Long COVID: কেন মহিলাদের মধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের ঝুঁকি বেশি?
Long COVID: : জানা যাচ্ছে, নারী-পুরুষ লিঙ্গভেদে লং কোভিডের প্রভাব ক্রিয়াশীল হলেও, কোভিড-এ গুরুতর আক্রান্ত হওয়া নারীদের মধ্যেই দীর্ঘমেয়াদি উপসর্গের আশঙ্কা বেশি।
কোভিড-১৯-এর ভয়াবহরূপ আমরা ভুলতে পারিনি এখনও। নতুন-করে সংক্রমিত না হলেও, কোভিডের নানান উপসর্গ থেকে গেছে অনেকের মধ্যেই। কোভিড-১৯-এর ভাইরাস মানুষের শরীরে কতখানি প্রভাব ফেলেছে, সে-বিষয়ে গভীরভাবে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছেন গবেষকরা। এ-কথা স্পষ্ট যে, কোভিড-১৯ শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক একটি সংক্রমণ নয়, সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও, দীর্ঘদিনব্যাপী এর প্রভাব থাকতে পারে। একেই গবেষকরা বলছেন: লং কোভিড।
করোনা ভাইরাস শরীরে অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি করে নিলে এ-ধরনের দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গ লক্ষ করা যায়। জানা যাচ্ছে, নারী-পুরুষ লিঙ্গভেদে লং কোভিডের প্রভাব ক্রিয়াশীল হলেও, কোভিড-এ গুরুতর আক্রান্ত হওয়া নারীদের মধ্যেই দীর্ঘমেয়াদি উপসর্গের আশঙ্কা বেশি। ৬৫ বছরের অধিক বয়সি মহিলাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম। এ-বয়সে নারীদের শারীরিক জটিলতা নানাভাবে বেড়ে যায়। ফলে, কোভিডের উপসর্গও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশিই থাকে। ডাক্তাররা বলছেন, যাঁদের হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যা বা ডায়াবেটিস আগে থেকেই ছিল এবং টিকাও নেননি, এমন মহিলাদের লং কোভিডের আশঙ্কা অনেকটাই বেশি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ রিকভার-এর একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, পুরুষদের গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার বেশি হলেও, মহিলাদের মধ্যে কোভিডের উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশিই থাকে। জামা নেটওয়ার্ক ওপেন-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় ২০২১ থেকে ২০২৪ সালে কোভিড-আক্রান্ত এমন ১২,২০০ জনেরও বেশি মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের দীর্ঘস্থায়ী কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা ৩১-৪৪ শতাংশ বেশি ছিল। যাঁরা গর্ভবতী নন এবং মেনোপজ হয়নি, বিশেষভাবে তাঁদের মধ্যেই কোভিডের দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গের আশঙ্কা স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছিল। গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক ডিম্পি শাহ জানিয়েছেন, গর্ভাবস্থা, সন্তানপ্রসব, মেনোপজ-এর কারণে মহিলাদের ওপর কোভিড-এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়েছে। তাঁর দাবি, এ-বিষয়ে সারা পৃথিবীতে এটিই প্রথম গবেষণা!
আরও পড়ুন-কোভিড টিকা আদৌ নিরাপদ? কী বলছে আইসিএমআর এবং এনসিডিসি?
বয়স, লিঙ্গ ও শারীরিক অসুস্থতার মতো বিষয়গুলি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে যে মহিলাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের ঝুঁকি ৩১% বেশি। এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে, অটোইমিউন অবস্থা এবং কোভিড-আক্রান্ত হওয়ার পর অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা মহিলাদের মধ্যেই বেশি। এর ফলে, মহিলাদের মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলে প্রভাব পড়ছে বলেও জানা গেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ রিকভার-এর এক গবেষণায়। যেসব মহিলারা লং কোভিড-এ ভুগছেন বা কোনো ভাইরাল ইনফেকশনের পর যাঁদের অটোইমিউন ডিজিজ হয়েছে, তাঁদের মধ্যে জিনগত পরিবর্তনও লক্ষণীয়।
ক্লিভল্যান্ডের মেট্রোহেলথ মেডিকেল সেন্টারের রিউমাটোলজি-র পরিচালক নোরা জি সিঙ্গার 'দ্য রিকভার'-এর প্রবীণ লেখক। নোরা জি সিঙ্গারের গবেষণা জানাচ্ছে, ১৮-৩৯ বছর বয়সি পুরুষদের তুলনায়, একই বয়সের গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কোভিড-এর ঝুঁকি কম। একইভাবে, ৪০-৫৪ বছর বয়সি যেসব মহিলাদের মেনোপজ ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, তাঁদের তুলনায় যাঁদের মেনোপজ এখনও হয়নি, সেইসব মহিলাদের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। মহিলাদের যৌনতা, গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজ-এর মতো বিষয়গুলি কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তুলছে তা গবেষণাপত্রটি সামনে আনায় স্পষ্ট হয়েছে নির্দিষ্টভাবে মহিলারাই কেন দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের উপসর্গে বেশি ভুগছেন! দীর্ঘস্থায়ী কোভিড আক্রান্তের ক্ষেত্রে প্রধানত ৪টি কারণ অনুমান করা হচ্ছে। কারণগুলি হল:
১. ভাইরাল ইনফেকশন।
২. যে-ভাইরাসগুলি এতদিন শরীরেই ছিল, তারা হঠাৎ জেগে উঠেছে।
৩. শরীরের টিস্যু এবং অর্গানের ইনফ্লেমেশন।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
'মেড স্পেস'-এর একটি লেখা থেকে জানতে পারা যায়, একাধিক গবেষণা অনুযায়ী, লিঙ্গ বিশেষে কোভিড দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার অন্যতম কারণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। মেয়েদের শরীরে রয়েছে দুটো এক্স ক্রোমোজোম। তার মধ্যে একটি নিষ্ক্রিয় এবং আরেকটি অসম্পূর্ণ। অন্যদিকে, ছেলেদের শরীরে থাকে একটি এক্স ও একটি ওয়াই ক্রোমোজোম। কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেনের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আকিকো ইওয়াসাকি কোভিড শুরু হওয়ার পর থেকে এই নিয়ে অসংখ্য গবেষণায় নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়ে আছেন। আকিকো 'মেড স্পেসে'-কে বলেছেন, কিছু কোষ এক্স ক্রোমোজোমের 'নিষ্ক্রিয় জিন' থেকে জিন প্রকাশ করে। এর মধ্যেই থাকে রোগ প্রতিরোধক জিন, যে-কোনো সংক্রমণ এবং টিকা নেওয়ার সময় সেই প্রতিরোধক জিন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর ফলেই, অটোইমিউন তৈরি হয়।
আরও পড়ুন-কমিয়ে দেখানো হয়েছে সংখ্যা? সরকারি নথিতেই উঠে আসছে কোভিডে মৃত্যুর গরমিল তত্ত্ব
এখানে যৌন হরমোনগুলিরও ভূমিকা রয়েছে। যেমন, পুরুষদের মধ্যে বেশিমাত্রায় থাকে টেস্টোস্টেরন। ইওয়াসাকি জানাচ্ছেন, টেস্টোস্টেরন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক অংশে কমিয়ে দেয়। ফলে, পুরুষদের মধ্যে কোভিড-আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও, তা দীর্ঘমেয়াদী না-হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অন্যদিকে, ইস্ট্রোজেন হরমোন অ্যান্টিবডি তৈরি এবং টি কোষের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে সংক্রমণ থেকে দ্রুত সরিয়ে তুলতে পারে। এই রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী কোভিড সংক্রমণ হতে দেয় না।
আবার, 'জার্নাল অফ সেক্স্যুয়াল মেডিসিন'-এর তথ্য অনুযায়ী, যেসব মহিলারা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের অনেকেরই যৌন আকাঙ্ক্ষা, উত্তেজনা, তৃপ্তি এবং সামগ্রিক যৌন কার্যকারিতা কোভিড-এর পর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। তবে, গবেষণাপত্রটি এর কারণ হিসেবে কেবল কোভিড সংক্রমণকেই নির্দেশ করতে চায়নি। সামাজিক পরিবর্তনও এর একটি বিশেষ কারণ হতে পারে। গবেষকদের মতে, এ-সম্পর্কে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।