বিমান বাঁচাতে মে-ডে কল করেছিলেন পাইলট! কী এই মে-ডে কল?
Mayday call : উড়ানের কিছুক্ষণ পরেই পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সবরওয়াল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) কাছে একটি জরুরি সংকেত পাঠান। এই কল ‘মে-ডে কল’ নামে পরিচিত।
সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী গুজরাট। আমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়ানের কিছুক্ষণ পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ল। লন্ডনগামী এই বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটি বিমানবন্দরের কাছে মেঘানিনগর এলাকায় একটি বাড়ির ছাদে আছড়ে পড়ে, যার ফলে আকাশে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ১৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। উদ্ধারকারী দল এখনও বেঁচে থাকা যাত্রীদের উদ্ধারে কাজ চালাচ্ছে। এই ঘটনায় গোটা দেশ শোকস্তব্ধ। প্রশ্ন উঠছে, ঠিক কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল? কোনো সংকেত পেয়েছিল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল? সূত্রের খবর, পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে অনুমান করতে পেরেছিলেন বিমানচালক।
ফ্লাইট এআই১৭১ এদিন দুপুর ১:৩৯-এ আমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। উড়ানের কিছুক্ষণ পরেই পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সবরওয়াল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) কাছে একটি জরুরি সংকেত পাঠান। এই কল ‘মে-ডে কল’ নামে পরিচিত। এটিই ছিল বিমান থেকে প্রাপ্ত শেষ যোগাযোগ। মাত্র ৬২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছনোর পর বিমানটি দ্রুত নীচে নেমে আসে এবং ভেঙে পড়ে। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল অধিদপ্তর (ডিজিসিএ) ঘটনাস্থলে একটি দল পাঠিয়েছে।
‘মে-ডে কল’ হলো বিমান ও জাহাজে ব্যবহৃত একটি আন্তর্জাতিক জরুরি সংকেত। ফরাসি শব্দ ‘মায়দে’, যার অর্থ ‘আমাকে সাহায্য করুন’, থেকে এর উৎপত্তি। এই সংকেতটি তিনবার পুনরাবৃত্তি করে বলা হয়—‘মেডে, মেডে, মেডে’—যা জীবন সংকটাপন্ন হলে ব্যবহৃত হয়। পাইলট এই কল করলে এটিসি সঙ্গে সঙ্গে ওই বিমানের পরিস্থিতিকে অগ্রাধিকার দেয় এবং অন্য সব যোগাযোগ বন্ধ করে ওই বিমানেই মনসংযোগ করে। পাইলট সাধারণত বিমানের অবস্থান, সমস্যার ধরন এবং জরুরি অবতরণের পরিকল্পনা জানান। আমেদাবাদের ঘটনায় মেডে কলের পর আর কোনো যোগাযোগ না হওয়ায় বোঝা যায় পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।
এই বিমানটি ৮,২০০ ঘণ্টার উড়ান অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্যাপ্টেন সবরওয়াল এবং ১,১০০ ঘণ্টার অভিজ্ঞতাস ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দর বিমানটি পরিচালনা করছিলেন। বিমানে ২৩০ জন যাত্রী ছিলেন, যার মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, একজন কানাডিয়ান এবং সাত জন পর্তুগিজ নাগরিক ছিলেন, সঙ্গে ছিলেন ১২ জন ক্রু সদস্য। গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি এই বিমানে ছিলেন বলে জানা গেছে। দীর্ঘ যাত্রার জন্য প্রচুর জ্বালানি নিয়ে উড়েছিল বিমানটি। বিমান ভেঙে পড়তেই তা থেকে বিস্ফোরণ হয়। আগুন তীব্র হতে থাকে এবং উদ্ধার কাজ জটিল হয়ে পড়ে।
দমকল, অ্যাম্বুলেন্স এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি গ্রিন করিডর তৈরি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শোক প্রকাশ করে বলেন, “আমেদাবাদের এই দুর্ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত ও ব্যথিত করেছে। এই ক্ষতি বাক্যে প্রকাশ করা যায় না।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী রাম মোহন নায়ডুকে আমেদাবাদে ত্রাণ কাজ তদারকি করার নির্দেশ দিয়েছেন মোদী। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল উদ্ধার ও চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এয়ার ইন্ডিয়া একটি বিবৃতিতে বলেছে: “ফ্লাইট এআই১৭১, আমেদাবাদ–লন্ডন গ্যাটউইক, আজ, ১২ জুন, ২০২৫-এ একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। আমরা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি।” এয়ারলাইনের চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেকরন গভীর শোক প্রকাশ করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। আমেদাবাদ বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে, এবং ভারতীয় রেলওয়ে আটকে পড়া যাত্রীদের সাহায্যে বন্দে ভারত ট্রেন মোতায়েন করেছে।
২০২০ সালে কোঝিকোড়ে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পর এটিই ভারতে সবচেয়ে বড় মারাত্মক যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনা। দেশ শোকাচ্ছন্ন হয়ে এই বিপর্যয়ের কারণ খুঁজছে।