Caste Census: কেন হঠাৎ জাতগণনার পক্ষে মত দিলেন মোদী?
Caste Census : তবে, এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। জাতগণনার তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং তার ভিত্তিতে নীতি প্রণয়ন একটি জটিল কাজ। এছাড়া, আরএসএস-এর মতো সংগঠন এই প্রক্রিয়ায় কী প্রতিক্রিয়া দেয় তাও দেখার।
জনগণনার পাশাপাশি জাতগণনা হবে। আকস্মিক ভাবেই জাতগণনার পক্ষে মত দিয়েছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী, যিনি একদা জাতগণনার দাবিকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই, তাঁর এই মনবদল রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। একটা বড় অংশ বলছে, এই ঘোষণা তাঁর দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং এর মতাদর্শগত মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) দীর্ঘদিনের অবস্থানের বিপরীত। তাহলে কেন এই সাংঘর্ষিক অবস্থান? কেন হঠাৎ মত পরিবর্তন? এর পিছনে কী রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ কাজ করছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে চাইছে এই প্রতিবেদন।
বিহারের নির্বাচনী সমীকরণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন এই সিদ্ধান্তের একটি বড় কারণ। এই সিদ্ধান্ত একান্তই ভোটমুখী। বিহারের রাজনীতিতে জাত একটি প্রধান বিষয়। বিজেপির সহযোদ্ধা জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডি(ইউ)-এর নেতা নীতীশ কুমার ২০২২ সালে একটি জাতভিত্তিক জরিপ করেছিলেন। তিনি জাতগণনার পক্ষে একাধিকবার মত দিয়েছিলেন সে সময়। মোদী সরকার যদি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করত, তবে বিরোধী কংগ্রেস-রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) জোট এই বিষয়টিকে নির্বাচনী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারত। ফলে, জাতগণনায় সমর্থন দিয়ে মোদী এই সম্ভাবনাকে নিষ্ক্রিয় করতে চেয়েছেন। বিহারে জেডি(ইউ)-এর সঙ্গে জোট অক্ষুণ্ণ রাখাও এর একটি লক্ষ্য। কারণ এই জোট নড়বড়ে হলে টান পড়বে এনডিএ-এর অস্তিত্বে। মনে রাখতে হবে শুধু বিহার নয়, আগামী বছর ভোট রয়েছে বাংলা, অসম, কেরলে। সেখানেও ওবিসি ভোটের ব্যপক প্রভাব রয়েছে।
বিরোধীদের চাপ
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে জাতগণনাকে সামাজিক ন্যায়ের একটি প্রধান বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছেন। সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি-এর মতো আঞ্চলিক দলগুলোও এই দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়েছে। এই সম্মিলিত চাপ মোদীকে তাঁর অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে বলেই মনে করছে বিশ্লেষকরা। বিরোধীদের এই ইস্যুটি নিয়ে যে জনমত তৈরি হয়েছে, তা বিজেপির পক্ষে উপেক্ষা করা কঠিন। ৪০০ আসনের ধ্বজা নাড়িয়ে যারা ২৪০ টি আসন পেয়েছে, তারা বুঝতে চাইছে হাওয়া কোন দিকে। অন্য ভাবে বললে জাতগণনার সমর্থন দিয়ে মোদী বিরোধীদের হাত থেকে এই ইস্যুটি কেড়ে নিতে চাইছেন। প্রশ্ন হলো, এই সিদ্ধান্ত জনতাকে কতটা প্রভাবিত করবে?
বিজেপি ঐতিহাসিকভাবে উচ্চবর্ণের মধ্যবিত্ত ভোটারদের উপর নির্ভর করেছে, যারা মণ্ডল কমিশনের পর জাতভিত্তিক সংরক্ষণের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) এবং দলিতদের কাছ থেকে সামাজিক ন্যায়ের দাবি জোরালো হয়েছে। এই পরিবর্তিত গতিপ্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজেপি তাদের ভোটের ভিত্তি প্রসারিত করতে চাইছে। জাতগণনার সমর্থন এই কৌশলের একটি অংশ হতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের। আর এখানেই প্রশ্ন, বিজেপির পুরনো সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষের আবহ তৈরি করবে এই সিদ্ধান্ত?
সামগ্রিক ভাবে ভাবলে, জাতগণনার ফলে ওবিসি জীবনের খুঁটিনাটি ধরা পড়বে, যা অতীতে কখনও হয়নি। ফলে, ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর উপর গভীর প্রভাব পড়তে পারে এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে। পাশাপাশি এই গণনা সংরক্ষণ নীতি, নির্বাচনী কৌশল এবং সরকারি সুবিধার বণ্টনের ক্ষেত্রে নতুন দিক খুলে দিতে পারে।
তবে, এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। জাতগণনার তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং তার ভিত্তিতে নীতি প্রণয়ন একটি জটিল কাজ। এছাড়া, আরএসএস-এর মতো সংগঠন এই প্রক্রিয়ায় কী প্রতিক্রিয়া দেয় তাও দেখার।
তবে এ কথা ঠিক, জাতগণনার প্রস্তাব সামাজিক মাধ্যমে এবং জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এই সিদ্ধান্তকে কেউ কেউ সামাজিক ন্যায়ের দিকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ এটিকে নিছক রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই বিবেচনা করছেন। বিহারের মতো রাজ্যে, যেখানে জাতভিত্তিক রাজনীতি প্রবল, এই ঘোষণা ভোটারদের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। তবে সব পক্ষই মানছে, নরেন্দ্র মোদীর জাতগণনার সমর্থন একটি অতি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক পদক্ষেপ, যার মূলে রয়েছে নির্বাচনী কৌশল, বিরোধীদের পালের হাওয়া কেড়ে নেওয়া এবং সমাজের পরিবর্তিত দাবিগুলিকে বুঝতে চাওয়ার আর্তি। বিজেপি তা থেকে কতটা লাভবান হয়, উত্তর পাওয়া যাবে আগামী দিনে।