কেন পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকাকেই বেছে নিল জঙ্গিরা?

Pahalgam Attack: বৈসরন উপত্যকা অর্থাৎ যেখানে হামলা ঘটেছে, তা নৈসর্গিক কারণেই মানুষের বিশেষ পছন্দের। এই জায়গাটিকে মিনি সুইজারল্যান্ড বলেই ডাকেন ভারতের পর্যটকরা।

সাম্প্রতিককালের বীভৎসতম জঙ্গি হামলা। কাশ্মীর ঘুরতে গেলেই পর্যটকরা যে সুদৃশ্য তৃণভূমিতে ছবি তোলেন, সময় কাটান, ঘোড়ায় চাপেন- সেই পহেলগাঁওয়ের উপত্যকা রক্তস্নাত। কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা নতুন নয়, তবে এই হামলার ধরন, এর বীভৎসতা নাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বকে। এই হামলার সরাসরি লক্ষ্য নিরীহ, নিরস্ত্র পর্যটকরা। শুধুই কি বেশি পর্যটককে একসঙ্গে পাওয়া যাবে, তাতে হামলার মাত্রা বেশি হবে বলেই জঙ্গিদের মনোনয়নে সবার আগে জায়গা করে নিল পহেলগাঁও? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুই পর্যটকদের ভিড়কে পেতে এই জায়গাকে বেছে নেওয়া নয়, নেপথ্যে আছে একাধিক কারণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মীরে অন্যতম জনপ্রিয় জায়গা পহেলগাঁও। এই অঞ্চলে বৈসরন উপত্যকা অর্থাৎ যেখানে হামলা ঘটেছে, তা নৈসর্গিক কারণেই মানুষের বিশেষ পছন্দের। এই জায়গাটিকে মিনি সুইজারল্যান্ড বলেই ডাকেন ভারতের পর্যটকরা। তাই সকলেই কাশ্মীর ঘুরতে এসে অন্তত একবার বৈসরন উপত্যকায় সময় কাটিয়ে যান। ফলে পর্যটকদের একসঙ্গে পাওয়া যায়। আর যেহেতু এই তৃণভূমি বিস্তৃত অঞ্চল তাই এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন পর্যটকরা।

আরও পড়ুন- কেউ মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে, কেউ পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে নিহত! পহেলগাঁও প্রাণ কাড়ল যাদের

বলিউডের অনেক সিনেমার শুটিং হয়েছে বৈসরনে। বৈসরন ট্রেকারদের কাছে ক্যাম্প করার এক আদর্শ জায়গা। শুধু গ্রীষ্মে নয় শীতকালেও এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তখন বরফের গালিচায় চলে স্কেটিং। আরু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য আছে নিকটে। দেখা মেলে বাদামী ভাল্লুক এবং কস্তুরী হরিণের। বরাবরই পর্যটকদের টানে এই মিনি সুইজারল্যান্ড। সরকারি হিসেব বলছে, ২০২৩ সালে মোট ১৪,৩২,৪৩৯ জন পর্যটক জম্মু ও কাশ্মীর ভ্রমণে আসেন, যাদের ৯৮ শতাংশ মানুষই বৈসরনে একবার ঘুরে যান।

অনন্তনাগ থেকে একটি রাস্তায় যায় শ্রীনগরের দিকে, অন্যটি পহেলগাওঁয়ের দিকে। পহেলগাঁওয়ের দিকে যাওয়ার রাস্তার উপরেই অমরনাথ যাত্রার বেসক্যাম্প পড়ে। সামনেই অমরনাথ যাত্রা। জঙ্গি হামলার ফলে অমরনাথ যাত্রায় বাধা পড়ল বড়। এই রাস্তার দু’পাশের পাইন বনের মধ্যে দিয়ে একটিই মাত্র রাস্তা দিয়ে বৈসরন উপত্যকায় যাওয়া যায়। আর তা যেতে হলে হয় হেঁটে যেতে হবে বা ঘোড়ার পিঠে চেপে।

আরও পড়ুন- কাশ্মীরে নিরস্ত্র পর্যটকদের উপর মর্মান্তিক হামলার নেপথ্যে TRF! কারা এই গোষ্ঠী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু পহেলগাঁও থেকে বৈসরন উপত্যকা পর্যন্ত যাওয়ার আর অন্য কোনও রাস্তা নেই, তাই সেখানে চট করে সেনার আসার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। আর যেহেতু চারপাশেই ঘন পাইন বন তাই হামলা চালিয়ে পালানো বা লুকিয়ে থাকাও সহজ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অঞ্চলটিতে বারেবারে রেইকি করে, সমস্ত পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ বৈসরনে পরিকল্পিত হামলা চালায় সন্ত্রাসবাদীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাধিক বয়ান বলছে, সেনার পোশাক পরে, মুখ ঢেকে সশস্ত্র জঙ্গি পাইন বন থেকে বেরিয়ে এসে পর্যটকদের নাম-ধর্মপরিচয় জিজ্ঞেস করে কপালে গুলি করা হয়। খুন করে আবার জঙ্গলেই উধাও হয় তারা।

হামলার দায় স্বীকার করেছে পাক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফোর্স’ বা টিআরএফ। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, জম্মুর কিশতওয়ার এলাকা দিয়ে ঢুকেছিল টিআরএফ জঙ্গিরা। তারপর সীমান্ত পেরিয়ে দক্ষিণ কাশ্মীরের কোকেরনাগ হয়ে বৈসরনে আসে।

More Articles