দুয়ারে সরকার-কে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বিজেপি? তৎপরতা তুঙ্গে

২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপিকে বাংলার বুকে আবার চাঙ্গা করে তোলার জন্য অবশেষে তৃণমূল সরকারের দেখানো পথেই হাঁটতে চলেছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

২০২১ সালের বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির পর থেকেই ক্রমশ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তাদের আত্মবিশ্বাস। তাই ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপিকে বাংলার বুকে আবার চাঙ্গা করে তোলার জন্য অবশেষে তৃণমূল সরকারের দেখানো পথেই হাঁটতে চলেছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার বঙ্গ সফরের মাঝে ঠিক এহেন ইঙ্গিতই উঠে আসতে শুরু করেছে। তবে তৃণমূলের স্ট্র্যাটেজির ওপর নির্ভর করে তাদেরকেই কীভাবে মাত দিতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকার, তা নিয়ে উঠে গিয়েছে একাধিক প্রশ্ন।

এবার একটু অতীতে ফিরে যাওয়া যাক। গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-নেত্রী পদ্ম শিবিরে যোগদান করেন। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে লাগাতার প্রচার চালানোর পর বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে দুশো ভোটে জেতার শপথ পর্যন্ত নেওয়া হয়। তবে প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় এক ভিন্ন রূপ। মাত্র ৭৭-এ গিয়েই থেমে যায় বিজেপির রথ। এরপর থেকেই পদ্ম শিবির ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করে একাধিক নেতা। মুকুল রায়, রাজীব বন্দ‍্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বর্তমানে বাবুল সুপ্রিয় এবং অর্জুন সিংয়ের মতো নেতাদের ঘাসফুল শিবিরে যোগদানের মাধ্যমে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে বিজেপি সংগঠন। শুধু তাই নয়, বর্তমানে রাজ্যর বিরোধী দলের অন্দরের চিত্র খুব একটা ভালো নয়! একাধিক প্রান্তে গোষ্ঠী সংঘর্ষর পাশাপাশি এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপরেও ক্ষুব্ধ বঙ্গ বিজেপি কর্মীরা, আর তা একপ্রকার আঁচ করতে পেরেই সম্প্রতি বাংলায় আসতে শুরু করেছেন অমিত শাহ থেকে জেপি নাড্ডা সকলে।

তবে শুধুমাত্র এই স্ট্র্যাটেজিতে যে কাজ হবে না, বর্তমানে তা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, আর সেই কারণেই সম্প্রতি জেপি নাড্ডার বঙ্গ সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কয়েকদিন আগেই বাংলায় পদার্পন করে অমিত শাহ দলের সকল কর্মীর মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করে যান। একই সঙ্গে বাংলার ১০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার পাশাপাশি দলের সকল সদস্যকে রাস্তায় নেমে কাজ করারও পরামর্শ দেন তিনি। এবার জেপি নাড্ডার বক্তব্যেও শোনা গেল একই সুর। প্রধানত, বিজেপির বিধায়কদের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি, আর এতেই উঠে এল তৃণমূল কংগ্রেসের 'দুয়ারে সরকার' প্রসঙ্গ।

আরও পড়ুন: বঙ্গ বিজেপির কাহিল অবস্থা বেআব্রু সংঘের রিপোর্টে, বড় বিপদ অপেক্ষা করছে?

বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে বাংলায় 'দুয়ারে সরকার' প্রকল্প বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস-সৃষ্ট এই প্রকল্প শহর থেকে গ্রামে, বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে আর সেই কারণেই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বাংলার মেয়ে' আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে- তা অনস্বীকার্য। বাংলার প্রতিটি প্রান্তে সব মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার এই উদ্যোগ আপন করে নিয়েছিল একাংশের বঙ্গবাসী। এবার তৃণমূলের সেই অস্ত্রেই শান দিতে চলেছে বিজেপি।

সম্প্রতি, বাংলায় পা রেখেই দলের সব বিধায়কদের ভোকাল টনিক দিয়ে যান জেপি নাড্ডা। যেভাবে দলের ভেতর কোন্দল বড় আকার ধারণ করেছে, তার ফল গত পুরসভা থেকে উপনির্বাচনেও দেখা গিয়েছে। একের পর এক ভোটে বিজেপির পরাজয়ের ধারা দেখে চিন্তিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সামনে লোকসভা নির্বাচন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশ এবং বাংলায় জয়লাভ দেশের নির্বাচনে গভীর প্রভাব রেখে চলে। ২০১৯ নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ছিল ১৮ এবং অতীতে স্বয়ং অমিত শাহ এসে ২৫-এর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিয়ে যান। তবে বর্তমানে সেই সম্ভাবনা ধীরে ধীরে যখন অদৃশ্য হতে শুরু করেছে, সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পুনরায় একবার 'খেলা' নিজেদের দিকে ঘোরাতে তৎপর পদ্মফুল শিবির।

বলে রাখা ভালো, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা কলকাতায় এসে দলীয় বিধায়কদের উদ্দেশ্যে এক বিশেষ বার্তা দিয়ে যান। তিনি বলেন, "দলের সকল বিধায়কদের উদ্দেশে বলছি, আপনারা বাংলার সব মানুষের কাছে পৌঁছে যান। তাদের সমস্যা শোনার পাশাপাশি সমাধানের রাস্তাও আপনাদের খুঁজে বের করতে হবে। কোনও গাফিলতি করা চলবে না।"

স্বভাবতই, বিজেপি নেতার বক্তব্যে আগাগোড়াই ফুটে ওঠে তৃণমূলের স্ট্র্যাটেজির উল্লেখ। যেভাবে দুয়ারে সরকার প্রকল্পর মাধ্যমে বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঠিক সেরকমভাবেই দলীয় বৈঠকে উপস্থিত সকল নেতৃত্বকে একই বার্তা দেন নাড্ডা। শুধু তাই নয়, মাসে পাঁচ দিন সময় বের করে নিজেদের এলাকার সব বাসিন্দার কাছে পৌঁছনো, সার্টিফিকেট কিংবা অন্য কোনও বিষয়ে সমস্যা হলে তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলেন সর্বভারতীয় সভাপতি। উদ্দেশ্য একটাই, বঙ্গবাসীর হারানো বিশ্বাস ফের একবার ফিরে পাওয়া।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপির এই পরিকল্পনা আদৌ সফল হয় কি না, তা সময়ই বলবে। তবে বঙ্গে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তারা যে কতটা মরিয়া, তা প্রতিটি পদক্ষেপে বুঝিয়ে চলেছে পদ্মফুল শিবির।

 

More Articles