উদ্ধব-রাজ এক মঞ্চে! কেন ২০ বছর পর এক সঙ্গে দুই ভাই?
Maharashtra : মঞ্চে রাজ্য সরকারের তিন ভাষানীতির সমালোচনা করেন রাজ ঠাকরে। মারাঠি ভাষা রক্ষার দাবি তুলে বলেন, “কেন বাচ্চাদের হিন্দি ভাষা পড়ার চাপ দেওয়া হচ্ছে?”।
এক মঞ্চে পাশাপাশি দুই ভাই, শিবসেনা (ইউবিটি)-র উদ্ধব ঠাকরে এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার রাজ ঠাকরে। ৫ জুলাই হিন্দি ভাষার আগ্রাসন রুখতে এবং মারাঠি ভাষা সংরক্ষণের জন্য মেগা র্যালির ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। পারিবারিক বিবাদের কারণে দুই ভাইয়ের যোগাযোগ ছিল না। ২০ বছর পর তাঁদের একসঙ্গে এক মঞ্চে দেখা গেল। শুধু তাই নয়, এই দিন দুই ভাই আবারও রাজনৈতিকভাবেও একজোট হয়ে লড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেই মঞ্চ থেকেই বিজেপির উদ্দেশেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তাঁরা।
মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার প্রধান রাজ ঠাকরে বলেন, দুই ভাইকে এক মঞ্চে আনার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের। তিনি বলেন, “উদ্ধব আর আমি ২০ বছর পর আবার একসঙ্গে। বালাসাহেব ঠাকরে যা করতে পারেননি, তা দেবেন্দ্র ফড়ণবীস করে দেখালেন।”
গত কয়েক বছর ধরে ভাষা নিয়ে কেন্দ্রের শাসকের সঙ্গে বিরোধীদের দ্বন্দ্ব চলছেই। মহারাষ্ট্রের বিজেপি-শিন্ডেসেনা-এনসিপি (অজিত)-র জোট সরকার রাজ্যটির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হিন্দিকে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুসারে ‘তিন ভাষা’ বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করছিল। এরপর থেকেই রাজ্যজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়। তীব্র বিরোধিতার কারণে এই নীতি আনা সম্ভব হয়নি। তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি বাধ্যতামূলক করার নির্দেশিকা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই জয় উদযাপন করতেই ৫ জুলাই ওরলিতে ‘আওয়াজ মরাঠিচা’ (মরাঠি কণ্ঠস্বর) সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- তেলেঙ্গানা বিস্ফোরণ: ৩৯ শ্রমিক মৃত্যুর কারণ কী? কেন তদন্তে গুরুত্ব নেই মিডিয়ার!
হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগে একসুরে কথা বলা শুরু করেছিল শিবসেনা (ইউবিটি)-র প্রধান উদ্ধব ও মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)-র প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান রাজ। এতদিন তাঁরা পৃথক পৃথকভাবে আওয়াজ তুলছিলেন। কিন্তু এই দিন মঞ্চ থেকে বিপুল জমায়েতের সামনে হাত ধরাধরি করে বার্তা দিতে দেখা গেল দু-ভাইকে।
মঞ্চে রাজ্য সরকারের তিন ভাষানীতির সমালোচনা করেন রাজ ঠাকরে। মারাঠি ভাষা রক্ষার দাবি তুলে বলেন, “কেন বাচ্চাদের হিন্দি ভাষা পড়ার চাপ দেওয়া হচ্ছে?”। উদ্ধব ঠাকরে আবার বলেন, “ভাষার প্রসঙ্গে, রাজ, আমি এবং এখানের সকলে একজোট। হ্যাঁ, আমরা গুন্ডা। যদি সুবিচার পাওয়ার জন্যে গুন্ডা হতে হয়, তবে আমরা গুন্ডাগিরি করব।”
রাজ ঠাকরে বলেন, “আপনাদের ক্ষমতা হলো ভোট। আমদের রাস্তায় ক্ষমতা রয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত (তিন ভাষানীতি) শিক্ষাবিদদের সঙ্গে কথা না বলেই নেওয়া হয়েছিল। ক্ষমতা থাকলেই, যা ইচ্ছে চাপিয়ে দেওয়া যায় না।”
আরও পড়ুন- কেন সংবাদমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে এফআইআর-এর নির্দেশ দিল জম্মু ও কাশ্মীর আদালত?
শিবসেনার উত্তরাধিকার হিসেবে রাজের চেয়ে নিজের ছেলে উদ্ধবকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বাল ঠাকরে। এই নিয়ে দুই খুড়তুতো ভাইয়ের মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। এরপর ২০০৬ সালে, রাজ ঠাকরে একটি নতুন দল গঠন করেন। সেই বিচ্ছেদের পর ২০ বছর কেটে গিয়েছে। ৫ জুলাই আবার এক সঙ্গে হলেন দুই খুড়তুতো ভাই।
যদিও দুই দল কীভাবে কাজ করবে বা তাঁদের একসঙ্গে কাজ করার রাজনৈতিক পরিকল্পনা কী, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি তাঁরা। তবে একই মঞ্চে দুই ভাইয়ের উপস্থিতি মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড়সড় পরিবর্তন আনতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এও বলছেন, এই মঞ্চ মারাঠি সমাজের ঐক্য ও সম্মানের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এখন দেখার, সত্যি কি মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমীকরণে কোনো পরিবর্তন আসবে?