একুশ পেরিয়ে বাইশে পা, সিনেমা-সাহিত্যে বছরটা যেমন কাটল চিন...

করোনাকালের দুঃসময়ের মধ্যেই চলে এল আরেকটা নতুন বছর। নানান কিসিমের সিনেমা আর সাহিত্য নিয়ে ২০২১ কেমন কাটল চিনের? বছরের শেষ দিনে  ফিরে দেখা যাক।

অতিমারীর আবহেই এ বছর চিনে মুক্তি পেয়েছে ‘কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়না’ বা সিসিপি প্রযোজিত ‘দ্য ব্যাটল লেক চাংজিন’। চাংচুন ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘গোল্ডেন ডিয়ার’ প্রাপ্ত এ ছবির মধ্যে দিয়ে দর্শক ফিরে যেতে পারে ১৯৫০ সালের কোরিয় যুদ্ধের স্মৃতিতে। আজ থেকে একাত্তর বছর আগে  উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাধে। দু'দেশের সমর্থন এসেছিল দুই পরাশক্তির কাছ থেকে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চিন ছিল উত্তর কোরিয়াপন্থী, পক্ষান্তরে আমেরিকা নিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ। বছর তিনেক যুদ্ধ চলার পর ১৯৫৩ সালে শান্তিচুক্তি স্থাপিত হয়। আর এই যুদ্ধ-কাহিনিকেই জাতীয়তাবাদী মোড়কে উপস্থাপিত করা হয়েছে ‘দ্যি ব্যাটল লেক চাংজিন’ এর মধ্যে দিয়ে। আমেরিকার সঙ্গে চিনের কূটনৈতিক দ্বিধা দ্বন্দ্বের চিত্র এ ছবিতে স্পষ্ট ফুটে ওঠে। আনুমানিক ২০ কোটি টাকা বাজেটের এই ছবিটি তকমা পেয়েছে চিনের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সফলতম ছবির। ‘দ্য ব্যাটেল লেক চাংজিন’ চিনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবির তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে।

সিনেমা ছাড়াও ২০২১ পাঠকের হাতে এনে দিয়েছে লিউ ক্যুইকুনের বিতর্কিত গ্রন্থ ‘এইট নেশন অ্যালায়েন্স ইজ আ রায়েটিওস আর্মি’। বইটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিন রাষ্ট্রের তরফে ক্যুইকুনের বিরুদ্ধে  কঠোর সমালোচনা নেমে আসে। যদিও, অতীতের দিকে তাকালে বোঝা যাবে, এ ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও চিনের কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধাচারণ করে ক্যুইকুনকে সমালোচিত হতে হয়েছে। ১৯০০ সালের জুনে চিনের একদল বিদ্রোহী ইয়োরোপের কয়েকজন রাষ্ট্রদূতকে আক্রমণ করেন। এর ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। আট রাষ্ট্রের মিত্রশক্তি বা ‘এইট নেশন অ্যালায়েন্স’ পাল্টা আক্রমণ নামিয়ে আনে চৈনিক বিদ্রোহীদের উপর। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। মিত্রশক্তির অন্তর্গত ছিল ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, প্রভৃতি দেশগুলি। অবশেষে ১৯০১ সালের ‘বক্স চুক্তি’ স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে ‘যুদ্ধং দেহি’ বাতাবরণের পারদ খানিক নিম্নগামী হয়।

অতীতের এই ধুন্ধুমার ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গেলে পাঠককে অতি অবশ্যই পড়ে ফেলতে হবে ‘এইট নেশন অ্যালায়েন্স ইজ আ রায়েটিওস আর্মি’। চিনের স্থানীয় প্রকাশকদের মতে ক্যানাডাবাসী লিউ ক্যুইকুনই ২১ এর সবচেয়ে খ্যাতনামা সাহিত্যিক। তাঁর বইটিকে ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধার পরেই আশ্চর্যরকমভাবে তার বিক্রি বেড়ে যায়। হুজুগের বশেই হোক, বা নিপাট পাঠকের কৌতূহলেই হোক, বইটির প্রতি হঠাৎ করেই হাজার হাজার মানুষ আগ্রহী হয়ে ওঠে। চিনের বামপন্থী সরকার এ যাবৎ কাল আট রাষ্ট্রের মিত্রশক্তিকে দেখে এসেছে জাতীয় শত্রু হিসেবে, ফলত ক্যুইকুনের সঙ্গে তাদের সংঘাত ঘটবে এমনটাই অবশ্যম্ভাবী ছিল। কিন্তু আদার ব্যাপারী আর জাহাজের খবরে কবেই বা চিন্তিত হয়েছে? আর সেই নিয়মেই ‘এইট নেশন অ্যালায়েন্স ইজ আ রায়েটিওস আর্মি’ বেস্টসেলারে রুপান্তরিত হয়েছে।

বিতর্ক থাক বা না থাক, মানুষের বেঁচে থাকার রসদ হয়ে শিল্প সাহিত্য থাকবেই। নোবেলজয়ী সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের বইয়ের শিরোনাম ছিল ‘কলেরার দিনগুলিতে প্রেম’। আর এই প্রেমই তো বাঁচার লড়াইয়ের জীবনীশক্তি নিয়ে শিল্প সাহিত্যের মধ্যে আবির্ভূত হয় পাঠক বা দর্শকের দরবারে। সংবাদপত্রের পাতা খুললেই টের পাওয়া যাচ্ছে ওমিক্রন আতঙ্ক। কোভিডের থেকে এখনই মুক্তি নয়, এমনটাই জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে, প্রতিষেধক আপাতত মুক্তি না আনলেও, চিনের মানুষের উন্মাদনাই প্রমাণ করে যে নিজেদের মতো করেই মুক্তির উপায় তারা খুঁজে নিয়েছে। জ্বরাগ্রস্ত এই ‘পাথরে পাথর যুগে’ এটুকুই যেন আমাদের কাছে আশার আলো।

More Articles