পাকিস্তানের পাল্টা, সিমলা চুক্তির স্থগিতাদেশে কী প্রভাব পড়বে ভারতে?
Simla Agreement: ১৯৭২-এর ২ জুলাই সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। লক্ষ্য ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি ফেরানো এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা।
পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ঘোষণার পরই বৃহস্পতিবার পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে আটটি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে। ভারতের মোক্ষম অস্ত্র ছিল সিন্ধু জল চুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা। আর পাকিস্তানের অন্যতম কড়া পদক্ষেপ হলো সিমলা চুক্তি স্থগিত করা। কী এই সিমলা চুক্তি? এর ফলে কী প্রভাব পড়তে পারে ভারতে?
সিমলা চুক্তি কী?
১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর, ১৯৭২-এর ২ জুলাই সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। লক্ষ্য ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি ফেরানো এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। এই যুদ্ধের ফলে পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ভারতের হস্তক্ষেপে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। এরপর হিমাচল প্রদেশের সিমলায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলি ভুট্টো স্বাক্ষর করেছিলেন এই চুক্তিতে। এটি ছিল অভাবনীয় এক কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত। যুদ্ধের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক করতে এবং ভবিষ্যতে যোগাযোগ অটল রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই চুক্তির শর্তগুলির।
আরও পড়ুন- কাশ্মীরের জবাবে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত! ভারতের সিদ্ধান্তে কোন বিপদের মুখে পাকিস্তান?
সিমলা চুক্তির শর্ত
•আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
•জম্মু ও কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতির ফলে যে নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারিত হয়েছে, ভারত এবং পাকিস্তান উভয় পক্ষই তা মেনে চলবে। পারস্পরিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও কোনও পক্ষ একতরফা এর পরিবর্তন চাইবে না। এই রেখা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে হুমকি বা বলপ্রয়োগ থেকে উভয় পক্ষ বিরত থাকবে।
•চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে দুই দেশকে সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নিতে হবে।
এই চুক্তি স্থগিত হওয়া কেন চিন্তার?
এমন সময় পাকিস্তানের এই চুক্তি স্থগিত করেছে, যখন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কই প্রবল চাপের মুখে। ২০১৯ সালের অগাস্টে ভারত ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার অবলুপ্তি ঘটায়। এটি উভয় পক্ষের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে অচলতা সৃষ্টি করে। ইসলামাবাদ তখন থেকেই সম্পর্ক খারাপ করেছে এবং বারবার কাশ্মীর সমস্যার আন্তর্জাতিকীকরণ করেছে - যা সিমলা চুক্তিতে নির্ধারিত দ্বিপাক্ষিক সিদ্ধান্তের বিপরীত।
আরও পড়ুন- পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সবটা জানেন? যে অভিযোগ তুলছেন পাক ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া
সিমলা চুক্তির স্থগিতাদেশ পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি কৌশলগত পরিবর্তন আনতে পারে। তারা এখন কাশ্মীর সংঘাতকে আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য তৃতীয় পক্ষের - সম্ভবত জাতিসংঘ বা চিনের মতো মিত্র বা ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) হস্তক্ষেপ চাইতে পারে। এমন হলে সিমলা চুক্তির নীতির সরাসরি লঙ্ঘন করা হবে।
নিয়ন্ত্রণ রেখার (LoC) উপর সম্ভাব্য প্রভাব
দীর্ঘদিন ধরেই নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতে পাকিস্তান বারবার এই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। প্রায়শই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, সীমান্তের ওপার থেকে গোলাবর্ষণ এবং অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে। সিয়াচেন থেকে শুরু করে কার্গিলে যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি সেনা নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করেছে। তবে এ বিষয়ে ভারতের অভিযোগ তারা মানতে চায়নি। এবার পহেলগাঁও কাণ্ডের পর ভারতের পদক্ষেপের পাল্টা দিতে গিয়ে সেই সিমলা চুক্তি স্থগিত করার হুঁশিয়ারি দিল ইসলামাবাদ।
যদি সিমলা চুক্তির অধীনে নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন না করার প্রতিশ্রুতি না রক্ষা হয়, তাহলে দুই দেশ যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে। যদিও পাকিস্তানের এই চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণার বিষয়ে ভারত এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।