Trump Big beautiful bill: ট্রাম্পের নতুন বিগ বিউটিফুল বিল কী?

Trump: জো বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন তিনি পরিবেশবান্ধব যানবাহন ও প্রযুক্তি ব্যবহারে কর ছাড় চালু করেছিলেন। কিন্তু নতুন বিলে তা প্রায় নেই।

৫ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ নতুন কর ও ব্যয় বিল পাস করেছে। বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত। উচ্চকক্ষ সিনেটে মাত্র একটি ভোটের ব্যবধানে ১ জুলাই বিলটি পাস হয়েছে। বিলটির নাম দেওয়া হয়েছে ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল। বিলটির পক্ষে-বিপক্ষে সমান ভোট পড়েছিল। তার জন্য রিপাবলিকান সিনেটর ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও ভোট দেন। নিম্নকক্ষের ভোটেও খুব বেশি ব্যবধান ছিল না। মাত্র ৪টি (২১৮-২১৪) ভোট বেশি পেয়েছে রিপাবলিকানরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪জুলাই স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে তাঁর 'ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট' স্বাক্ষর করেছেন। ট্রাম্প দাবি করেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ফের মহান বানানোর জন্য এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ'। অন্যদিকে ট্রাম্পের নতুন বিল আসতে না আসতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় রাজনৈতিক পার্টি খোলার ইঙ্গিত দিয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। জানা যাক, বিগ বিউটিফুল বিল কী? কেন এই নিয়ে বিতর্ক?

নতুন বিলের খরচ কমাতে দেশটির দুটি প্রধান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে বাজেট কমানো হয়েছে এবং কিছু শর্ত রাখা হয়েছে। কর্মসূচি দুটি হলো ‘মেডিকেইড’ (দরিদ্র ও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবা) ও ‘সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম’ বা স্ন্যাপ (খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি)। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি প্রায়োরিটিজ অনুযায়ী, এই পরিবর্তনগুলির জন্য দেশটিতে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যসেবার সুবিধে এবং ৮০ লক্ষ মানুষ খাদ্যসহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

আরও পড়ুন- India-US trade: ট্রাম্পের বাণিজ্য চুক্তি! কেন সমস্যায় ভারত?

২০১৭ সালে ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ‘ট্যাক্স কাটস অ্যান্ড জবস অ্যাক্ট’ নামের একটি আইন পাস করেন। ওই আইনে উচ্চ আয়ের মানুষদেরই তুলনামুলক বেশি সুবিধে হয়েছিল। ২০২৫ সালের পর আইনটি বাতিলের কথা ছিল। নতুন বিলে আবার এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবং ২০২৮ সাল পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনও আরও বাড়ানো হয়েছে। এই আইনে ব্যক্তি করদাতাদের জন্য ১ হাজার ডলার, পরিবারপ্রধান (হেড অব হাউসহোল্ড) হলে ১ হাজার ৫০০ ডলার এবং দম্পতি হলে ২ হাজার ডলার ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বিলটিতে নতুন কিছু করছাড়ের কথাও বলা হয়েছে। তবে ট্রাম্পের মেয়াদ পর্যন্তই শুধু তা থাকবে। তিনি নির্বাচনী প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন টিপস ও ওভারটাইমের আয়ের ওপরও করছাড় দেওয়া হবে। নতুন আইনে এটি যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাঁরা তাঁদের জন্য ৬ হাজার ডলারের ছাড় রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে একটি শর্ত আছে, একক আয় যদি ৭৫ হাজার ডলারের বেশি হয় তবে তিনি আর ছাড় পাবেন না। এই সুবিধেগুলি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট মেয়াদ অবধি থাকছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসীদের ফেরাতে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। বন্দিশিবির পরিচালনা করতে ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ (আইস) সংস্থাকে ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলার দেওয়া হচ্ছে। এই কার্যক্রম চালাতে আরও অতিরিক্ত ১৪ বিলিয়ন (১ হাজার ৪০০ কোটি) ডলার এবং ২০২৯ সালের মধ্যে নতুন ১০ হাজার এজেন্ট নিয়োগের জন্যেও বাজেট বাড়ানো হয়েছে। মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর নতুন প্রতিরক্ষাকাঠামোর জন্যও আরও ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলার বরাদ্দ।

আরও পড়ুন-১৯৫৩ থেকে ২০২৫! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক কেন রক্তাক্ত হলো?

জো বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন তিনি পরিবেশবান্ধব যানবাহন ও প্রযুক্তি ব্যবহারে কর ছাড় চালু করেছিলেন। কিন্তু নতুন বিলে তা প্রায় নেই। বাড়িঘরের বিভিন্ন কাজে পরিবেশবান্ধব বা বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রেও ভর্তুকি ছিল। সেটিও আর নেই। শুধু তাই নয় প্রথমে উইন্ড ও সোলার প্রজেক্টেও অতিরিক্ত কর আরোপের কথা ছিল, কিন্তু সিনেটের সদস্যরা তা বাতিল করেছেন।

সরকারি ঋণের ক্ষেত্রে দেশটিতে ঋণের সীমা  বাড়ানো হয়েছে পাঁচ ট্রিলিয়ন (পাঁচ লাখ কোটি) ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণ নিলে সুদেও কর থেকে ছাড় দেওয়া হবে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের নতুন বিলে ধনীদের জন্য বেশি সুযোগ সুবিধে। নতুন বিলে নিম্ন আয়ের করদাতাদের গড় আয় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর অন্যতম কারণ হলো, স্ন্যাপ ও মেডিকেইড কর্মসূচিতে সুবিধা কমানো।

তবে শেষ মুহূর্তে সিনেটে কিছু সংশোধনও করা হতে পারে। এখন দেখার কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হচ্ছে?

More Articles