বিজয় মাল্য: বিয়ার, বিমান, লাস্য — ৭০০০ কোটি চোরের বিলাসযাপন

Vijay Mallya: বিয়ারের পাশাপাশি কিংফিশার ব্র্যান্ডের সোডা এবং জলের বোতল বাজারে নিয়ে এলেন বিজয় মাল্য। বিয়ারের বদলে তিনি এই সমস্ত জিনিসের বিজ্ঞাপন করালেন এবং সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ল কিংফিশার ব্র্যান্ডের নাম।

কিছু কিছু নাম কেবল ব্যক্তি নয়— আস্ত এক যুগের পরিচয় বহন করে এবং তার গায়ে চিরস্থায়ী কালিমা লেপে দেয়। রাজনীতি, কর্পোরেট পুঁজিবাদ ও আত্মপ্রচারের মোহনায় যখন কোনও একক চরিত্র মাথা তুলে দাঁড়ায়, তখন সে হয়ে ওঠে ইতিহাসের এক অদ্ভুত উপাখ্যান। বিজয় মাল্য সেইরকম এক নাম, যাঁর চারপাশে গড়ে উঠেছিল দুর্বিনীত সমৃদ্ধির এক অলীক সাম্রাজ্য। ঝলমলে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে রাজ্যসভার গালিচাপাতা করিডোর, বিলাসবহুল এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তর থেকে প্রাইভেট জেটের জানালার বাইরে ছড়িয়ে থাকা আকাশ পর্যন্ত— তাঁর জীবন যেন ছিল এক বহুশ্রুত গ্ল্যামার, যার অন্তঃস্থলে বাস করত হিসাবরক্ষার ভাঙন, ঋণের কাঁটা, আর রাষ্ট্র-সমর্থিত নীরব দুর্নীতির অনুশাসন।

ভারতে একজন কৃষক যদি মাত্র এক লক্ষ টাকার ঋণ চান, তবে তার ঘাড়ে চেপে বসে কাগজপত্র, গ্যারান্টির ভার। সময়মতো ফেরত দিতে না পারলে লোন রিকভারি এজেন্ট এসে দাঁড়িয়ে যায় তাঁর দরজায়, এমনকী কোভিডের মতো সংকটের মধ্যেও নিস্তার মেলে না। আর এই নিয়ম কড়া হওয়াও উচিত কারণ, এসব টাকা সাধারণ মানুষের ঘাম-ঝরা পরিশ্রমে রোজগার করা টাকা। কিন্তু ঠিক তখনই কোনও এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী কোনও ব্যাংকে ঢুকলে নিয়মের কড়াকড়ি হঠাৎ হালকা হয়ে যায়। শুধু তাঁর নামই যথেষ্ট—না কোনও সিকিউরিটি, না কোনও বাস্তবসম্মত প্ল্যান—মিনিটের মধ্যে খুলে যায় ব্যাঙ্কের কোষাগার।

এমন অসংখ্য ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে এবং বিজয় মাল্য তার সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে, ঋণখেলাপির স্ট্যাম্প কপালে নিয়ে, তিনি ব্রিটেনের অভিজাত পাড়ায় বিলাসিতার জীবন কাটাচ্ছেন— যেখানে ভারতীয় আইন পৌঁছতেই পারে না। এ যেন এক মোহজালে গাঁথা গল্প যেখানে এক ফ্ল্যামবয়েন্ট ব্যবসায়ী আইনের চোখে ধুলো দিয়ে রাষ্ট্রেরই মাথায় ছড়ি ঘোরান।

বিজয় মাল্যর জীবন বুঝতে আমাদের স্বাধীনতার একটু আগে যেতে হবে। বিংশ শতকের শুরুর দিকে ভারতে এমন অনেক ছোট ছোট বিয়ার কোম্পানি তৈরি হয়েছিল যারা ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য বিয়ার তৈরি করত। এই সময়ে ১৯১৫ সালে ভারতে আগমন ঘটে টমাস নামের একজন ব্যক্তির, যিনি এই ছোট ছোট বিয়ার বানানোর কোম্পানিগুলোকে একত্রিত করে একটি বড় কোম্পানি তৈরি করেন। এই কোম্পানির নাম দেওয়া হয় ইউনাইটেড ব্রুয়ারিজ গ্রুপ। এই নতুন কোম্পানি স্থাপিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করে। মোটামুটি ৩০ বছর ভারতে দারুণভাবে ব্যবসা করার পর এই কোম্পানি নিজেদের শেয়ার মার্কেটে নিয়ে আসে। আর ঠিক সেই সময় দুন স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করা একজন প্রতিভাবান ব্যবসায়ী ভিত্তল মাল্যর আগমন ঘটে ভারতের মদ্যপানীয়ের বাজারে। তিনি বুঝতে পারেন, ইউনাইটেড ব্রুয়ারিজ কোম্পানিটি আগামী ভবিষ্যতে সারা ভারতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। তাই তিনি ধীরে ধীরে এই কোম্পানির শেয়ার কিনতে শুরু করেন। কিছু কিছু সময় অন্তর, এই কোম্পানির শেয়ার কিনতে কিনতে একটা সময় এই কোম্পানির সবথেকে বড় শেয়ার হোল্ডার হয়ে ওঠেন ভিত্তল মাল্য।

১৯৪৭ সালে ইংরেজরা ভারত ছেড়ে চলে যাবার সময় এই ইউবি গ্রুপের একটা বড় অংশের মালিক হয়ে যান ভিত্তল মাল্য। সেই সময় তাঁর বয়স মাত্র ২২ বছর। বয়স কম হলেও, তিনি এতটাই স্মার্ট এবং বুদ্ধিমান ছিলেন যে, ১৯৪৮ সালে অন্যদের পিছনে ফেলে নিজে ইউবি গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর, ভিত্তল মাল্যর নেতৃত্বে এই কোম্পানি অন্যান্য মদ্যপানীয় নির্মাতা কোম্পানিগুলোকে পিছনে ফেলে দ্রুত গতিতে এগোতে শুরু করে। ১৯৫১ সালে এই কোম্পানিটি ম্যাকডাওয়েল গ্রুপকেও অধিগ্রহণ করে ফেলে এবং হয়ে ওঠে ভারতের সবথেকে বড় অ্যালকোহল নির্মাতা কোম্পানি। এরই মাঝে ভিত্তল মাল্য বিবাহ করেন ললিতা রামাইয়াকে এবং ১৮ ডিসেম্বর ১৯৫৫ সালে তাঁদের ছেলে হয়, বিজয় মাল্য।

ভিত্তল মাল্য

আরও পড়ুন-বাংলাদেশ তার নীরব মোদি ও বিজয় মাল্য-দের নিয়ে কী করছে?

বিজয় মাল্য ছিলেন একেবারে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো সন্তান। যখন ভারতের অধিকাংশ ছেলেমেয়ে সাধারণ ডাংগুলি বা লুকোচুরির মতো খেলায় মেতে ছিল, সেই সময় বিজয় মাল্য ব্যাটারি চালিত গাড়ি নিয়ে খেলতেন, যেটা ভারতে সেই সময় পাওয়াই যেত না। বিজয় মাল্য যখন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন, তখন তিনি কলেজে ঢুকতেন নিজের স্ট্যান্ডার্ড হেরাল্ড গাড়িতে। আর ইচ্ছাকৃতভাবে সেই সময় গাড়ির সাইলেন্সার খুলে নিতেন তিনি, যাতে খুব বেশি আওয়াজ হয় আর সবার নজর তাঁর দিকেই পড়ে।

এই সময় থেকে ভিত্তল মাল্যের ব্যবসাও দ্রুত এগোতে শুরু করে। সেই সময় বিদেশি অনেক লিকার কোম্পানি অন্যান্য দেশে তৈরি হওয়া অ্যালকোহল ভারতে আমদানি করে বিক্রি করত। এর ফলে দাম অনেকটাই বেড়ে যেত এই সমস্ত অ্যালকোহলের। ফলে লাভের পরিমাণ অনেকটাই কম থাকত। ভিত্তল মাল্য ১৯৫৯ সালে এই কোম্পানিগুলিকে প্রস্তাব দেন— "আপনারা বাইরের দেশে অ্যালকোহল তৈরি করে এখানে আনবেন না। বরং ভারতে এসে এখানেই লিকার তৈরি করুন এবং এখানেই বিক্রি করুন।" বিদেশি কোম্পানিগুলি, রাজি হয় এবং সেখান থেকে শুরু হয় IMFL অর্থাৎ Indian Made Foreign Liquor। এখনও এই ধরনের অ্যালকোহল ভারতের বাজারে পাওয়া যায়।

এর কয়েক বছরের মধ্যেই বিজয় মাল্য কলেজ শেষ করেন। কলেজ শেষ হতেই, ১৯৭০ সালে বিজয় মাল্যকে পাঠানো হয় আমেরিকায় ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়াতে, যেখানে তিনি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ল ও অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এছাড়াও, ভিত্তল মাল্য আমেরিকার ইউবি গ্রুপের আমেরিকান হপস কর্পোরেশনে বিজয় মাল্যের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থাও করেন। এই সমস্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পরে বিজয় মাল্য ফেরেন ভারতে। ফিরেই ভারতের ইউবি গ্রুপের ব্যাটন নিজের হাতে তুলে নেন এবং নিয়ে আসেন কর্পোরেট স্ট্রাকচার।

এই পর্যন্ত ভালোই চলছিল মাল্য পরিবারের ব্যবসা। তবে, ১৯৭৭ সালে ঘটে একটা বড় ঘটনা। এই বছরে ভারতীয় রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন ঘটে। নতুন সরকার আসে এবং সেই সরকার ভারতজুড়ে অ্যালকোহলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ইউবি গ্রুপ পুরোপুরি অ্যালকোহলের ব্যবসার উপর নির্ভরশীল ছিল। অন্যান্য ক্ষেত্রও ছিল বটে, কিন্তু মূল আয় আসত লিকার থেকেই। নতুন নিয়মের কারণে দেশজুড়ে সমস্ত লিকার কোম্পানি একপ্রকার ধ্বংসের পথে। সবাই ভয়ে নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছিল কিন্তু ভিত্তল মাল্য ও বিজয় মাল্য ঠিক উল্টো পথে হাঁটলেন।

ভিত্তল মাল্যর যুক্তি ছিল— ভারতের মতো দেশে সরকার বেশিদিন এই নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখতে পারবে না। অ্যালকোহলকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ রাখা সম্ভব নয়। তাই এটা সাময়িক ব্যাপার। এই সুযোগে তাঁরা সস্তায় অন্যান্য অ্যালকোহল কোম্পানির অ্যাসেট কিনে নিতে থাকেন। আর কিছুদিন পরেই, যেমনটা ভিত্তল মাল্য ভেবেছিলেন, ঠিক তাই হয়— ভারতে আবার অ্যালকোহলের অনুমতি দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউবি গ্রুপের প্রতিযোগীরা সব ধ্বংস হয়ে যায়, আর ইউবি গ্রুপ দাঁড়িয়ে যায় আরও শক্ত পায়ে।

তবে ১৯৭৭ সালে নবগঠিত সরকারের নতুন নিয়মের ফলে কিছুটা হলেও চিন্তিত হয়ে পড়েন ভিত্তল মাল্য। শুধুমাত্র অ্যালকোহল ছেড়ে এবারে তারা অন্যান্য সেক্টরেও বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। এফএমসিজি, ফার্মা, হেলথ কেয়ারের মতো শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ শুরু করেন ভিত্তল মাল্য। কিন্তু আসল লাভ আসছিল সেই অ্যালকোহল ব্যবসা থেকেই। তাই লিকার কোম্পানির ট্যাগ মুছতে গিয়ে বেশ কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়ে ইউবি গ্রুপ।

কিংফিশারের উত্থান

১৯৭৮ সালে, বিজয় মাল্য কোম্পানির পুরনো নথিপত্র খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পান— ইউবি গ্রুপ বহু বছর আগে একটি কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছিল যার নাম ছিল ক্যাসেল ব্রুয়ারিজ, যার লোগো ছিল মাছরাঙা পাখির মতো। ইউবি গ্রুপ যদিও পরবর্তীতে ওই কোম্পানি বন্ধ করে দেয় কিন্তু বিজয় মাল্যর সেই লোগোটা খুব পছন্দ হয়। তিনি লোগোটা একটু পরিবর্তন করে নতুনভাবে প্রকাশ করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, ভারতের বিয়ার বাজারে এমন এক বিয়ার ব্র্যান্ড তৈরি করা, যাতে মোহন মেকেন ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যায়। প্রথমদিকে ভিত্তল মাল্য এই আইডিয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন কিন্তু বিজয় মাল্য শেষ পর্যন্ত তাঁকে রাজি করিয়ে ফেলেন। ১৯৭৮ সালে আবার আসে কিংফিশার বিয়ার। তবে তখনও এটা সারা দেশে পাওয়া যেত না। কারণ এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে মদ বিক্রি করতে অনেক নিয়ম ও নীতি থাকে। ফলে কেবল কয়েকটি রাজ্যেই এই ব্র্যান্ডের বিক্রি শুরু হয়।

এর মাঝেই মাত্র ৫৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ভিত্তল মাল্য। সাধারণ পরিবারে এমন ঘটনা ঘটলে মানুষ শোক পালন করে কিন্তু এই ব্যবসায়ী পরিবারে তখনই শুরু হয় আলোচনা— কোম্পানির দায়িত্ব নেবে কে? প্রথমে ঠিক করা হয়েছিল ইউবি গ্রুপের শীর্ষ ম্যানেজমেন্ট থেকে কেউ একটা চেয়ারম্যান হবেন। পরে দেখা যায় এই কোম্পানির মূল শেয়ার ছিল মাল্য পরিবারের হাতে। মাল্য প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির মাধ্যমে এই শেয়ার কিনেছিলেন বিজয় মাল্য। ফলে খুব সহজেই তিনি এই কোম্পানির নতুন চেয়ারম্যান হয়ে ওঠেন।

বিজয় মাল্য - দ্যা কিং অফ গুড টাইমস

চেয়ারম্যান হয়ে তিনি সবার আগে কিংফিশার ব্র্যান্ডকে আরও বড় করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দেখেন, দক্ষিণ ভারতে বিয়ারের চাহিদা সারা বছর খুব ভালো থাকে কিন্তু সেখানে বিয়ার তৈরির কারখানা নেই, যা আছে সব উত্তর ভারতে। কিন্তু উত্তর ভারতে শীতকালে বিয়ার চলে না। এর ফলে উত্তর ভারতের সমস্ত কারখানা শীতকালে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দক্ষিণ ভারতে সারা বছর সাপ্লাই দেওয়া সম্ভব হয় না। বিজয় মাল্য সিদ্ধান্ত নিলেন— উত্তরে অফ-সিজনে যে প্ল্যান্ট বন্ধ থাকত, সেগুলো খুলে রাখা হবে। উৎপাদিত বিয়ার দক্ষিণ ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই এক স্ট্র্যাটেজিতেই গোটা ভারতের বিতরণ ব্যবস্থায় কিংফিশার অনেক এগিয়ে যায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে। এছাড়াও, তাঁর কোম্পানি ভারতে প্রথম ক্যান বিয়ার নিয়ে আসে, যা ভারতীয় যুব সমাজে সেই সময় ব্যাপক 'হিট' হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে মোহন মেকেনের গোল্ডেন বিয়ার ব্র্যান্ডকেও পিছনে ফেলে দেয় কিংফিশার এবং হয়ে ওঠে ভারতের সবথেকে বড় বিয়ার ব্র্যান্ড। ট্যাগলাইন হয়, কিংফিশার: দ্যা কিং অফ গুড টাইমস।

এই ব্র্যান্ডের বিয়ার ভারতীয় যুবক যুবতীদের মধ্যে একটা জীবনধারায় পরিণত হয়। তবে, বিজ্ঞাপনের দিকে অনেক ধরনের সমস্যায় পড়েন বিজয় মাল্য। আদতে ভারতে এই ধরনের পণ্যের বিজ্ঞাপন করা কোনওদিনই সম্ভব ছিল না। কিন্তু ব্র্যান্ডকে তো বড় করতে হবে। তাই বিজ্ঞাপনের জন্য একটা বিকল্প রাস্তা ভাবলেন বিজয় মাল্য। শুরু করলেন সারোগেট অ্যাডভার্টাইজমেন্ট। বিয়ারের পাশাপাশি কিংফিশার ব্র্যান্ডের সোডা এবং জলের বোতল বাজারে নিয়ে এলেন বিজয় মাল্য। বিয়ারের বদলে তিনি এই সমস্ত জিনিসের বিজ্ঞাপন করালেন এবং সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ল কিংফিশার ব্র্যান্ডের নাম। পরবর্তীতে, কিংফিশার ইভেন্ট, কিংফিশার অ্যাওয়ার্ড, কিংফিশার ডার্বি পর্যন্ত চালু করেন বিজয় মাল্য। এমনকী নিজের বাড়ির নামও তিনি রাখেন কিংফিশার ভিলা।

কিন্তু জীবনের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট আসে যখন মাল্য চালু করেন— কিংফিশার সুইমস্যুট কালেকশন। এই ক্যালেন্ডারে ছবি তুলতেন অতুল কাসবেকর। বলিউডে সেই সময় একটা কথা চলত, যে অভিনেত্রী এই ক্যালেন্ডারে স্থান পাবেন, তাঁর ক্যারিয়ার হু হু করে এগোবে। দীপিকা পাডুকোন, ক্যাটরিনা কাইফ, সিনেমায় আসার আগে এই ক্যালেন্ডারেই পরিচিত হন। মাল্য শুধুমাত্র ব্র্যান্ড প্রসারে মন দেননি, তিনি আন্তর্জাতিকভাবেও নিজের কোম্পানিকে ছড়িয়ে দেন। ৫০টিরও বেশি দেশে কিংফিশার বিয়ার উপলব্ধ হয়ে ওঠে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই। যে ইউবি গ্রুপের ভ্যালুয়েশন ছিল মাত্র ৪০ কোটি টাকা, তা পৌঁছে যায় ৬০০০ কোটি টাকায়।

ফ্লামবয়েন্ট বিজয় মাল্য থেকে সাংসদ বিজয় মাল্য

২০০২ সালে বিজয় বুঝতে পারেন, যদি তাঁকে এই ব্যবসা আরও ভালোভাবে চালাতে হয়, তার জন্য সরকারের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু সব সময় তো আর নেতাদের ধরে এই কাজ করানো সম্ভব নয়। তাই তিনি নিজেই রাজনীতিতে প্রবেশের পরিকল্পনা করেন। নিজের রাজ্য কর্ণাটক থেকে ২০০২ সালে রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন বিজয় মাল্য। সেই সময় কংগ্রেস এবং জনতা দল, দুই তাঁকে সমর্থন করেছিল। রাজনীতিতে প্রবেশ ছিল তাঁর কৌশলগত পদক্ষেপ কারণ অ্যালকোহল শিল্প সরাসরি রাজ্য সরকারের অধীন। কর কাঠামো, পরিবহণ লাইসেন্স, উৎপাদন অনুমতি— সবকিছুতে প্রশাসনিক অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। রাজনীতিতে প্রবেশের মাধ্যমে তিনি শুধুমাত্র নিজের প্রভাব বাড়াননি, নিজের ব্যবসার সুরক্ষাও নিশ্চিত করেন। সংসদে উপস্থিত থাকার হার কম হলেও, প্রশাসনের উচ্চস্তরে তাঁর সংযোগ তৈরি হতে থাকে। এ সময় তিনি ইউবি গ্রুপের সুনামকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন, যার সুবিধা তিনি পরে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের প্রসারে কাজে লাগান।

কিংফিশার এয়ারলাইন্স - বিজয়ের পতনের শুরু

রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার ঠিক তিন বছর পর, ২০০৫ সালে তিনি নিজের ছেলের জন্মদিনে ‘উপহার’ হিসেবে কিংফিশার এয়ারলাইন্স চালু করেন, যার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ৯ মে। এটি কেবল একটি বেসরকারি বিমানসংস্থা ছিল না, ছিল এক কর্পোরেট স্বপ্ন— ভারতীয় আকাশে বিলাসিতার প্রতীক হিসেবে একটি জাতীয় অভিজ্ঞান গড়ে তোলা। শুরুতে এই এয়ারলাইন্সে ছিল উন্নত ফুড মেনু, স্ক্রিনযুক্ত সিট, উচ্চ মানের ইউনিফর্ম, প্রশিক্ষিত কর্মী এবং সৌন্দর্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব— যা বাজারে বিশাল আলোড়ন তোলে। কিংফিশার এয়ারলাইন্স কয়েক মাসেই একটি প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। তবে এই বিলাসিতা বহন করতে গিয়ে শুরু থেকেই এর লাভজনকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। বিজয় মাল্য সেই প্রশ্নে আমল দেননি কারণ তাঁর দৃষ্টিতে এই প্রকল্প ছিল এক ব্র্যান্ড আইকন তৈরির হাতিয়ার, মুনাফার নয়।

তবে এই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। বিজয় প্রথমদিকে যে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, তার অর্ধেক টাকাও তিনি তুলতে পারেননি। তবে প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড হিসেবে বিমানের মার্কেটে কিংফিশার এয়ারলাইন্স হয়ে উঠেছিল এক দৃষ্টান্ত। এমন অনেক মানুষ ছিলেন যারা শুধুমাত্র কিংফিশার এয়ারলাইন্সের এয়ার হোস্টেসদের দেখার জন্য টিকিট বুক করতেন। এই কোম্পানি একটা শক্ত ভিত্তি তৈরি করে ফেলে ভারতের এয়ারলাইন্স মার্কেটে। উচ্ছ্বসিত হয়ে, বিজয় আরও কিছু বিমান কেনার কথা ভাবেন। তাঁরা যান আইডিবিআই ব্যাংকে কিন্তু সেই ব্যাংক তাঁকে ঋণ দিতে অস্বীকার করে, কারণ সেই সময় ইউবি গ্রুপের বিরুদ্ধে রেগুলেটরি সমস্যা চলছিল। তাই বাধ্য হয়ে নিজের টাকাতেই বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নেন বিজয় মাল্য।

এয়ার ডেকান অধিগ্রহণ ও বিপর্যয়ের রূপরেখা

২০০৭ সালে বিজয় মাল্য, কিংফিশার এয়ারলাইনসকে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য নিয়ম ছিল— নতুন কোনও এয়ারলাইন্সকে অন্তত পাঁচ বছর ঘরোয়া রুটে চলার পরে তবেই আন্তর্জাতিক অনুমতি দেওয়া হবে। মাল্য এই বাধা এড়াতে ২০০৭ সালে অধিগ্রহণ করেন এয়ার ডেকান নামের একটি সাশ্রয়ী ফ্লাইট পরিষেবা। এর মূল ইউএসপি ছিল সাধারণ ভারতীয় যাত্রীর জন্য ফ্লাইটে ওঠার সুযোগ তৈরি করা। এয়ার ডেকান ছিল ভারতের সবথেকে সাশ্রয়ী বিমান পরিষেবা। বিলাসবিহীন পরিষেবা, সহজ বুকিং, কমদামি অথচ ভালো খাবার এসবের মাধ্যমে এয়ার ডেকানের খরচ কমানো হতো, যা ছিল বিজয় মাল্যের ভাবনার সম্পূর্ণ বিপরীত।

মাল্য এই ব্র্যান্ড অধিগ্রহণ করে তার নাম দেন কিংফিশার রেড। প্রথমদিকে এয়ার ডেকানের পরিষেবা পরিবর্তন না করলেও, পরবর্তীতে পরিষেবার মান ও খরচ বাড়িয়ে তিনি মূল ভাবনার বিপরীতে যান। ফলে সাশ্রয়ী যাত্রীরা সরে যান, আর বিলাসবহুল যাত্রীরা এই হাইব্রিড পরিষেবার প্রতি আকৃষ্ট হন না। ফলে কোম্পানিটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বিজয় মাল্য এইসব বাস্তবতা উপেক্ষা করে নিজেদের 'উন্নততর ব্র্যান্ড' হিসেবে প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।

ঋণের পাহাড়, দুর্নীতির গন্ধ ও রাষ্ট্রনির্ভর লোভ

কিংফিশার এয়ারলাইন্স ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়তে থাকলেও, মাল্য একের পর এক ব্যাংকের কাছে যান। তাঁর রাজনৈতিক সংযোগ ও কর্পোরেট ইমেজ কাজে লাগিয়ে তিনি মোট ১৭টি ব্যাংক থেকে কনসোর্টিয়াম ঋণ পান। এর মধ্যে শুধুমাত্র ভারতীয় স্টেট ব্যাংক থেকেই তিনি পান ১৬০০ কোটি টাকার ঋণ। একাধিক ক্ষেত্রে রবিবার বা অন্যান্য ছুটির দিনেও ব্যাংক খুলে লোন অনুমোদন করা হয়। এই ঋণ প্রক্রিয়াগুলি নিয়ে পরবর্তীকালে আরটিআই-এর মাধ্যমে জানা যায়— ব্যাংকগুলি কোনও প্রকৃত সিকিউরিটি বা মর্টগেজ ছাড়াই কেবল ব্র্যান্ড ভ্যালু ও বিজয় মাল্যর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে এত বড় অঙ্কের ঋণ মঞ্জুর করেছে। অনেক রিপোর্ট এও দাবি করে, এইসব ঋণ গ্রহণ করতে বিজয় মাল্যকে সাহায্য করেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।

এই ঋণের টাকায় বিজয় মাল্য কেনেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের বেঙ্গালুরুর ফ্র্যাঞ্চাইজি, নাম দেন রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। ৪৪৬ কোটি টাকার এই দলে বড় বড় তারকা খেলোয়াড়দের শামিল করেন বিজয়। একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এই দলের অন্যতম মুখ ছিলেন বিজয় মাল্য। এছাড়াও তিনি কিনে ফেলেন একটি ফর্মুলা ওয়ান রেসিং টিম, কিনে ফেলেন ফ্রান্সের একটি বিলাসবহুল ভিলা, বিলাসবহুল গাড়ি, বিদেশি কুকুর এবং ব্যক্তিগত বিমান।

অপরদিকে, কোম্পানির মধ্যেও ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে নানা সমস্যা। কর্মীরা মাসের পর মাস বেতন পান না, জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন একের পর এক নোটিশ জারি করে বলে বকেয়া না পেলে তারা তেল সরবরাহ করবে না, চেক বাউন্স হয় এবং বিমানবন্দরগুলিতে অগ্রিম অর্থ ছাড়া প্লেন নামাতে না দেওয়ার নিয়ম জারি হয়। ফলে বিপদ বাড়তে শুরু করে বিজয় মাল্যর। ২০১০ সালে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের মোট লোকসান দাঁড়ায় ৪০০ কোটি টাকা এবং কর বকেয়া থাকে ১৫০ কোটি টাকা। এরপরও মাল্য নিজের বেতন নির্ধারণ করেন ৩৩৩ কোটি টাকা। করদাতাদের টাকা নিয়ন্ত্রণহীন বিলাসে ব্যয় হয় অথচ নিজের কোম্পানির কর্মচারীদের তিনি বেতন দেন না।

প্রশাসনিক নীরবতা ও বিতর্কিত পলায়ন

২০১০ সালের পর থেকেই ভারতের অর্থ দফতরের নজরে আসতে শুরু করে কিংফিশারের গাফিলতিগুলি। সাংসদ হওয়ার সুবাদে কিছুদিনের জন্য তিনি ইডির নাগাল থেকে বেঁচেছিলেন ঠিকই কিন্তু ২০১২ সাল থেকে সব কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে। ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেখা যায় কিংফিশার এয়ারলাইন্স কোম্পানির তখনও পর্যন্ত ১৮৪ কোটি টাকার কর বকেয়া রয়েছে। সেই প্রথম কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে বড় পদক্ষেপ করা হয়। এরপর ২০১২ সালের ১৫ অক্টোবর কিংফিশার এয়ারলাইন্সের ছাড়পত্র বাতিল করে দেওয়া হয়। এর আগে, ৩ অক্টোবর কিংফিশারের কর্মচারীরা বিজয় মাল্যর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান, কারণ তাঁরা ছয় মাস ধরে বেতন পাচ্ছিলেন না, ঘর ভাড়া দিতে পারছিলেন না, EMI আটকে যাচ্ছিল, সন্তানদের নাম কেটে দেওয়া হচ্ছিল স্কুল থেকে কিন্তু মাল্য তখনও ছিলেন ফ্রান্সে, গাড়ি কিনছিলেন, বিলাসবহুল ভিলাতে থাকছিলেন।

এই সময়ে সরকারের পক্ষ থেকেও তদন্ত শুরু হয়। ২০১৪ সালে ভারত সরকার সংসদে জানায় বিজয় মাল্য ৭০০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি করেছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছে। এরপর ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে এই মামলায় প্রবেশ করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তবে প্রশ্ন  ছিল— বিজয়কে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? ২০১৬ সালে ইডি লুক আউট অ্যান্ড ডিটেইন নোটিশ জারি করে, যাতে মাল্যর নাম অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু সিবিআই প্রভাব খাটিয়ে সেই সার্কুলারের ভাষা বদলে ‘ডিটেইন’ না রেখে ‘রিপোর্ট’ বসিয়ে দেয়। এর সুযোগেই বিজয় মাল্য ২০১৬ সালের ২ মার্চ রাতে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ৫৫টি স্যুটকেসসহ লন্ডন পালিয়ে যান। এর মাত্র একদিন আগেই তিনি সংসদে উপস্থিত ছিলেন। প্রশ্ন ওঠে, কেন তাঁকে বের হতে দেওয়া হলো? কে অনুমতি দিল? এই ঘটনার পর জানা যায়, সেদিন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ছিলেন রাকেশ আস্থানা এবং তিনিই সার্কুলারের ভাষা বদলের অনুমোদন দেন। এমন একটি স্পর্শকাতর ইস্যুতে প্রশাসনের এই উদাসীনতা ও সম্ভবত ইচ্ছাকৃত গাফিলতি তাকে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন-লোপাট কোটি কোটি টাকা, ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্ক জালিয়াতির শিকড় কতটা গভীরে?

প্রত্যর্পণ, ব্রিটেনের অবস্থান ও ভারতীয় ব্যর্থতা

পলায়নের পর ভারত সরকার ইন্টারপোল রেড কর্নার নোটিস জারি করে এবং ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাঁকে ফেরত আনার চেষ্টা চালায়। ব্রিটেনের আদালত ২০১৮ সালে মাল্যর প্রত্যর্পণ অনুমোদন করলেও, মাল্য তাৎক্ষণিকভাবে আপিল করেন। ব্রিটিশ আদালতে তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেন, ভারতে ন্যায্য বিচার পাওয়া যাবে না এবং তাঁর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে পারে। এইসব যুক্তি ও ভারতীয় জেল ব্যবস্থার দুরবস্থা উল্লেখ করে মাল্য তাঁর প্রত্যর্পণ বিলম্বিত করেন। এর মধ্যে তিনি ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেন এবং নিজেকে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেন না। আজও তিনি ব্রিটেনেই আছেন আইন, সংযোগ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার ফাঁকফোকর চমৎকারভাবে ব্যবহার করে।

বিজয় মাল্যর রাজা হয়ে ওঠা এবং তারপর নিজেকে দেউলিয়া দেখিয়ে এহেন পলায়ন একটি দেশের শাসনব্যবস্থার এক প্রতিচ্ছবি যেখানে আইনের চোখ যেমন গরিবের প্রতি কঠোর, ঠিক তেমনই ধনীদের প্রতি দুর্বল। একজন কৃষক মাত্র ২০,০০০ টাকা না দিলে তাঁর গরু, জমি, এমনকী ঘরের চাল পর্যন্ত নিলামে ওঠে। অন্যদিকে, মাল্যের মতো একজন ব্যক্তি হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে বিদেশে বসে আইনের ফাঁক গুনতে পারেন। এই কাহিনির পরতে পরতে রাষ্ট্রের, ব্যাংকের, প্রশাসনের ও রাজনীতির এক অদৃশ্য যোগসূত্র বারবার ফুটে ওঠে। রাষ্ট্রের ও রাষ্ট্রের আইন ব্যবস্থার ব্যর্থতাকে বারবার চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করেন বিজয় মাল্যর মতো মানুষ।

বিজয় মাল্য পালিয়েছেন কিন্তু রেখে গেছেন কিছু উত্তরহীন  প্রশ্ন— এই দেশ আসলে কার জন্য চলে? তাঁদের জন্য, যারা আইন মানে? না কি, তাঁদের জন্য, যাঁরা আইন বানান? এই কাহিনির শেষ নেই কারণ দুর্নীতির গল্প কখনই শেষ হয় না, কেবল রূপ পাল্টায়, চরিত্র বদলায় কিন্তু ব্যবস্থার গায়ে রয়ে যায় একই কলঙ্ক। যতদিন না রাষ্ট্র নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে শিখবে, ততদিন বিজয় মাল্যর মতো মানুষেরা শুধু পালাবে না, তারা ফিরে ফিরে আসবে, আলাদা নামে, আলাদা মুখে। আর আমরা শুধু সকালে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় শিরোনাম দেখে যাব চুপ করে!

More Articles