চাইলে পারবেন আপনিও! দেখিয়ে দিলেন ইউপিএসসি-তে সফল হওয়া তিন কন্যা

সত্যিই তো আমাদের মেয়েরা কোনও অংশেই ছেলেদের থেকে কম তো ননই, বরং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছেন তাঁদের সঙ্গে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেটে গেছে প্রায় তিন মাস আগে। কিন্তু চলতি মাসেও নারীদের দাপট বুঝিয়ে দিচ্ছে, একদিন নয়, প্রতিদিনই তাঁদের। সর্বভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় এবার মেয়েদের জয়জয়কার। সাত বছর পর আবার জাতীয় স্তরের এই পরীক্ষায় শীর্ষ তিন স্থানে রয়েছে মেয়েরা। একজন মেয়ে হিসেবে নিঃসন্দেহে এ খুব গর্বের কথা। এর আগে ২০১৪ সালে এমনটা ঘটেছিল। ২০২১ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে এই সপ্তাহের সোমবার। এবারের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে দিল্লির শ্রুতি শর্মা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতার মেয়ে অঙ্কিতা আগরওয়াল এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে চণ্ডীগড়ের গামিনী সিংলা।

কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, এই বছর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় মোট ৬৮৫ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। এঁর মধ্যে ৫০৮ জন পুরুষ এবং ১৭৭ জন মহিলা। আবার প্রথম ২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন পুরুষ এবং ১০ জন মহিলা রয়েছে। প্রথম ১০ জনের মধ্যে ৪ জন মহিলা হলেন- শ্রুতি শর্মা, অঙ্কিতা আগরওয়াল, গামিনী সিংলা এবং ইশিতা রাঠি। কীভাবে এই কঠিন পরীক্ষা পাশ করলেন তাঁরা? চলুন জেনে নিই সেই নেপথ্য কাহিনি।

প্রথম স্থানাধিকারী: শ্রুতি শর্মা

শ্রুতি ছোটবেলায় দিল্লির সর্দার প্যাটেল বিদ্যালয়ে পড়েছেন। এরপর সেন্ট স্টিফেনস কলেজ থেকে ইতিহাস নিয়ে স্নাতক পাশ করেন। স্নাতকোত্তরের জন্য জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হলেও মাঝপথে ছেড়ে দেন পড়া। এইসময় বাবার কথাতেই জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৯ সালে ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কোচিং অ্যাকাডেমিতে। তখন থেকেই শুরু হয় তাঁর সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতি।

আরও পড়ুন: উচ্চমাধ্যমিক ফেল ছাত্র আজ ইউপিএসসি চেয়ারম্যান! হার না মানা লড়াই অনুপ্রেরণা হতে পারে

তিনি নিজেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, "আমার স্ট্র্যাটেজি ছিল নিজের নোটসের ওপর জোর দেওয়া। পাশপাশি মেন পরীক্ষার জন্য উত্তর লেখার অভ্যাসও করেছি গুরুত্ব দিয়ে। আমি পরীক্ষায় নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি এবং তা নিয়ে যথেষ্ট খুশি ছিলাম। সন্তোষজনক ফলাফল আশা করলেও ভাবিনি প্রথমেই আমার নাম থাকবে। এটা আমার কাছে আশ্চর্যের।" শ্রুতি মেন পরীক্ষায় অতিরিক্ত পেপার হিসেবে ইতিহাসকেই বেছে নিয়েছিলেন। পরিবারে তিনিই আইএএস। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় সর্বভারতীয় পরীক্ষার একেবারে শীর্ষে শ্রুতি।

এই মুহূর্তে দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিক্সে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করছেন তিনি। তবে পরীক্ষার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে শ্রুতি স্পষ্ট বলেছেন, "পরিশ্রম এবং ধৈর্য ছাড়া এই যাত্রা উতরে যাওয়া সম্ভব নয়। কতক্ষণ পড়ছি তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কত ভালো করে পড়ছি। পড়াশোনা করা জরুরি তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ার দরকার নেই। সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিও খুব গুরত্বপূর্ণ।" চাকরিজীবনে প্রথম পছন্দ তাঁর উত্তরপ্রদেশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাহুল গান্ধী, যোগী আদিত্যনাথ সকলেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

দ্বিতীয় স্থানাধিকারী: অঙ্কিতা আগরওয়াল

কলকাতার মেয়ে অঙ্কিতাও সেন্ট স্টিফেনস কলেজ থেকে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক পাশ করেছেন। এক বছর একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজের পর ২০১৮ সাল থেকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি। ২০২১ সালে ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসে সুযোগ পেলেও লক্ষ্য ছিল আইএএস হওয়ার। তৃতীয়বারের চেষ্টায় পূরণ হল সেই স্বপ্ন। তবে পথ মোটেও সহজ ছিল। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ছেড়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়া। তবে অঙ্কিতার কথায়, "কোনওরকম পরিকল্পনার আগে সিভিল সার্ভেন্ট হওয়ার ইচ্ছে থাকতে হবে। তাহলেই আর অন্য কোনও প্রেরণার প্রয়োজন হবে না।"

তবে তাঁর কথাতেও উঠে এসেছে পড়াশোনা এবং বাকি সবকিছুর সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার কথা। নিজের রাজ্যেই শুরু করতে চান নতুন এই কর্মজীবন। তিনি জানিয়েছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের দারিদ্র, আবহাওয়া পরিবর্তন, বেকারত্ব নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। পাশাপাশি মহিলাদের ক্ষমতায়নও চান অঙ্কিতা।

তৃতীয় স্থানাধিকরী: গামিনী সিংলা

পাঞ্জাব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রী গামিনী মাত্র ২৩ বছরেই সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষায় পাশ করে গেছেন। তাঁর মা ও বাবা হিমাচল প্রদেশের মেডিক্যাল অফিসার। গামিনীর ভাই আইআইটি খড়গপুরের ছাত্র। তাঁর কথায়, "মা-বাবার সমর্থন এবং পরিশ্রম আমাকে আমার ছোটবেলার স্বপ্নপূরণ করতে সাহায্য করেছে। আমার সময় বাঁচাতে বাবা সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি দাগিয়ে দিতেন।" প্রথমবার প্রিলি পরীক্ষাতেই পাশ করতে পারেননি, কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে গেছেন গামিনী। দ্বিতীয়বারে সাফল্য হাতছাড়া হয়নি তাঁর। ফলাফলের খুশিতে গামিনী ও তাঁর পরিবারকে ভাঙড়া নাচতেও দেখা গেছে একটি ভিডিওতে। এই ভিডিও এখন ভাইরাল।

তবে এর আগেও দেশের অনেক মেয়েই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় তাঁদের রেজাল্ট দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তেমনই একটি নাম টিনা ডাবি। টিনা দলিত সম্প্রদায় থেকে প্রথম, যিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। এঁদের দেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেয়েরাও শিখবে নিঃসন্দেহে। সত্যিই তো আমাদের মেয়েরা কোনও অংশেই ছেলেদের থেকে কম তো ননই, বরং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছেন তাঁদের সঙ্গে।

 

 

 

More Articles