হাসিনা-কন্যাকে ছুটিতে পাঠাল হু! কী কী অভিযোগ সাইমার বিরুদ্ধে?
Bangladesh : জমি দুর্নীতি মামলায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর কন্যা সাইমা ওয়াজেদ পুতুল-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সাইমা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। সংস্থাটির দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অফিসের প্রধান ছিলেন তিনি। চার মাস আগে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন সংস্থা দুদক তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জালিয়াতির অভিযোগ এনে দুটি মামলা করেছিল। আর কী কী অভিযোগ সাইমার বিরুদ্ধে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘হেল্থ পলিসি ওয়াচ’ শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সংস্থাটির প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস কর্মীদের ইমেল করেছেন, সাইমাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে কেন ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, আনুষ্ঠানিক ভাবে তা জানায়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হু-এর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশে একক দল হিসেবে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লিগ। শেখ হাসিনা আওয়ামী লিগের সভানেত্রী তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতা গ্রহণের একদম শুরুতে নিরঙ্কুশ সমর্থন পেলেও, মানুষের মন রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশের হাসিনা সরকার। আওয়ামী লিগ সরকারের বিরুদ্ধে তিস্তা প্রকল্প, কোটা বিরোধী আন্দোলন, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পেনশন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো অভিযোগ উঠেছিল। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছিল। এরপর থেকে হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি এবং অপরাধের অভিযোগ মামলা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। বিভিন্ন অবৈধ সম্পদের খোঁজও পাওয়া গিয়েছিল। এমনকি, হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধেও একের পর এক অভিযোগ সামনে এসেছিল।
আরও পড়ুন- এক কথায় বীভৎস! কী রয়েছে বাংলাদেশের গুম সংক্রান্ত কমিশনের রিপোর্টে?
জমি দুর্নীতি মামলায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর কন্যা সাইমা ওয়াজেদ পুতুল-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত। চলতি বছর জানুয়ারি মাসেই হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা রুজু করেছিল। আদালতে এই মামলার চার্জশিটও জমা দেওয়া হয়েছিল। রাজধানীর আদালতেই সেই মামলা চলছিল। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছিল, ঢাকায় আবাসিক জমি প্রতারণা করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অভিযোগ, কন্যা পুতুলের অনুরোধেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কাজ করিয়েছিলেন। এই কাজে বাধা দেননি। এই ঘটনায় সরকারের একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। রাষ্ট্র পোষিত সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজুক)-এর মাধ্যমে এই জমি আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।
দুদকের আইনজীবী আহমেদ সালাম সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন, এই মামলার তদন্তের রিপোর্ট চলতি বছরের ৪ মে জমা দেওয়ার কথা ছিল। অভিযুক্তরা পলাতক বলেই তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। চার্টশিটে দাবি করা হয়, হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অসৎ উপায়ে পুতুল ওই জমি অধিগ্রহণের জন্য বায়না করেন। তাঁদের পারিবারিক জমি থাকা সত্ত্বেও রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠে ওই জমি দখল করা হয়। অভিযোগ এও উঠছে যে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজুক)-কে কিছু না জানিয়েই সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে জমি আত্মসাৎ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন-ভাষা আর ধর্মের জাল থেকে কোনওদিন মুক্ত হতে পারবে বাংলাদেশ?
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কাজ শুরু করেন পুতুল। তবে তার এ নিয়োগ নিয়েও শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। অভিযোগ, ‘হু’-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার সময় ভুল তথ্য দাখিল করেছিলেন সাইমা। সেই কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও রুজু হয়। হাসিনা বিরোধীরা অভিযোগ করে, মায়ের প্রভাবেই ২০২৪ সালে হু-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান হন সাইমা।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এমনকী, ভারত সরকার হাসিনার এ দেশে থাকা নিয়ে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখেছে। সম্প্রতি শেখ হাসিনার বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থানে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অডিও ফাঁস হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তবে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে নিয়ে ভারত নিজেদের অবস্থান বদলায়নি।
প্রশ্ন উঠছে, সাইমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলার কারণেই কি তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই পদক্ষেপ নিল?