২৫ বছর পর মুক্ত গ্রাহাম স্টেইনের হত্যাকারী! মুক্তি আসন্ন মূল আসামি দারা সিংয়ের?

Graham Staines Murder: ১৯৯৯ সালের ২২ জানুয়ারি গ্রাহাম স্টেইনস এবং তাঁর দুই নাবালক ছেলে টিমোথি (৬) আর ফিলিপ (১০) যে ভ্যানে ঘুমোচ্ছিলেন তাতে আগুন ধরিয়ে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়।

২৫ বছর কেটে গেছে। মানুষের মন থেকে ক্রমেই ফিকে হয়ে গেছে গ্রাহাম স্টেইনের কথা। খুন হয়েছিলেন গ্রাহাম। পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে। ২৫ বছর আগের সেই ঘটনায়, সাজা কাটিয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গেলেন মহেন্দ্র হেমব্রম। জেলে 'ভালো আচরণ' করার জন্য, ২৫ বছরের সাজা শেষে মুক্তি পেলেন মহেন্দ্র। অস্ট্রেলিয়ান ধর্মপ্রচারক গ্রাহাম স্টেইনস এবং তাঁর দুই নাবালক পুত্রকে খুনে অন্যতম আসামি ছিলেন মহেন্দ্র। ওড়িশার কেওনঝাড় জেল থেকে অবশেষে মুক্তি পেলেন তিনি।

গ্রাহাম স্টেইনস এই দেশে কাজ করতেন কুষ্ঠরোগীদের নিয়ে। গ্রাহাম স্টেইনস এবং তাঁর স্ত্রী গ্ল্যাডিস ময়ূরভঞ্জ ইভানজেলিকাল মিশনারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করতেন। ১৯৯৯ সালের ২২ জানুয়ারি গ্রাহাম স্টেইনস এবং তাঁর দুই নাবালক ছেলে টিমোথি (৬) আর ফিলিপ (১০) যে ভ্যানে ঘুমোচ্ছিলেন তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গ্রাহাম ও তাঁর সন্তানরা পালানোর চেষ্টা করলে, লাঠি হাতে ওই ক্ষিপ্র জনতা তাদের বের হতে বাধা দেয়, আগুনের মধ্যে বন্ধ করে দেয়। জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয় তিনজনকে। পরে তাঁদের কঙ্কালের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন- ২৪ বছর জেলের অন্ধকারে! বিজেপি ক্ষমতায় আসতেই মুক্তির আবেদন! কে এই দারা সিং?

বজরং দলের সদস্য দারা সিংয়ের নেতৃত্বে উন্মত্ত জনতা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়। হামলাকারী বজরং দলের সদস্যদের অভিযোগ ছিল, সেবার নামে ধর্মপ্রচারক স্টেইন সাধারণ মানুষকে ধর্মান্তরিত করছেন। মহেন্দ্র হেমব্রমও এই আগুন লাগানোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওড়িশা রাজ্য শাস্তি পর্যালোচনা বোর্ড মহেন্দ্রর মুক্তির সুপারিশ করে। ঘটনার সময় ২৫ বছর বয়স ছিল মহেন্দ্র হেমব্রমের। এখন বয়স ৫০। মুক্তির সময় মালা পরিয়ে বরণ করা হয়েছে মহেন্দ্রকে। তাঁকে ঘিরে থাকা সমর্থকরা 'জয় শ্রী রাম' বলে স্লোগান তুলেছেন। আর মুক্তি পেয়ে মহেন্দ্র বলছেন, "ধর্মান্তর সংক্রান্ত একটি ঘটনায় মিথ্যাভাবে জড়িত থাকার পরে আমি ২৫ বছর জেলে কাটিয়েছি। আজ আমি মুক্তি পেয়েছি।"

 

তবে এই মামলার প্রধান আসামি দারা সিং এখনও জেলেই বন্দি। দারা সিংকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিলেন কেওনঝাড়ের তৎকালীন বিধায়ক মোহন মাঝি। এই মুহূর্তে তিনিই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। শোনা যাচ্ছে, রাজ্য বিজেপি সরকার আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দারা সিংয়ের মুক্তির বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ১৯৯৯ সালের ৯ ডিসেম্বর মহেন্দ্র হেমব্রমকে আর দারা সিংকে ২০০০ সালের ৩১ জানুয়ারি একটি জঙ্গলের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে গ্রাহাম স্টেইনস হত্যা মামলায় মোট ৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ৩৭ জনকে প্রাথমিক বিচারেই মুক্তি দেওয়া হয়। দারা সিং এবং মহেন্দ্র হেমব্রম সহ ১৪ জনকে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) আদালত দোষী সাব্যস্ত করে। পরে ওড়িশা হাইকোর্ট আরও ১১ জনকে মুক্তি দেয়।

আরও পড়ুন- ২২ জানুয়ারিই বজরং দলের হাতে হত্যা হয় পাদ্রীর! প্রাণ প্রতিষ্ঠার আড়ালে হারাচ্ছে যে ঘটনার স্মৃতি

আসামিদের ১৪ বছরের কারাদণ্ড থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত সাজা হয়। দারা সিংয়ের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি হলেও অবশেষে তা বদলে করা হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ওই ঘটনার সময় নাবালক চেঞ্চু হাঁসদা ২০০৮ সালে আপিলের পর মুক্তি পায়। নবীন পট্টনায়কের সরকারকে হারিয়ে বিজেপি এখন ক্ষমতায় এসেছে ওড়িশার। বিজেপির শাসনে গ্রাহামদের হত্যাকারী বজরং দলের নেতাদের মুক্তি পাওয়া নিঃসন্দেহে এক বড় ঘটনা। মূল আসামি দারা সিংয়ের মুক্তিও কি তবে আসন্ন?

More Articles