ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনাগুলি

Worst Plane Crashes : ভুল যোগাযোগ এবং উচ্চতা নির্দেশনার লঙ্ঘন এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ছিল। এটি বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক মাঝ-আকাশের সংঘর্ষ হিসেবে পরিচিত।

বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই ১৭১ আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে মেঘানীনগর এলাকায় ভেঙে পড়ল । বিমানটিতে প্রায় ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান নাগরিক ছিলেন। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় ১৫৮ জন নিহত হয়েছেন, এবং মাত্র ৮ জন জীবিত উদ্ধার হয়েছেন, যারা বিমানের সামনের অংশে বসে ছিলেন। তবে এপি সূত্রে খবর, কোনো বিমানযাত্রীই জীবিত নেই।

এদিন, দুর্ঘটনার পর বড় বিস্ফোরণ হয়। কালো ধোঁয়া দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত দৃশ্যমান ছিল। জরুরি উদ্ধারকারী দল এবং ফায়ার ব্রিগেড তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। গত পাঁচ বছরে ভারতে এত বড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি। শেষবার, ২০২০ সালে কোঝিকোডে দুর্ঘটনা ঘটে।

এই দুর্ঘটনার কারণ এখনও নিশ্চিত নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিমানটি টেকঅফের সময় একাধিক পাখির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে, যার ফলে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের দুটো ইঞ্জিনই শক্তি হারিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী রামমোহন নায়ডুকে আহমেদাবাদে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বোচ্চ সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনা ভারতের বিমান চলাচলের ইতিহাসে নজিরবিহীন মর্মান্তিক সংযোজন। নীচে ভারতের উল্লেখযোগ্য বিমান দুর্ঘটনার তালিকা দেওয়া হল:

ভারতের উল্লেখযোগ্য বিমান দুর্ঘটনা

১. চারখি দাদরি মাঝআকাশে সংঘর্ষ (১২ নভেম্বর, ১৯৯৬)
হরিয়ানার চারখি দাদরির কাছে সৌদি আরবিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৭৬৩ এবং কাজাখস্তান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৯০৭ মধ্য-আকাশে সংঘর্ষে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় দুটি বিমানের মোট ৩৪৯ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য নিহত হন। ভুল যোগাযোগ এবং উচ্চতা নির্দেশনার লঙ্ঘন এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ছিল। এটি বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক মাঝ-আকাশের সংঘর্ষ হিসেবে পরিচিত।

২. এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ বোমা হামলা (২৩ জুন, ১৯৮৫)
কানাডা থেকে ভারতগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৮২ আটলান্টিক মহাসাগরের উপরে কানাডিয়ান শিখ উগ্রপন্থীদের বোমা হামলায় ভেঙে পড়ে। এই ঘটনায় ৩২৯ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য নিহত হন। এটি ভারতের বিমান চলাচলের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলাগুলির একটা।

৩. এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ৮৫৫ (১ জানুয়ারি, ১৯৭৮)
মুম্বাই থেকে দুবাইগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৪৭ বিমানটি টেকঅফের কিছুক্ষণ পর আরব সাগরে ভেঙে পড়ে। যন্ত্রের ত্রুটির কারণে পাইলটের দিশাহারা হয়ে যাওয়া এবং নিয়ন্ত্রণ হারানো এই দুর্ঘটনার কারণ ছিল। এতে ২১৩ জন যাত্রী।নিহত হয়।

৪. ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১১৩ (১৯ অক্টোবর, ১৯৮৮)
মুম্বাই থেকে আহমেদাবাদগামী এই বোয়িং ৭৩৭ বিমানটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে অবতরণের সময় কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় দৃশ্যমানতার অভাবে ভেঙে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় ১৩৫ জন যাত্রীর মধ্যে ১৩৩ জন নিহত হন। পাইলটের ভুল এবং বিমানবন্দরের অপর্যাপ্ত দৃশ্যমানতা রিপোর্ট এই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

৫. ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৬০৫ (১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০)
বেঙ্গালুরুর এইচএএল বিমানবন্দরে অবতরণের সময় এয়ারবাস এ৩২০ বিমানটি রানওয়ের আগেই নেমে যায় এবং ভেঙে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় ১৪৬ জন যাত্রীর মধ্যে ৯২ জন নিহত হন। পাইলটের ভুল এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ছিল।

৬. অ্যালায়েন্স এয়ার ফ্লাইট ৭৪১২ (১৭ জুলাই, ১৯৯৮)
পাটনা বিমানবন্দরের কাছে বোয়িং ৭৩৭-২এ৮ বিমানটি অবতরণের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি জনবহুল এলাকায় ভেঙে পড়ে। এতে ৫৫ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য এবং মাটিতে ৫ জন নিহত হন।

৭. এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট ১৩৪৪ (৭ আগস্ট, ২০২০)
কোঝিকোড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারী বৃষ্টির মধ্যে অবতরণের সময় এই বোয়িং ৭৩৭ বিমানটি রানওয়ে ছাড়িয়ে ১১০ ফুট নিচে খাদে পড়ে ভেঙে যায়। এই দুর্ঘটনায় ১৯০ জন যাত্রীর মধ্যে ২১ জন নিহত হন, যার মধ্যে দুই পাইলটও ছিলেন।

More Articles