমানব নয়, বরং এক ক্লান্ত, ব্যর্থ, অথচ অভিজ্ঞ তান্ত্রিক— যে অতীতে তন্ত্রচর্চা করলেও বর্তমানে চা খেতে খেতে ভয়ংকর গল্প বলে। বৃষ্টির দিনে চপ মুড়ি খেতে খেতে তার অভিজ্ঞতার কথা শোনায়। এই গল্পগুলির ভাষা সহজ, কিন্তু আবহ গা-ছমছমে, তাতে বাংলার লোকবিশ্বাস, পুরনো জমিদারবাড়ি, শ্মশান বা অরণ্যের আতঙ্ক— সব কিছু মিলে থাকে। পাঠকের মনে হয়, যেন এ গল্প নয়— অভিজ্ঞতা। ঠিক এই জায়গাতেই তারানাথ আলাদা। পরবর্তীকালে বিভূতিভূষণের ছেলে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় যখন চরিত্রটিকে এগিয়ে নিয়ে যান, তখন এই গল্পবলিয়ে তান্ত্রিক হয়ে ওঠেন আরও বর্ণময়, আরও ভয়াবহ, আরও জনপ্রিয়। আজকের দিনে তারানাথের জনপ্রিয়তা নতুনভাবে মাথা তুলেছে কারণ আধুনিক বিনোদনের বাজারে ‘হরর’একটি সফল ঘরানা, যেখানে গল্প নয়, অভিজ্ঞতা বিকোয়। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তারানাথকে নিয়ে ওয়েব সিরিজ তৈরি হয়েছে, যা নতুন প্রজন্মের দর্শককেও আকৃষ্ট করেছে। একইসঙ্গে, আজকের দিনে যেখানে মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় তন্ত্র, স্পিরিচুয়াল হিলিং, ম্যানিফেসটেশনের প্রতি আগ্রহী, সেখানে তারানাথ হয়ে উঠেছে সেই লোক যে কোনও পণ্য বিক্রি করেন না, বরং ভয় এবং কৌতূহলকে পুঁজি করে একটা বাস্তব অভিজ্ঞতার বাজার তৈরি করে। ফলে তারানাথ আজকের ভয়ের পুঁজিবাদী দুনিয়াতেও প্রাসঙ্গিক, কারণ আধুনিক মানুষও ভয় পেতে ভালোবাসে— শুধু ভূতের ভয় নয়, একাকীত্ব, অসুরক্ষা, অনিশ্চয়তার ভয়। তারানাথ সেই ভয়কে প্যাকেজ করে দেয় বিশ্বাসযোগ্য গল্পে। তাই তারানাথ সময়ের ঊর্ধ্বে, ভয় বিক্রির এক কালজয়ী সেলসম্যান।

টি-শার্টে তারানাথ
আরও পড়ুন- সূচ ফুটিয়ে খুন, অধরা ভাড়াটে খুনি! কলকাতার সেই হত্যাকাণ্ড সাড়া ফেলেছিল পৃথিবীজুড়ে
কালো জাদু এবং প্রাচ্য ‘তন্ত্র’ নিয়ে বিভূতিভূষণের আগ্রহ ছিল যথেষ্টই। যার শ্রেষ্ঠ নমুনা পাই ‘তারানাথ তান্ত্রিক’-কে নিয়ে লেখা দু'টি গল্পে। কথিত আছে, তারানাথ তান্ত্রিকের সঙ্গে এক তান্ত্রিকের মিল পাওয়া যায় যিনি বিভূতিভূষণের পরিচিত ছিলেন। পরলোকে বিশ্বাস করতেন বিভূতিভূষণ, মৃত্যুর আগে একটি ‘ভৌতিক’ ঘটনাও তিনি প্রত্যক্ষ করেন। তিনি নাকি তাঁর মৃত্যুর বেশ কিছুদিন আগে নিজের মৃতদেহ দেখতে পান। শোনা যায়, ধূ-ধূ মাঠে মধ্যে একটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে তিনি এগিয়ে যান। তারপরে গিয়ে দেখেন, সেটি আসলে তাঁরই মৃতদেহ। তারপর থেকেই তিনি নাকি অস্থির হয়ে উঠেন। তার কিছুদিন পরে তিনি মারাও যান। এ এক রহস্য! যে রহস্য আজও আজানা। তবে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি আত্মা এবং পরলোক নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা শুরু করেন। বিদেহীদের নিয়ে উপন্যাস ‘দেবযান’ বাংলার সাহিত্যে কাল্ট হয়ে আছে। তবে তারানাথের গল্প আর তন্ত্রের মূল বইগুলি পাশাপাশি রেখে মিলিয়ে পড়লে, অনেক তথ্যগত বিপর্যয় চোখে পড়বে।
যেমন, প্রথম গল্পে মাতু পাগলি ওরফে মাতঙ্গিনী তারানাথকে দু'বার শবসাধনার নির্দেশ দিয়েছে, একবার স্বয়ং নিজের শবের ওপরে, আরেকবার নদীর জলে ভেসে আসা একটি ষোড়শীর শবের ওপরে। কিন্তু স্ত্রীলোকের শব নিয়ে সাধনা তন্ত্রশাস্ত্রে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তারানাথ তার আরাধ্য মধুসুন্দরীর ধ্যান ও জপ্য মন্ত্র যা উল্লেখ করেছে, তার সঙ্গে ভূতডামরোক্ত মধুমতী দেবীর ধ্যানমন্ত্র জপ্যমন্ত্রাদির বিস্তর ফারাক। ফারাক আছে পূজাপদ্ধতি ও পূজার ফলাফলেও। আসল তন্ত্রসাধনা এবং তারানাথ তান্ত্রিকের সাধনার মধ্যে যথেষ্ট ফারাক থাকলেও কিছু জায়গায় এই দুইয়ের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ মিল দেখা যায়। শাস্ত্রীয় তন্ত্রসাধনা হলো এক জটিল, গুরুপরম্পরাভিত্তিক আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যার উদ্দেশ্য কেবল অলৌকিক শক্তি অর্জন নয়, বরং কুণ্ডলিনী জাগরণ, চেতনার বিস্তার এবং মুক্তির সন্ধান। শক্তিরূপিণী দেবীকে কেন্দ্র করে এই সাধনায় ব্যবহৃত হয় নির্দিষ্ট মন্ত্র, যন্ত্র, ধ্যান ও আচারের কাঠামো— যেমন চক্রসাধনা, রাত্রিকালীন ধ্যান, রুদ্রাক্ষধারণ, শবসাধনা বা ভূতডামর তন্ত্রের ব্যবহার। তারানাথ তান্ত্রিক চরিত্রে এই উপাদানগুলির উপস্থিতি লক্ষণীয়। তিনি শবসাধনার কথা বলেন, রুদ্রাক্ষ ও কবচ ব্যবহার করেন, চণ্ডীপাঠ ও অপদেবতা নিয়ন্ত্রণের মতো কাজের কথা বর্ণনা করেন, যা বাস্তব তন্ত্রচর্চার অনুরূপ। বিশেষ করে বামাচার ও গ্রামীণ লোকতান্ত্রিক ধারার সঙ্গে তারানাথের অভিজ্ঞতার আশ্চর্য মিল পাওয়া যায়। তবে মৌলিক তফাৎ এখানেই যে, আসল তন্ত্রসাধনা এক নিঃশব্দ, ব্যক্তিগত ও দার্শনিক পথ— যেখানে অন্তর্জাগতিক উপলব্ধি মুখ্য; আর তারানাথের তন্ত্র অভিজ্ঞতালব্ধ হলেও তা গল্পের আকারে জনসমক্ষে প্রকাশ্য। তার তন্ত্রচর্চা বাস্তবতাকে ছুঁয়ে থাকলেও, তা অলংকৃত, সাহিত্যিক ও নাটকীয়তায় ভরা— যার উদ্দেশ্য জ্ঞানদান নয়, বরং পাঠকের মনে ভয়, বিস্ময় ও কৌতূহল জাগানো। ফলে বলা যায়, তারানাথ তান্ত্রিক শাস্ত্রীয় তন্ত্রসাধনার একটি লোকপ্রিয়, কল্পনানির্ভর প্রতিরূপ— যে মূলত সাহিত্যে তন্ত্রকে সাংস্কৃতিক বয়ানের স্তরে নিয়ে আসে এবং তা জনপ্রিয়তার মাধ্যমে পণ্যেও রূপ দেয়।

ওয়েব সিরিজে তারানাথ তান্ত্রিক
বাংলা সাহিত্যে তারানাথ তান্ত্রিক একমাত্র এমন চরিত্র যে কেবল ভয় সৃষ্টি করে না, সেই ভয়কে সাংস্কৃতিক পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে বাংলা বাজারে একটি পরিপূর্ণ 'ভয়-অর্থনীতি' গড়ে তোলে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পগুলি দীর্ঘদিন সাহিত্যের পরিসরে থাকলেও, ডিজিটাল যুগে এসে সে হয়ে উঠেছে এক সফল ব্র্যান্ড, যার মূল ইউএসপি ভয়। ২০১৯ সালে ওয়েবসিরিজ তারানাথ তান্ত্রিকে মুক্তি পাওয়ার পরই এই চরিত্র নবজন্ম পায়— বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে। এই জনপ্রিয়তার ফলস্বরূপ বইমেলায় তারানাথ তান্ত্রিকের নতুন সংস্করণ, ইলাস্ট্রেটেড এডিশন, গ্রাফিক নভেল ইত্যাদির বিক্রি হঠাৎ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে ভয়-ভিত্তিক ওয়েবসিরিজ, শর্ট ফিল্ম, ইউটিউব চ্যানেল এবং পডকাস্টগুলির দর্শকসংখ্যা কয়েকগুণ বাড়তে থাকে, যাদের কন্টেন্ট স্টাইল— বয়স্ক কণ্ঠে অভিজ্ঞতালব্ধ গল্প বলার ভঙ্গি— সরাসরি তারানাথ ঘরানার। বইয়ের মলাট থেকে ওয়েবসিরিজের পোস্টার পর্যন্ত, তারানাথের ব্র্যান্ডিং হয় ‘রিয়েল হরর এক্সপেরিয়েন্স’-এর ছাঁদে, যা শুধু গল্প না, এক মনস্তাত্ত্বিক রোমাঞ্চের পণ্য। এর প্রভাবে বাজারে রুদ্রাক্ষ, ষড়চক্র, মাদুলি, তান্ত্রিক পেন্ডেন্টের মতো জিনিসও 'মিস্টিক ফ্যাশন' হিসেবে জনপ্রিয় হয়— বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। পাশাপাশি, লোকজ অলৌকিকতা ও তান্ত্রিকতা নিয়ে নাটক, থিয়েটার, এমনকী হ্যালোউইন ধাঁচের হরর ইভেন্টও আজ বাংলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যার মূল অনুপ্রেরণা এই চরিত্র। এইভাবে তারানাথ একদিকে বাংলার লোকবিশ্বাস ও তন্ত্রচর্চার ঐতিহ্যকে গল্পের আকারে জনপ্রিয় করে তোলে, অন্যদিকে সেই গল্পের ভয় ও রহস্যকে কনজিউমেবল পণ্যে রূপান্তরিত করে— যা বই, ভিডিও, অলঙ্কার, থিয়েটার এবং ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন মার্কেট— সব ক্ষেত্রেই স্পষ্ট। ফলে বলা যায়, তারানাথ তান্ত্রিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম চরিত্র, যে ভয়কে একটি সাংস্কৃতিক কমোডিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বাংলা বাজারে অলৌকিকতার সেলসম্যান হয়ে উঠেছে।

রেডিও-র অনুষ্ঠানে তারানাথ তান্ত্রিক
আরও পড়ুন- নিজের বেডরুমেই ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের!
ইদানীং ভূতের গল্পের রমরমা বাজার। পডকাস্ট থেকে জ্যোতিষী টোটকা, বহাল তবিয়তে চলেছে লোক ঠকানো। তবুও মানুষ সেগুলো গোগ্রাসে গিলছে এবং হজম করছে। ভূতের গল্প লেখার ঠেক বাড়ছে। কিন্তু ভূতের গল্প কেন? কারণ ভূতের গল্প শুনতে ভালোবাসার পেছনে মানুষের মস্তিষ্কের একটি স্বাভাবিক স্নায়বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে, যাকে বলা হয় “নিরাপদ ভয়”। ভয় মানুষের প্রাচীনতম আবেগগুলোর একটি, যা মূলত মস্তিষ্কের 'অ্যামিগডালা' নামক একটি অংশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যখন আমরা ভয়ংকর কিছুর মুখোমুখি হই—তা বাস্তব হোক বা কল্পিত— আমাদের শরীরে অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যার ফলে হৃদস্পন্দন বাড়ে, মন সতর্ক হয় এবং রক্তচাপ কিছুটা বাড়ে। কিন্তু ভূতের গল্প শুনতে শুনতে আমরা বুঝি, এই ভয়টি আমাদের বাস্তব জীবনকে বিপন্ন করছে না— এটি কল্পনার মধ্যে নিরাপদভাবে ভয় পাওয়ার সুযোগ। এই “নিরাপদ ভয়” আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ ঘটায়, যা একপ্রকার আনন্দ, উত্তেজনা ও স্যাটিসফ্যাকশনের অনুভূতি দেয়। অর্থাৎ, ভয় আর আনন্দ— দুইয়ের মিলিত রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় ভূতের গল্প হয়ে ওঠে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। তদুপরি, গল্পের মধ্যে অজানা, রহস্য এবং অতিপ্রাকৃতের উপস্থিতি মানুষের কৌতূহল ও কল্পনাশক্তিকে উদ্দীপিত করে, যা মস্তিষ্কের 'রিওয়ার্ড সিস্টেম'-কে সক্রিয় করে। এই কারণেই বিজ্ঞান বলে, ভূতের গল্প শুধু ভয় নয়, তা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি ও ইন্দ্রিয়ের এক চর্চিত খেলা, যা মানুষ বারবার উপভোগ করতে চায়— যেমনটা তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প শুনে বা পড়ে আমরা করি।
আজকের ডিজিটাল যুগে পডকাস্ট, ইউটিউব বা ইনস্টাগ্রাম-ভিত্তিক জ্যোতিষ ও তন্ত্র এক বাণিজ্যিক পরিষেবার রূপ নিয়েছে— সেখানে ভয়, অনিশ্চয়তা ও আশ্রয়ের অভাবকে পুঁজি করে বিক্রি হচ্ছে পেন্ডেন্ট, মন্ত্র, রেমেডি— ঠিক তেমনই সাহিত্যের জগতে তারানাথ তান্ত্রিকও হয়ে উঠেছিল ভয়-নির্ভর অভিজ্ঞতার এক সেলসম্যান। সমাজমাধ্যম ভিত্তিক তান্ত্রিকরা যেখানে ভয় দূর করার নাম করে পণ্য বিক্রি করেন, তারানাথ সেখানে সেই ভয়কে গল্পের মাধ্যমে নিরাপদ রোমাঞ্চে পরিণত করে। দু'জনই ভয়ের বাজারে কাজ করে কিন্তু একজন কর্পোরেট ইনফ্লুয়েন্সার, অন্যজন অলৌকিক বয়ানের শিল্পী। এইখানেই সাহিত্যের গভীরতা আর বাজারের ফাঁকা আশ্বাস আলাদা হয়ে দাঁড়ায়।