রাশিয়া কেন আফগানিস্তানে তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিল?
Taliban : রাশিয়া আফগানিস্তান থেকে বিশাল অর্থনৈতিক সুবিধা পায়। বিশেষ করে জ্বালানি, পরিবহন এবং কৃষিক্ষেত্রে। অর্থনৈতিক লাভের জন্যই তালিবানের সঙ্গে রাশিয়া সুসম্পর্ক গড়ে তুলছে।
রাশিয়া ৩ জুলাই আফগানিস্তানে তালিবান শাসনকে 'আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি' দিয়েছে। কাবুলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনভ এবং আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলাভি আমির খান মুত্তাকির বৈঠকের পর এই ঘোষণা করা হয়েছে। আফগান কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তকে একটি "ঐতিহাসিক পদক্ষেপ" এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি নতুন সূচনা বলে উল্লেখ করেছেন। তবে এই নিয়ে এখনও জটিলতা রয়েইছে কারণ, তালিবানদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে জাতিসংঘ এবং বিশ্ব মতামত গুরুত্বপূর্ণ।
নিউজ 18 লিখেছে, তাদের সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার তালিবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি তালিবানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সংগঠনটির পূর্ণ আন্তর্জাতিক বৈধতার সমস্যা থাকছেই। জাতিসংঘের প্রোটোকল বিভাগের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত তালিবান কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নই থাকবে। বেশিরভাগ দেশই তাদের স্বার্থের জন্য তালিবানের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
২০২১ সালে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে, অন্য কোনও দেশ এখনও পর্যন্ত আফগানিস্তানে তাদের সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু এখন রাশিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর পাশাপাশি, মস্কো তাদের নিষিদ্ধ সংগঠনের তালিকা থেকে তালিবানকেও বাদ দিয়েছে। যদিও চীন, ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো বেশ কয়েকটি দেশ তালিবানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রেখেছে।
আরও পড়ুন- Trump Big beautiful bill: ট্রাম্পের নতুন বিগ বিউটিফুল বিল কী?
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
গত দুই দশকে তালিবানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো হচ্ছিল। ২০০৩ সালে, রাশিয়া তালিবানকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। তবে, ২০২১ সালে তালিবানের পুনরুত্থান এবং পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাশিয়া তার অবস্থান পরিবর্তন করে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে, রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তালিবানকে নিষিদ্ধ সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল। এবার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল।
রাশিয়া কেন এই ঘোষণা করল?
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই স্বীকৃতি বাণিজ্য, অর্থনীতি, শক্তি, পরিবহন, কৃষি এবং অবকাঠামোর ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তারা আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূত গুল হাসানের কাছ থেকে পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছে অর্থাৎ রাশিয়া তালিবানকে অতিথি হিসেবে মেনে নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া মনে করে মধ্য এশিয়ায় স্বার্থ রক্ষার জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। আইএসকেপি আফগানিস্তানের পাশাপাশি রাশিয়াতেও হামলা চালিয়ে ছিল। অন্যদিকে ক্রেমলিনও আইএসকেপি-কে নিয়ে চাপে আছে। রাশিয়া নিরাপত্তায় সহযোগিতা এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে তালিবানের সাহায্য চায়।সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়া তালিবানকে বন্ধু হিসেবে দেখছে, বিশেষ করে ইসলামিক স্টেট-খোরাসান (ISIS-K)-এর মতো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন- India-US trade: ট্রাম্পের বাণিজ্য চুক্তি! কেন সমস্যায় ভারত?
রাশিয়া আফগানিস্তান থেকে বিশাল অর্থনৈতিক সুবিধা পায়। বিশেষ করে জ্বালানি, পরিবহন এবং কৃষিক্ষেত্রে। অর্থনৈতিক লাভের জন্যই তালিবানের সঙ্গে রাশিয়া সুসম্পর্ক গড়ে তুলছে।
অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক
রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, ইরান বা উজবেকিস্তানের মতো দেশ তাদের দেশের আফগান মিশনগুলি তালিবানের হাতে তুলে দিয়েছিল আগেই। তবে ভারত কিন্তু এখনও এটা করেনি। দেড় বছর হলো দিল্লিতেও আফগান দূতাবাসের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে তালিবান মুম্বাইতে কনস্যুলেটে ইকরামউদ্দিন কামিলকে 'ভারপ্রাপ্ত কনসাল' হিসেবে নিয়োগ করেছিল। ভারত তখন কোন আপত্তি জানায়নি। আবার যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাঙ্ক ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের একটি সাম্প্রতিক স্টাডিতে বলা হয়েছে, কাতার, চিন বা তুরস্কের মতো দেশগুলির তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত হলেও ভারতের সঙ্গে সেই সম্ভবনা নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাঙ্ক ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের স্টাডিজের তালিকায় পাকিস্তানেরও ৫ নম্বরে নাম রয়েছে কিন্তু ভারতের নেই।
আরও পড়ুন- Khan Younis: খান ইউনিসে রাতারাতি বাস্তুচ্যুতির নির্দেশ! কী বলছে জাতিসংঘ?
পহেলাগাঁও হামলার পর গত ১৫ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আফগানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ফোনালাপ হয়েছিল। জয়শঙ্কর এক্সেও সেই ফোনালাপ নিয়ে লেখেন। এই পোষ্টের কিছুক্ষণের মধ্যেই মুম্বাইয়ের আফগান কনস্যুলেটের পক্ষ থেকেও এক্সে পোস্ট করা হয়। অতীতে ভারত তালিবানের সঙ্গে কোনরকম সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহ দেখায়নি। তবে দু'পক্ষের মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে একাধিকবার কথাবার্তা হয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দুবাইতে বৈঠক করেছেন। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্কের মধ্যে যে ফাটল আছে, ভারত তাকেই কূটনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
চিনের প্রতিক্রিয়া
চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক বিবৃতিতে বলেছেন, চিনের লক্ষ আফগানদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা। তিনি বলেন, “আফগানিস্তানের একটি ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসাবে চিন সবসময় বিশ্বাস করে যে আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বাদ দেওয়া উচিত নয়”।
উল্লেখ্য, সময়ে সময়ে তালিবানদের বিরুদ্ধে নারীস্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ উঠেছে। এখনও পর্যন্ত কোনও পশ্চিমা দেশ তালিবানকে তেমন একটা জায়গা দেয়নি। কারণ, সমাজে নারীদের ভূমিকা নিয়ে তালিবানের নীতি, যেমন- নারীদের ঘর থেকে না বেরোতে দেওয়া, শিক্ষায়-কর্মক্ষেত্রে-খেলাধুলায় যোগদান না করতে দেওয়া। এখন দেখার রাশিয়ার এই পদক্ষেপের পর কূটনৈতিক কী প্রভাব পড়ে।