ইজরায়েল-ইরান সংঘর্ষে কেন ট্রাম্পের নিশানায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি?
Israel-Iran conflict: শুরু হয়েছে ট্রাম্প এবং খামেনির মধ্যে বাগবিতণ্ডা। সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার এক অপরকে নিশানা করে বার্তা দিচ্ছেন তাঁরা।
ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধ চলছেই। আজ পঞ্চমদিন। ইরানের 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ' চান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই প্রেক্ষাপটে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনির বক্তব্যও এসেছে। শুরু হয়েছে ট্রাম্প এবং খামেনির মধ্যে বাগবিতণ্ডা। সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার এক অপরকে নিশানা করে বার্তা দিচ্ছেন তাঁরা।
ট্রাম্প মঙ্গলবার(১৭ জুন) সকালেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ইরান যদি কোনও ভাবে আমেরিকার উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করে, তা হলে ‘তছনছ’ করে দেওয়া হবে। রাতে তিনি টার্গেট করলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তথা ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক আয়াতোল্লা আলি খামেনিকে।
ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের সবোর্চ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ্ আলী খামেনি 'এখনকার মতো নিরাপদ' অর্থাৎ তাকে এখুনি হত্যা করার পরিকল্পনায় সায় নেই যুক্তরাষ্ট্রের। এর আগে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দাবি করেছেন, “ইরানের আকাশের ওপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।” খামেনিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “আমরা ভালো করেই জানি ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি একজন সহজ টার্গেট কিন্তু সেখানে নিরাপদ – আমরা সেখান থেকে তাঁকে বের করে আনব না, অন্তত আপাতত নয়।” এখানে বের করে আনব না বলতে হত্যার কথা বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমাদের ধৈর্য কমে আসছে” সতর্ক করে বলেন, “নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ!”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এ বিভিন্ন ভাষার অ্যাকাউন্টে লাগতার পোস্টে করে খামেনি বলেছেন, ইরান “কখনও জায়নিস্টদের(ইহুদিবাদীদের) সাথে আপস করবে না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা জায়নিস্টদের (ইহুদিবাদীদের) কোনো দয়া দেখাব না ” অন্য আরও কিছু পোস্টে বলেছেন “যুদ্ধ শুরু”।
তেহরানকে আত্মসমর্পণের বার্তা দিয়ে ট্রাম্প কার্যত ইজরায়েলের সুরেই হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘‘ইরানের আকাশ এখন আমাদের দখলে।’’ অন্য দিকে, নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন খামেনিকে হত্যা করতে পারলেই তেল আভিভ-তেহরান সংঘাতের ইতি হবে।
অন্যদিকে, রবিবার(১৫ জুন) রয়টার্স প্রকাশিত একটি খবরে দাবি করা হয়েছিল, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার খামেনিকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে এও জানানো হয় যে, তবে সেটি আটকে দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আবার মঙ্গলবার (১৭ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তড়িঘড়ি জি-৭ সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই চাঞ্চল্য শুরু হয়েছিল। সম্মেলন থেকে বেরিয়ে বলেছিলেন, ইজরায়েল এবং ইরানের মধ্যে যুদ্ধ থামানোর থেকেও বড় কিছু করতে চলেছেন তিনি। পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই কানাডায় চলছে এই জি-৭ সম্মেলন। ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতের আবহে অন্য মাত্রা পেয়েছে এই বৈঠক। ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতে নেতানিয়াহুর দেশের পক্ষেই সমর্থন জানিয়েছে G7-এ উপস্থিত রাষ্ট্রনেতারা। পশ্চিম এশিয়ার উত্তেজনার মাঝে কী পদক্ষেপ করতে চলেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প? সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
উল্লেখ্য, মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান বা এইচআরএএনএ জানিয়েছে, ১৩ জুন ভোররাত থেকে ইজরায়েলের হামলা শুরুর পর এখনও পর্যন্ত ৪৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন ইরানে। নিহতদের মধ্যে ২২৪ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। ১৮ জুন ভোররাতে পূর্ব ইংল্যান্ডের রয়্যাল এয়ারফোর্স লেকেনহিথ থেকে অন্তত চারটি এফ- ৩৫ বিমান ঘাঁটি ছেড়ে গেছে বলে জানা গেছে।অন্যদিকে, ইরানের ফারস নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, হামলার টার্গেটগুলোর মধ্যে একটি ছিল ইসরায়েলের মেরন বিমানঘাঁটি। তবে ইসরায়েলের এই বিমানঘাঁটিতে আসলেই ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যুদ্ধকালীন সময়ে ইসরায়েলে সামরিক ‘সেন্সরশিপ’ চলমান রয়েছে। বিশেষ করে সংবেদনশীল সামরিক স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটলে, সে বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয় না বলে জানিয়েছে আল-জাজিরার।