সত্যিই বিজেপির পুতুল হয়েছেন প্রশান্ত কিশোর? ফলবে সব ভবিষ্যদ্বাণী?

Prashant Kishore: ভুলে গেলে চলবে না, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী করার পিছনে পিকের বড় ভূমিকা ছিল। ১০ বছর পর ফের কি উঠে পড়ে লেগেছেন তিনি?

বিজেপি লোকসভা ভোটের আগে কোনও চালই প্রয়োগে বাকি রাখেনি। বছরের শুরুতে রামমন্দির, তারপরই একে একে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের ইডি-সিবিআইয়ের ধরপাকড়, সিএএ চালু। ভোটের আগে বিজেপির হয়ে প্রচার করতে এবার কি প্রশান্ত কিশোরকে ব্যবহার করছেন নরেন্দ্র মোদি? প্রশান্ত কিশোরের মতো নির্বাচনী কৌশলী স্বাভাবিকভাবেই ভোটের আগে তাঁর মতামত জানাবেন। একের পর এক ভবিষ্যদ্বাণীও করে চলেছেন তিনি। কিন্তু তাতে পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট। ঠিক কী কী বলছেন পিকে?

প্রশান্ত কিশোর বলছেন রাহুল গান্ধির অবসর নেওয়া উচিত। পিকে দাবি করেছেন, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের এক নম্বর দল হয়ে উঠতে পারে। বিজেপি গত বেশ কয়েক বছরে দক্ষিণ এবং পূর্ব ভারতে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছে। তাই পরিশ্রমের ফল মিলবে নাকি এবার। পিকে আরও বলছেন, ওড়িশাতেও বিজেপি বেশি আসন পাবে এমনকী বিজেডির চেয়েও বেশি! কংগ্রেস শাসিত তেলঙ্গানাতেও নাকি বিজেপি এক নম্বর দল হিসাবে উঠে আসতে পারে। তামিলনাড়ুতে ডবল ডিজিট ভোট পাবে বিজেপি, মনে করছেন পিকে।

মনে করতেই পারেন। কিন্তু প্রশান্ত কিশোরের কথা তো নেহাত ফেলনা নয়। সংসদীয় রাজনীতিতে কীভাবে ভোট পেতে হয় তা তিনি ছক কষে, কৌশল অবলম্বন করে করে দেখিয়েছেন। সবচেয়ে বড় উদাহরণ তো পশ্চিমবঙ্গই। প্রশান্ত কিশোর ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে টুইটারে লিখে রেখেছিলেন বিজেপি ডবল ডিজিট পেরোতেই হিমশিম খাবে! অক্ষরে অক্ষরে মিলেছিল তা। ২০২১ বিধানসভায় তৃণমূল ব্যাপক জয়ী হয়। লোকসভা ভোটের আগে তাই পিকে-র কথা ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে পিকে মানেই যে শেষ কথা তা কিন্তু নয়। প্রশান্ত কিশোরের ভবিষ্যদ্বাণী একাধিক ক্ষেত্রেই ব্যর্থও হয়েছে।

আরও পড়ুন- দু’নম্বরে নামবে তৃণমূল! বাংলায় পিকে-র বাণী ফলার সম্ভাবনা কতটা?

ভারত রাষ্ট্র সমিতি অর্থাৎ বিআরএসের হয়ে কাজ করেছিল পিকের আইপ্যাক। সেখানে বিআরএসের জেতার কথা পিকে বললেও, কংগ্রেস জিতেছিল, বিআরএস জিততে পারেনি। পিকে হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনে বলেছিলেন, ৯৫% হিন্দুর বাস হিমাচলে তাই এখানে কংগ্রেসের জায়গা নেই। অথচ কংগ্রেস সেই রাজ্যে ৬০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জেতে। কর্ণাটকেও কংগ্রেসের জেতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন পিকে, অথচ কর্ণাটকে কংগ্রেস জেতে। কিন্তু এবার লোকসভা ভোটের আগে যেভাবে চারদিকে বিজেপির পতাকা দেখতে পাচ্ছেন পিকে, তাতে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে স্বাভাবিকভাবে।

মোদির বিরোধিতায় কংগ্রেসের ম্যানিফেস্টো মানুষের প্রকৃত উন্নয়নের কথা বলছে। অগ্নিবীর প্রকল্প বাতিল, করা, শিক্ষার অধিকার, মহিলাদের সংরক্ষণ, ব্যাপক কর্মসংস্থানের মতো ইস্যু নিয়ে কথা বলছে কংগ্রেস। পিকে এত রকমের ভবিষ্যদ্বাণী করছেন অথচ একবারও দেশের ব্যাপক বেকারত্ব, ভারত চিন সীমান্ত ইস্যু, লাদাখ ইস্যু, মণিপুর, সাম্প্রদায়িক হিংসা, দাম বৃদ্ধি নিয়ে একটা কথাও বলছেন না? মোদি কি তাহলে আন্ডারকভার এজেন্ট হিসেবে পিকেকে ব্যবহার করছেন? প্রশান্ত কিশোরের মতো একজন রাজনৈতিক কৌশলী ভোটের মুখে যত্রতত্র 'বাইট' দিয়ে চলেছেন কেন? রাজ বব্বরের মতো নেতা বলেছেন, তিনি প্রশান্তকে যতটা চেনেন, বিনামূল্যে কাজ করার লোক তিনি নন। তাহলে পিকে-কে এই রাজনৈতিক জ্ঞান দেওয়ার টাকা কে দিচ্ছে? ব্যতিক্রমী মিডিয়াগুলি একদিকে বিরোধীদের কথা বলছে, মোদির ব্যর্থতার কথা বলছে, অন্যদিকে গোদি মিডিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশব্যাপী গেরুয়া ঝড়ের ভবিষ্যদ্বাণী করছেন পিকে। সবটাই বিনামূল্যে? সবটাই নিছক ভবিষ্যদ্বাণী?

মনে রাখতে হবে, রাহুল গান্ধির সঙ্গে জুড়তে চেয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু কংগ্রেস ভরসা করে উঠতে পারেনি তাঁকে। তাই কি লোকসভা ভোটের আগে এই জাতীয় কথাবার্তা বলছেন তিনি? সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন পিকে 'ওভাররেটেড'। এককালে যে তৃণমূলকে বাঁচালেন তিনি, এবার কি তার থেকেই শোধ নিচ্ছেন পিকে? ভুলে গেলে চলবে না, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী করার পিছনে পিকের বড় ভূমিকা ছিল। ১০ বছর পর ফের কি উঠে পড়ে লেগেছেন তিনি? হাওয়ায় কথা ভাসিয়ে দিয়ে সাময়িক লাভ হতে পারে ঠিকই। কিন্তু নির্বাচনের ময়দানে পিকে খেপ খেলার খেলোয়াড় নন। তাই যে যে কথা তিনি বলছেন তা মাঠেঘাটের তথ্য না নিয়ে, হাওয়ার দিক না বুঝে বলছেন এমনও নয়। সত্যিই অপ্রত্যাশিত স্থানেও এবার বিজেপিরই দাপট দেখবে দেশ?

More Articles