বিশ্বকল্পকাপ ড্রিম ১১: কোথায় মেসি, কোথায় ক্রিশ্চিয়ানো! আমার সেরা একাদশে থাকবেন কারা?

World Cup Football 2022: এমনিতে তিনি যেকোনও পজিশনেই খেলতে পারেন, কিন্তু আমার দলে মারাদোনাকে রাখব অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে।

বিশ্বকাপ ফুটবল জ্বরে কাবু সকলে। চার বছর পর পর ফিরে আসে এই মহারণ। বিশ্বের সেরারা আবির্ভূত হন এক মঞ্চে। একইসঙ্গে ফুটবল প্রেমীদের মনে থেকে যায় অমলিন কিছু মুহূর্ত। বিশ্বকাপ নায়কের জন্ম দেয়, আবার প্রতিষ্ঠিত নায়করাই হয়ে ওঠেন খলনায়ক। কেমন হত যদি সময়কালের বিভেদ ভুলে, বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের একই দলে খেলানো যেত? দারুণ না! তাই আমিও চেষ্টা করলাম, আমার এক ‘ড্রিম ১১’ তৈরির। বিশ্বকাপের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের নিয়ে যদি আমি একটি দল বানাই, তাহলে সেটি হবে খানিকটা এরকম-

গোলরক্ষক

লেভ ইয়াসিন - ফুটবলে গোলরক্ষকদের কথা হবে আর লেভ ইয়াসিনের নাম নেওয়া হবে না, তা সম্ভব নয়। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত তিনটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৫০-র বেশি পেনাল্টি সেভ করেছেন বিশ্ব ফুটবলের ব্ল্যাক স্পাইডার। সুতরাং তেকাঠির নিচে তার চেয়ে ভালো আর কেই বা হতে পারে।

ডিফেন্ডার

পাওলো মালদিনি - বিশ্ব ফুটবলের সেরা লেফটব্যাক কে? এই প্রশ্নের উত্তরে সবার প্রথমে যার নামটি আসবে তিনি হলেন পাওলো মালদিনি। বিশ্ব ফুটবলে এরকম ঠান্ডা মাথার ‘রক সলিড’ ডিফেন্ডার কখনও এসেছে বলে তো মনে হয় না। তাই সুদীর্ঘ ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে তার কোনও ‘রিপ্লেসমেন্ট’ হয়নি।১৯৯০, ১৯৯৪, ১৯৯৮-এর বিশ্বকাপে খেলা মালদিনি বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন ১৯৯৪ সালে। ব্রাজিলের কাছে টাইব্রেকারে ইতালি সেবার হেরে না গেলে হয়তো ক্যারিয়ারকে পূর্ণতা দিতে পারতেন তিনি।

ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার - বেকেনবাওয়ার বিশ্বের প্রথম মানুষ যিনি খেলোয়াড় এবং কোচ দুই ভূমিকাতেই বিশ্বকাপ জিতেছেন। ১৯৭৪ সালে খেলোয়াড় এবং ১৯৯০ সালে কোচ হিসেবে জার্মানিকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন তিনি। এই জার্মান সেন্টার ব্যাক ডিফেন্সের কার্যত রাজার মতো খেলতেন। ফুটবল মাঠে বলা হত যে দলের ডিফেন্সে ‘কাইজার’ খেলছে সেই দলের গোলকিপার চাইলে একটু ঘুমিয়েও নিতে পারেন।

ফাবিও ক্যানেভেরো - সাম্প্রতিক অতীতে, ডিফেন্ডার হিসেবে ব্যালন ডি'অর পেয়েছেন এমন নিদর্শন খুব একটা নেই। এই অসাধ্যই সাধন করেছিলেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেন্টার ব্যাক ফাবিও ক্যানেভেরো। ১৯৯৮-২০১০ পর্যন্ত টানা চারটি বিশ্বকাপে ইতালির প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। ২০০৬ সালে ক্যানেভেরোর নেতৃত্বেই কারণেই বিশ্বকাপ পকেটস্থ করেছিল ইতালি। ফলস্বরূপ সে বছর ব্যালন ডি'অর জেতেন ইতালির এই ডিফেন্ডার।

কাফু - ২০০২ সালে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কাফু। অংশ ছিলেন ’৯৪-এর বিশ্বকাপ বিজয়ী দলেরও। ’৯৮-এর বিশ্বকাপেও খেলেছেন। টানা তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনালে দেশের হয়ে মাঠে নামার অনন্য কৃতিত্ব এই ব্রাজিলিয়ান রাইট ব্যাকের। ডিফেন্ডার হয়েও যেভাবে উইং বরাবর দৌড় লাগাতেন কাফু, তা ভয় ধরাত বিপক্ষ দলের রক্ষণের মনে। কাফু এমন একজন খেলোয়াড় যিনি বিপক্ষের গোলের সুযোগ নষ্ট করতে পারেন, আবার দলের জন্যে গোলের সুযোগও তৈরি করতে পারেন। সুতরাং এমন একজন খেলোয়াড়কে ছাড়া বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একাদশ ভাবাই যায় না।

মিডফিল্ডার

জিনেদিন জিদান - বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় জিনেদিন জিদান। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বজয়ের নেপথ্য কারিগর ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই নায়কই খলনায়কে পরিণত হন ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে মাতেও মাতেরাজ্জিকে গুঁতো মেরে। তবে জিদানের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই। বলাই বাহুল্য যে কোনও দলের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে এখনও খেলোয়াড় এক সম্পদ। মাঠে তিনি যেমন দাপিয়ে খেলেছেন, মাঠের বাইরেও কোচ হিসেবে ততটাই সফল তিনি।

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা - স্প্যানিশ ফুটবলের জাদুকর বলা হয় ইনিয়েস্তাকে। ওরকম ড্রিবলিং, ওরকম নিখুঁত পাস, ওরকম কাউন্টার অ্যাটাক ইনিয়েস্তার পর বার্সেলোনা বা স্পেনের জাতীয় দলে কেউ করেছে বলে তো মনে হয় না। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে ৯৪তম মিনিটে ইনিয়েস্তার সেই পায়ের জাদু আজও চোখে লেগে রয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের। এরকম একজন খেলোয়াড়কে মাঝমাঠে না নিয়ে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ একাদশ বানানো মুশকিল।

দিয়েগো মারাদোনা - মারাদোনার নামটাই যথেষ্ট। মারাদোনাকে ছাড়া বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ একাদশ বাছবে, এমন সাহস কার আছে ? মারাদোনাকে কেন ফুটবলের ভগবান বলা হয় তা আর নতুন করে বলার দরকার নেই। নিজের খেলোয়াড় জীবনে মারাদোনা যে খেলাটা দেখিয়েছেন, তা ফুটবলপ্রেমীদের ভোলা সম্ভব নয়। ১৯৮৬ সালে মারাদোনার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞই রসিকতা করে বলেন, মারাদোনা বিশ্বকাপ জেতেননি বরং বিশ্বকাপ মারাদোনাকে জিতেছে। এমনিতে তিনি যেকোনও পজিশনেই খেলতে পারেন, কিন্তু আমার দলে মারাদোনাকে রাখব অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে।

ফরওয়ার্ড

ইয়োহান ক্রুইফ - বিশ্বে টোটাল ফুটবলের জনক ইয়োহান ক্রুইফ। তাঁকে ছাড়া বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ একাদশ বাছা অসম্ভব। অসামান্য স্কিল এবং ডাইরেক্ট পাসে খেলে ফুটবলকে আরও দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছিলেন ইয়োহান ক্রুইফ। দুর্ভাগ্যবশত, পরপর দু'বার হল্যান্ডকে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে গেলেও বিশ্বকাপ ট্রফিটি হাতে ওঠেনি তাঁর। সত্তরের দশকে বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিল, জার্মানি, আর্জেন্টিনাকে বারংবার বলে বলে হারিয়েছে হল্যান্ড। তার নেপথ্যে সেই ক্রুইফ। অসামান্য পারফরমেন্সের জন্য ১৯৭৪ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল জেতেন তিনি।


পেলে - ব্রাজিল আজকে ফুটবলে যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, তার অনেকাংশ কৃতিত্ব পেলের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁর খেলা দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছে। পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীদের এক বড় অংশের মতে বিশ্ব ফুটবলের ভগবান মারাদোনা নয়, পেলে। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল স্টাইল অর্থাৎ ‘জিঙ্গা’ বিশ্বের সম্মুখে মর্যাদাই পেত না, যদি না পেলে থাকতেন। দেশের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা পেলে, আমার দলের আক্রমণ ভাগের ব্রহ্মাস্ত্র।

রোনাল্ডো নাজারিও - বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের নিয়ে কথা হবে, আর সেখানে ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফরওয়ার্ড রোনাল্ডোর কথা উঠবে না তা হয় না। ৯০-এর দশকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে পরিগণিত হতেন তিনি। পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানোর উত্থানের আগে রোনাল্ডো বলতে তাঁকেই চিনত বিশ্ব৷ ২০০২ বিশ্বকাপে তাঁর করা দু'টি গোল ব্রাজিলকে পঞ্চম বার বিশ্বসেরা করে। রোনাল্ডোকে অনেকেই মনে করেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ‘নাম্বার নাইন’। শুধু দেশের হয়েই তো নয়, ক্লাবের জার্সিতেও অসংখ্য মুকুট তাঁর মাথায়। ইন্টার মিলান, বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ- যেখানেই খেলেছেন, মুগ্ধ হয়েছে গোটা বিশ্ব।


কোনও ফুটবল দলের প্রথম একাদশের মতোই গুরুত্বপূর্ণ সেই দলের রিজার্ভ বেঞ্চ। যথারীতি আমার ড্রিম ইলেভেনের রিজার্ভ বেঞ্চেও থাকছে চমক। এই রিজার্ভ বেঞ্চে আমি চারজন খেলোয়াড় রাখছি। প্রথমত, রেখেছি অলিভার কানকে। বিশ্বে তাঁর মতো মানের গোলরক্ষক খুব একটা আসেনি। ২০০২ বিশ্বকাপে ওই ভাঙাচোরা দল নিয়ে, যে পারফরম্যান্স তিনি দিয়েছিলেন তা অনবদ্য। দ্বিতীয়ত, আমার দলের ডিফেন্সে থাকবেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার ববি মুর। ১৯৬৬ সালে ইংরেজদের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন তাঁদের অধিনায়ক ববি মুর। তৃতীয়ত, আমার দলে থাকবেন কিংবদন্তি জার্মান মিডফিল্ডার লোথার ম্যাথিয়াস। ১৯৯০ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন ম্যাথিয়াস। চতুর্থত, আমার দলে আমি রেখেছি ব্রাজিলের অন্যতম জনপ্রিয় খেলোয়াড় রোনাল্ডিনহোকে। ফুটবলকে কার্যত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি ব্রাজিলীয় ফরওয়ার্ড। দেশের পাশাপাশি বার্সেলোনা, এসি মিলান প্রভৃতি ক্লাবের জার্সিতেও স্বপ্রতিভ ফুটবল খেলেছেন তিনি।

More Articles