পাখার বাতাস ও জামাই আদর, ডিজিটাল জামাই ষষ্ঠী হয়ে যাক!

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাওয়া-দাওয়া – আদ্যন্ত বাঙালির সংস্কৃতিতে বদল এসেছে, এরপরেও বোধহয় কোনও ব্যস্তবাগিশ জামাইও চাইবে না যে ভার্চুয়ালি জামাই আদর সারুন শাশুড়িরা। তাহলে ডিজিটালের পাশাপাশি বেঁচে থাক সাবেকিয়ানা।

ভার্চুয়াল ক্লাস, ভার্চুয়াল মিটিং, ভার্চুয়াল চিকিৎসা। তাহলে ভার্চুয়ালি পাখার বাতাস আর জামাই আদর হবে না কেন? বালাই ষাট!

করোনার দাপটে গত দুই বছর অনলাইনে জামাইষষ্ঠী হয়েছে। এবছর সেই ট্রেন্ড জারি থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই নতুন ভার্চুয়াল জামাইষষ্ঠীকে স্বাগত জানাচ্ছেন শ্বশুররা। কারণ এটা তাঁদের পক্ষে পকেট ফ্রেন্ডলি। তাই জামাই আদর যদি ভার্চুয়ালি হয়, তাহলে কী সর্বনাশটাই না হবে! সকালে লুচি, আলুর দম দিয়ে শুরু করে দুপুরে কব্জি ডুবিয়ে ইলিশ, চিংড়িতে ডুব। মাঠে মারা? ভার্চুয়ালি ভোজন!

জামাইয়ের শোকে ডুব দেওয়ার কিচ্ছু হয়নি। কারণ তাঁদের জন্য হরেক পদ নিয়ে হাজির হোম ডেলভারি অ্যাপ। তাহলে শাশুড়ি থেকে জামাই-সবাই স্বাগত জানাতে পারেন এই ডিজিটাল জামাইষষ্ঠীকে।

হোয়াটসঅ্যাপে পাখার বাতাস

গত ২ বছর করোনা দাপিয়ে বেড়িয়েছে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও জামাইরা লকডাউনের জেরে শাশুড়ির হাতের রান্না খেতে পারেননি। এবার অবস্থা বদলেছে। তবে চাকরির কারণে অনেক জামাই-ই শ্বশুর বাড়ি পৌঁছাতে পারেন না। সেক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কলে পাখার বাতাস তো আছে।

যেহেতু জামাই এবং শাশুড়ি দুইজনেই রয়েছেন ভিন্ন জায়গায় সেকারণে সরাসরি আশীর্বাদ করা সম্ভব নয়। কিন্তু ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা জানাতে পারবেন। আশীর্বাদ করতে পারেন নিজের আদরের জামাইকে। এর জন্য দুই জনেই কোনও ভিডিয়ো কলিং অ্যাপের মাধ্যমে সংযুক্ত হতে পারেন।

খুব সহজেই Whatsapp-এ ভিডিয়ো কল করতে পারবেন। ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে উইশ করুন জামাইকে। Whatsapp ছাড়াও রয়েছে আরও কয়েকটি অ্যাপ যেগুলির মাধ্যমে নিজের প্রিয় জামাইকে উইশ করতে পারেন। ফোনে ইনস্টল করতে পারেন Duo, Skype, Facebook Messanger ইত্যাদি অ্যাপগুলির মাধ্যমে জামাইয়ের সঙ্গে ভিডিয়ো কল করতে পারবেন। অন্যদিকে যদি শাশুড়ি ও জামাই দুইজনের কাছেই থাকে Apple iPhone তাহলে Facetime ব্যবহার করতে পারেন।

অনলাইনে খাওয়া দাওয়া

জামাইষষ্ঠী আর কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া – এ যেন সমর্থক। পেটরোগা জামাইও এদিন ভোজনরসিক হয়ে ওঠেন। হবেন নাই কেন, এমন আহ্লাদের খাওয়ার সুযোগ জামাইদেরও সারা বছর মেলে না।

তাহলে পোলাও হবে নাকি সাদা ভাত? ইলিশ সর্ষে ভাল হবে নাকি চিংড়ির মালাইকারি? মিষ্টি বাছাই করতেও বেশ মাথা ঘামাতে হয়। জামাইষষ্ঠীর পেটপুজো বলে কথা! বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন। গ্রীষ্মকালে যে পার্বনটির জন্য বাঙালির ঘরে ঘরে আগে থেকেই প্রস্তুতি চলে তার অন্যতম হল জামাইষষ্ঠী। আগে থেকে মেনু ঠিক করা, বাজার করা তারপর রান্না। এত কাজ সামলাতে লোকবল চাই। কিন্তু এখন ছোট পরিবার। অত লোক কোথায়? জামাইষষ্ঠী মানেই জমিয়ে খাওয়াদাওয়া। মাছ, মাংস সহ একাধিক ভাজাভুজি থাকবে খাবার থালায়। এটাই স্বাভাবিক। জামাইকে যদি বাড়িতে বসেই খাওয়াতে চান তাহলে অর্ডার করুন Swiggy বা Zomato-তে। প্রায় প্রত্যেক শহরে পরিষেবা দেয় এই দুই অ্যাপ। তাই খুব সহজেই যে কোনও রেস্টুরেন্ট থেকে জামাইয়ের পছন্দমতো খাবার অর্ডার করতে পারেন এই দুই অ্যাপের মাধ্যমে। সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অধীনস্থ ওয়েস্ট বেঙ্গল কম্প্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।

 

আরও পড়ুন-চাইলে পারবেন আপনিও! দেখিয়ে দিলেন ইউপিএসসি-তে সফল হওয়া তিন কন্যা

 

কী ভাবে? জামাই ষষ্ঠীর জন্য স্পেশাল মেনু চালু করেছে তারা। সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হবে বাড়িতে। ইদানিং বাড়িতে রান্না করেন না অনেকে। কোনও রেস্তরাঁয় টেবিল বুক করে অনুষ্ঠান করেন। কিন্তু তাতে তো বাড়ির আবহ থাকে না। সেদিকটি ভেবেই এমন কাজ। রান্নার ঝামেলা নেই, অর্ডার করলেই সময়মতো বাড়িতে আসবে এলাহি খাবার।

একটি ‘থালায়’ দেওয়া হবে, কড়াইশুঁটি দেওয়া গন্ধরাজ ভাত, ইলিশ পাতুরি, ঝাড়গ্রামের বনমুরগির মাংস, আনারসের চাটনি ও শক্তিগড়ের ল্যাংচা। দ্বিতীয় ‘থালায়’ থাকবে, কড়াইশুঁটি দেওয়া গন্ধরাজ ভাত, গলদা চিংড়ির মালাইকারি, ঝাড়গ্রামের পাঁঠার মাংস, আনারসের চাটনি ও শক্তিগড়ের ল্যাংচা। দুটি ‘থালা’র মূল্যই ৫০০ টাকা করে। এই রকম মেনু শুনে খাদ্যে চরম বেরসিক জামাইয়েরও জিভে জল আসবে না!

পয়লা বৈশাখ দিয়ে শুরু হয়েছে বাঙালির পার্বনের পর্ব। এরপরই জ্যৈষ্ঠের জামাইষষ্ঠীর উৎসব। আর আদরের জামাইকে এই বিশেষ দিনে কোন নতুনত্বে ভরিয়ে দেওয়া যায় তার প্রস্তুতিতে ইতিমধ্যেই শেষ করে ফেলেছেন শাশুড়িরা! জেনে নেওয়া যাক এই উৎসব ঘিরে কিছু রীতিনীতি। অনলাইনে জামাইষষ্ঠী এসেছে ও জনপ্রিয়ও হয়েছে, তবে হারিয়ে যায়নি সাবেকিয়ানা ও ঐতিহ্য।

আম, কাঁঠালের সমাহারে জামাইকে আদর করে আসন পেতে বসিয়ে, কুলোর বাতাস দিয়ে খাওয়ানোর চিরাচরিত রূপ বহু বাঙালি বাড়িতে এখনও দেখা যায়। সাবেকিয়ানা ও ঐতিহ্যের এই উৎসব ২০২২ সালে ৫ জুন পড়ছে। ৫ জুন অর্থাৎ বাংলা সাল অনুযায়ী ২১ জ্যৈষ্ঠ রবিবার এই বিশেষ উৎসব পালিত হতে চলেছে। ফলে যে শাশুড়িরা জামাইষষ্ঠীর অপেক্ষায় রয়েছেন। শুধু জামাইকেই নয়, সন্তানসম প্রত্যেক স্নেহের মানুষের জন্যই এই তিথিতে মাতৃ স্থানীয়রা উপবাস রেখে আসেন। সন্তানের মঙ্গল কামনায় ষষ্ঠীর ব্রত পালন করে থাকেন। সাধারণত মরশুমি ফল দিয়ে জামাই আদর করা হয়। আম, জাম, কাঁঠালের মরশুমে জামাইকে ফল দিয়ে আদর যত্ন করার পাশাপাশি দুপুরে ভাতপাতে একাধিক লোভনীয় পদও রাখার রীতি রয়েছে। বহু বাড়িতেই জামাইকে এই দিনে বাসন্তি পোলাও এবং পাঁঠার মাংস খাইয়ে আদর যত্ন করা হয়। সঙ্গে চলে তাল পাতার পাখার হাওয়া। জামাইকে দেওয়া হয় নতুন বস্ত্র, উপহার। তাঁকে আসনে বসিয়ে খাওয়ানোর রীতি রয়েছে। সঙ্গে মঙ্গলদীপও জ্বালানো হয়।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাওয়া-দাওয়া – আদ্যন্ত বাঙালির সংস্কৃতিতে বদল এসেছে, এরপরেও বোধহয় কোনও ব্যস্তবাগিশ জামাইও চাইবে না যে ভার্চুয়ালি জামাই আদর সারুন শাশুড়িরা। তাহলে ডিজিটালের পাশাপাশি বেঁচে থাক সাবেকিয়ানা।

More Articles